
উন্নত জাতের গাভীর খামার করতে হলে প্রয়োজন উন্নত জাতের গাভীর সম্বন্ধে বাস্তব সম্মত জ্ঞান। থাকতে হবে গাভীর খাবার এবং খাদ্য পুষ্টি সম্বন্ধে জ্ঞান।আর তাই বাস্তব জ্ঞানের সাথে একডেমিক জ্ঞানের সংমিশ্রনে একটি বিজ্ঞান সম্মত লাভজনক দুধ উৎপাদন গাভীর খামার ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনার প্রয়াস।
উন্নত গাভীর খামার ব্যবস্থাপনা
একটি উন্নত জাতের গাভীর খামার ব্যবস্থাপনা বা উন্নত জাতের গাভী পালন করতে গেলে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অনুসরন করে এগুতে হয়। আমরা গাভী পালন এর এই পর্বে ধাপে ধাপে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ে আলোচনা করবো যা আপনার গাভীর খামার প্রকল্প কে আরো গতিশিল ও সফল করতে সহায়তা করবে । চলুন একে একে জেনে নেয়া যাক বিষয় গুলো ।
উৎপাদনশীল গাভীর বৈশিষ্ট্যঃ
বাংলাদেশের কিছু কিছু অঞ্চলে উৎপাদনশীল গাভী পরিলক্ষিত হয়। যেমনঃ চট্টগ্রামের লাল গরু,,পাবনা জেলার গরু ও ফরিদপুর জেলার গরু। আর অনেকেই এখন উন্নত জাতের গাভীর খামার ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করছেন এবং লাভবান হচ্ছেন । উন্নত জাতের গাভী চেনার উপায় এবং উৎপাদনশীল উন্নত জাতের গাভীর বৈশিষ্ট্য গুলো হলোঃ
- মাথাঃ মাথা হালকা ও ছোট আকারের হবে। কপাল প্রশস্ত,চোখ উজ্জ্বল হবে। অধিক খাদ্য গ্রহণে আগ্রহী হবে।
- দৈহিক আকারঃ দেহের সামনের দিক হালকা, পিছনের দিক ভারী ও সুগঠিত হবে, অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সামঞ্জস্যপূর্ণ ও সুসংগঠিত হবে। দৈহিক আকার আকর্ষণীয় হবে। শরীরের গঠন ঢিলা হবে।
- পাঁজরঃ পাঁজরের হাড় সুস্পষ্ট অনুভব করা যাবে। হাড়ের গঠন সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।
- চামড়াঃ চামড়া পাতলা হবে। চামড়ার নীচে চর্বির বাহুল্য থাকবে না। লোম মসৃণ ও চকচকে হবে।
- ওলানঃ গাভীর ক্ষেত্রে ওলান বড় ও সুগঠিত হবে ও দেহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। পিছনের দুই পায়ের মধ্যবর্তী স্থান প্রশস্ত হবে। বাটগুলি একই আকারের হবে।৪টি বাট সমান দূরত্বে ও সমান্তরাল হবে।
- দুগ্ধশিরাঃ দুগ্ধ শিরা মোটা ও স্পষ্ট হবে। তলপেটে নাভীর পাশ দিয়ে দুগ্ধশিরা আঁকাবাকাভাবে বিস্তৃত থাকবে।
উন্নত গাভীর জাত নির্বাচন
আপনার খামার এ কোন জাতের গাভি রাখবেন সেটাও বেশ জরুরী । গাভীর খামার ব্যবস্থাপনা তে গাভীর জাত নির্বাচন একটি বড় ভুমিকা পালন করে । চলুন কয়েক প্রকারের গাভীর জাত সম্পর্কে দেখে নেয়া যাক ।
হলষ্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের গাভী
এ জাতের গরুর উৎপত্তিস্থান হল্যান্ডের ফ্রিজল্যান্ড প্রদেশে। হল্যান্ডের ভাষায় এদেরকে ফ্রিজিয়ান বলা হয়। এ জাত সাধারণত শীত প্রধান অঞ্চলের জাত। দুধাল গাভীর সকল জাতের মধ্যে এটা বড় আকৃতির জাত।

- ফ্রিজিয়ান গাভীর বর্ণ সাধারণত ছোট বড় কালো ছাপযুক্ত এবং কখনো পুরোপুরি সাদা ও কালো হয়।
- হলিস্টিন- ফ্রিজিয়ান গাভী আকারে সাধারণত বড় ও মাথা লম্বাটে সোজা হয়,কুজ অনুন্নত।
- গাভীর গড় ওজন ৫৫০-৬৫০কেজি এবং ষাড়ের গড় ওজন ৮০০-৯০০কেজি হয়ে থাকে।
- প্রথম গর্ভধারণের বয়স ১৮-২৪ মাস।
- পেছনের পা সোজা।
- সদ্যজাত বাছুরের গড় ওজন ৩০-৩৬ কেজি।
- গাভীর ওলান বড় এবং দৈনিক হলিস্টিন -ফ্রিজিয়ান ২৫-৪০ লিটার দুধ দিয়ে থাকে
জার্সি জাতের গরু
সাধারণ বৈশিষ্ট্যঃ

১) জার্সি জাতের উৎপত্তি ইংলিশ চ্যানেলের জার্সি নামক ব্রিটিশ দ্বীপ থেক। এই জাতটি এখন বিশ্বের প্রায় সব দেশেই পাওয়া যায়। সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায় ইংল্যান্ড ও আমেরিকায়।
২) বিদেশি দুধেল গাভীর মধ্যে জার্সির আকার সবচেয়ে ক্ষুদ্রাকার।
৩) লম্বা দেহ,ভারী নিতম্ব ও খাটো পা। চূড়া হতে কোমড় পর্যন্ত পিঠ একদম সোজা থাকে। মুখবন্ধনী কালো ও চকচকে হয়। মাথা ও ঘাড় বেশ মানানসই, শরীর মেদহীন।
৪) গায়ের রং লাল বা মেহগনি রং বিশিষ্ট। বিশেষ করে মুখের উপর একটি ঢালাও রং এর উপর সাদা সাদা দাগ যুক্ত থাকে। সাদা দাগগুলো খুব কমও হতে আবার বেশিও হতে পারে। খুব বেশি হলে আবার পুরো শরীর সাদা রং ধারণ করে।
৫) জিহবা ও লেজ কালো।
৬) শিং পাতলা ও সামনের দিকে বাঁকানো থাকে।
৭) একটি প্রাপ্তবয়স্ক জার্সি জাতের গাভীর ওজন ৪০০ কেজি থেকে ৫০০ কেজি হয়। প্রাপ্তবয়স্ক ষাঁড় ৫৪০ থেকে ৮২০ কেজি হয়ে থাকে।
৮) জন্মের পর বাছুরের ওজন প্রায় ২৫ থেকে ২৭ কেজি পর্যন্ত হয়।গাভী ও ষাঁড় উভয়েই অন্যান্য জাতের গরু থেকে ছোট আকারের হয়ে থাকে।
সিন্ধি জাতের গাভি
লাল সিন্ধি জাতের গরুর উৎপত্তি পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের করাচী,লাসবেলা ও হায়দারাবাদ।উৎপত্তি পাকিস্তানে হলেও বাংলাদেশ, ভারতসহ অনেক দেশে এ জাতটির বিস্তার রয়েছে।

সাধারণ বৈশিষ্ট্যঃ
১।গায়ের রং লাল বলে নাম লাল সিন্ধি।
২।গাভী অপেক্ষা ষাঁড়ের গায়ের রং বেশি গাঢ় হয়।
৩।মাথা ও মুখমণ্ডল ছোট,কপাল চওড়া, কপালের মাঝের অংশ কিছুটা উঁচু।
৪।ঘাড় খাটো ও মোটা।নাভী বড় ও ঝুলানো,বুক প্রশস্ত।
৫।ষাঁড়ের চূড়া বেশ উঁচু,গলকম্বল বৃহদাকার ও ভাঁজযুক্ত।
৬।ওলানের গঠন বেশ সুন্দর।
৭।গাভীর ওজন ৩৫০-৪০০ কেজি এবং ষাঁড়ের ওজন ৪২৫-৫০০ কেজি।
৮।এ জাতের গাভী ৩৫০ দিন দুধ দেয়।
৯।দৈনিক উৎপাদন প্রায় ৮-১০ লিটার।
১০।বাৎসারিক গড় দুগ্ধ উৎপাদন প্রায় ২০০০ লিটার।
১১।দুধে চর্বির পরিমাণ ৫% এর উপরে।
১২।জন্মকালে বাচ্চার ওজন ২১-৪০ কেজি।
১৩।এই জাত আমাদের দেশী আবহাওয়ায় মোটামুটি অভিযোজিত।
১৪।বলদ বা ষাঁড় দ্বারা গাড়িটানা ও হালচাষ ভালোভাবে করা যায়।
১৫।১৬-১৮ মাসে বয়প্রাপ্ত হয়ে থাকে।
শাহীওয়াল জাতের গাভী
শাহীওয়াল এই উপমহাদেশের দুধাল গাভী রূপে পরিচিত। শাহীওয়াল গাভী দুধ উৎপাদনের জন্য একটি উৎকৃষ্ট জাত।শাহীওয়াল গাভীর কিছু বৈশিষ্ট্য নিম্নে দেওয়া হলো।

১)শাহীওয়াল গরুর উৎপত্তি পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মন্টগোমারী জেলায়।
২)শাহীওয়াল জাতের গরু ধীর ও শান্ত প্রকৃতির।
৩)শাহীওয়াল জাতের গরু আকারে বেশ লম্বা এবং মোটাসোটা ভারী দেহ।
৪)সাধারণত এ জাতের গরুর দেহের রং ফ্যাকাসে লাল বা হালকা হলুদ।তবে কখনো গাঢ় লাল বা লালের মধ্যে সাদা ও কালো ছাপযুক্ত হয়।
৫)গাভীর ওজন ৪৫০-৫৫০ কেজি এবং ষাঁড়ের ওজন ৬০০-১০০০কেজি।
৬)জন্মকালে বাছুরের ওজন ২২-২৮ কেজি।
৭)মাথা প্রশস্ত,পা ছোট, শিং ছোট কিন্তু মোটা।
৮)গলকম্বল বৃহদাকার যা ঝুলে থাকে।
৯)শাহীওয়াল জাতের গরুর ত্বক পাতলা ও শিথিল।
১০)গাভীর ওলান বেশ বড়,চওড়া, নরম,মেদহীন এবং ঝুলন্ত।বাটগুলো লম্বা মোটা ও সমান আকৃতি বিশিষ্ট। দুগ্ধশিরা বেশ স্পষ্ট যা দূর থেকেও বোঝা যায়।
১১)ষাঁড়ের চূড়া অত্যাধিক বড়।
১২)লেজ বেশ লম্বা, প্রায় মাটি ছুয়ে যায়।লেজের আগায় দর্শনীয় এক গোছা কালো লোম থাকে।
১৩)বলদ ও ষাঁড় ধীর ও অলস।
১৪)বাৎসারিক দুধ উৎপাদন ২১৫০-৪০০০ লিটার।চর্বির পরিমাণ ৪.৫%।
ব্রাহমা জাতের গরু
উৎপত্তি:
ইংরেজী শব্দ (Brahman) এর বাংলা ভাষায় সংক্ষিপ্ত আকারে ব্রাহমা নামে পরিচিত। এ জাতের গরুর আদি আবাসস্থল আমাদের এই ভারতীয় উপমহাদেশ। মূলতঃ ভারতীয় ৩ ধরনের গরুর উপজাত থেকে ব্রাহমা জাত তৈরি হয়েছে। এ উপজাতগুলো হলো গুজরাট, নেলোর এবং পীর।
ব্রাহমা জাতের গরু ৪০.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায়ও স্বাভাবিক আচরণ ও খাদ্য গ্রহন করে থাকে, তেমন কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় না। উক্ত তাপমাত্রায়ও ব্রাহমা জাতের গরুর প্রজনন ক্ষমতা অক্ষুন্ন থাকে।
শীতপ্রধান আবহাওয়ায় ব্রাহমা জাতের গরুর গায়ের শক্ত ও লম্বা লোমযুক্ত কম্বলের মতো মোটা চামড়া অতিরিক্ত শীত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

দৈহিক আকারঃ-
১. মাংসল জাতের গবাদিপশুর মধ্যে ব্রাহমা জাতের গবাদিপশুর শরীরের আকার মাঝারী ধরনের হয়ে থাক।
২. পা তুলনামূলকভাবে লম্বাকৃতির হয়।
৩. জন্মকালীন বাচ্চার ওজন ২৮-৩৫ কেজি। এক বছর বাছুরের ওজন ৩৫০-৪০০ কেজি।
৪. পূর্ণ বয়স্ক গাভীর ওজন ৪৫০-৬৫০ কেজি।
৫. পূর্ণ বয়স্ক ব্রাহমা জাতের ষাড়ের ওজন ৮০০-১০০০ কেজি।
মাথার গঠন:-
মাথা সাধারণত ছোট ও লম্বা আকৃতির হয়।
শিং:-
নেই বললেই চলে অথবা খুবই ছোট আকৃতির হতে পারে।
কুজ:- ব্রাহমা জাতের ষাঁড়ের কুঁজ অনেক বড় আকৃতির হয় এবং গাভীর কুজ একটু ছোট হয়।
চামড়াঃ-
১. ব্রাহমা জাতের গরুর চামড়া সাধারণত নরম ও ঢিলা হয়।
২. গলার নিচে দীর্ঘ ও লম্বাকৃতির তুলতুলে গল কম্বল বিদ্যমান।
৩. এ জাতের গরুর গায়ে ছোট ও মোটা লোমযুক্ত চকচকে চামড়া থাকে।
৪. এ সকল বৈশিষ্ট্য মন্ডিত চামড়া ও লোমের জন্য ব্রাহমা বেশ গরম সহ্য করতে পারে।
গায়ের রং:-
১. ব্রাহমা জাতের বাছুর জন্মের সময় হালকা ধূসর থেকে লাল রংয়ের হয়।
২. অনেক সময় কালো রংয়ের হয়ে থাকে।
৩. পূর্ণ বয়স্ক ষাড় সাদা ও কালো রংয়ের হয় এবং এদের ঘাড়, কুঁজ ও পায়ের নিচের দিকের রং বেশ গাঢ় দেখা যায়।
ব্রাহমা জাতের মাংস উৎপাদন দক্ষতাঃ-
১) ব্রাহমা জাতের গরুর সেলাইভারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত অতিরিক্ত লালা পরিপাক ক্রিয়া তরান্বিত করে এবং খাদ্য উৎপাদনসমূহ শোষনের পর রক্ত স্রোতের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদনকে মাংসে রূপান্তর করতে পারে।
২) সাধারণ ব্রাহমা জাতের গরু কম পানি পান করে। ফলে মল মূত্রের মাধ্যমে এ জাতের গবাদিপশুর শরীর থেকে কম পরিমান নাইট্রোজেন নিঃসৃত হয়। ফলশ্রুতিতে রক্তের মধ্যে উচ্চমাত্রায় নাইট্রোজেন বিদ্যমান থাকে।
৩) ব্রাহমা জাতের গরুর পাকস্থলীর আকার ছোট এবং উচ্চ মাত্রায় রুমেন মাইক্রোফ্লোরা বিদ্যমান থাকে। ফলে নিম্নমানের খাদ্যকে পরিবর্তিত করে ভালো মানের আমিষে পরিনিত করে শারীরিক বৃদ্ধি অক্ষুণ্ন রাখতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাঃ-
১. ব্রাহমা জাতের গবাদিপশু অন্যান্য জাতের গবাদিপশু থেকে বেশী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন।
২. এ জাতের গবাদিপশুর চামড়া চকচকে ও মোটা বিধায় উকন, আটালী ও মাইটসহ বহিঃ পরজীবির বংশবৃদ্ধির জন্য অনুকুল নয়।
৩. সিবেসিয়াস নামক একপ্রকার গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রাসায়নিক পদার্থ পরজীবী বিতারন ও দূরীকরণেরর জন্য বিতারক (Repellent) হিসেবে কাজ করে।
মাংস উৎপাদন ক্ষমতাঃ-
১. ব্রাহমা জাতের গরুর রুমেন ছোট হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই তাদের শরীর অধিক মাংসল হয়।
২. বিক্রয়যোগ্য মাংসের পরিমান (নাড়ি-ভূড়ি ও অতিরিক্ত চর্বি ব্যতীত)
৩. এ জাতের গরুর শরীরের বিভিন্ন অংশে চর্বির সমতা বজায় থাকে।
মাছ চাষে বিনিয়োগ করতে আমাদের বাস্তব জ্ঞানের ভিত্তিতে লেখা মাছ চাষ বিষয়ক অনুচ্ছেদ গুলো পড়লে মাছ চাষে আপনার টেকনিক্যাল জ্ঞান বৃদ্ধি ও লাভবান হবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।
গাভীর খামার ব্যবস্থাপনা ও গাভির বাসস্থান:
পারিবারিক পর্যায়ে বা খামার পর্যায়ে গাভী পালন করতে হলে গাভীর জন্য ভাল বাসস্থান প্রয়োজন যা গাভীর খামার ব্যবস্থাপনা র একটা বড় অংশ। গাভীকে বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থা যেমন- ঝড়, বৃষ্টি, অতিরিক্ত ঠাণ্ডা ও গরম এবং পোকামাকড়, চোর, বন্য-জীবজন্তু হতে রক্ষা করার জন্য যথোপযুক্ত বাসস্থান বা গোয়ালঘর প্রয়োজন।
আমাদের আবহাওয়ার আলোকে ঘরে প্রচুর আলো বাতাস চলাচলের জন্য ঘরটি উত্তর-দক্ষিণমুখী হওয়া বাঞ্চনীয়। কোন অবস্থাতেই যেন ঘরে স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থা না থাকে। এতে ঘরের মেঝেটি ইট বিছানো থাকলে ভাল হয়। ঘরের দুর্গন্ধ ও মশামাছি দমনের জন্য মাঝে মাঝে জীবাণুনাশক দ্বারা ধোয়া প্রয়োজন।
একসারি বিশিষ্ট গাভীর ঘর:
অল্প সংখ্যক গবাদি পশুর জন্য একটি লম্বা সারিতে বেঁধে পালনের জন্য এই ঘর তৈরি করা হয়। প্রতিটি পশুকে পৃথক রাখার জন্য জিআই পাইপ দিয়ে পার্টিশন দেয়া হয়।
দুই সারি বিশিষ্ট গাভীর ঘর:
অল্প জায়গায় অধিক পশুপালনের জন্য এ ধরণের ঘর তৈরি করা হয়, এ ধরনের ঘরে পশুকে দুভাবে রাখা যায়, মুখোমুখি পদ্ধতি ও বাহির মুখ পদ্ধতি। বাহির মুখ পদ্ধতিতে দুই সারি পশু বাহির মুখি থাকে। দুইসারি খাবারের পাত্রের বাহিরের দিকে ৩ ফুট চওড়া রাস্তা থাকে- যা পাত্রে খাবার দেবার জন্য ব্যবহার করা হয়, একটি গরুর জন্য দাঁড়ানোর জায়গা ৮ ফুট, পাশের জায়গা ৩.৫ ফুট। একই সাথে দুইসারি পশুকে সহজে খাবার ও পানি সরবরাহ করা যায়, দুধ দোহনের জন্য অধিকতর আলো পাওয়া যায়, পশু নিজ জায়গায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে, পরিচর্যাকারী সহজে চলাফেরা করতে পারে।
Space for an animal – 8 ft * 3.5 ft
Manger and drinker – 3 ft * 2 ft
Height of MD- 2ft/ 1.5ft
Gutter – 1ft * 0.5ft
Floor (slope) – ).5ft
Height (shed) – minimum 10ft
Central path – minimum 4 ft
Middle path 30ft * 4ft
খাদ্য ও পুষ্টি
গাভীর খামার ব্যবস্থাপনা তে আর একটি গুরুত্বপুর্ন অংশ হচ্ছে গাভীর খাদ্য ও পুষ্টি । সঠিক পুষ্টি ও খাদ্য পেলেই আপনার খামের গরুর উৎপাদন ক্ষমতা বাড়বে ।
১. আঁশ জাতীয় খাদ্যঃ
শুষ্ক আঁশ জাতীয় খাদ্যে শতকরা ১০-১৫ ভাগ পানি বা জলীয় অংশ থাকে যেমনঃ বিভিন্ন প্রকার খড়। রসালো আঁশ জাতীয় খাদ্যে শতকরা 70-85 ভাগ পানি বা জলীয় অংশ থাকে যেমনঃ কাঁচা ঘাস, লতাগুল্ম, বিভিন্ন গাছের পাতা, মাসকলাই, খেসারী ইত্যাদি।
২. দানাদার জাতীয় খাদ্যঃ
বিভিন্ন প্রকার ডাল জাতীয় শস্যদানা ও শস্যদানার উপজাত। যেমনঃ ডালের ভুসি, গমের ভুসি, খৈল, চালের কুঁড়া ইত্যাদি।
৩. খনিজ উপাদানঃ
যেমনঃ- লবন, লাইমস্টোন, মনো-ক্যালসিয়াম ফসফেট, ডাই-ক্যালসিয়াম ফসফেট ইত্যাদি।
৪. ফিড সাপ্লিমেন্ট/প্রিমিক্সঃ
ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স, এমানো এসিড, অর্গানিক এসিড, এনজাইম ইত্যাদি।
গাভীর সুষম খাদ্যঃ
গাভীর খাদ্য ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভর করে গাভীর উৎপাদন ক্ষমতা। উন্নতজাতের গাভীর জন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্য সম্মত সুষম খাদ্য ব্যবস্থাপনা। উন্নত জাতের গাভীর খাদ্য তালিকা নিচে আলোচনা করা হল। গাভিকে দৈনিক প্রয়োজনীয় অনুপাতে খড়, কাঁচা ঘাস ও দানাদার খাদ্যের মিশ্রন সরবরাহ করতে হবে।
300 কেজি ওজনের একটি গাভীকে দৈনিক-
- উচ্চমান সম্পন্ন কাঁচা (সবুজ) ঘাসঃ ১০-১৫ কেজি।
- খড়ঃ ৩-৪ কেজি
- ১৮%-২০% প্রোটিন সমৃদ্ধ দানাদার খাদ্যের মিশ্রন ২-৩ কেজি সরবরাহ করতে হবে।
দানাদার খাদ্যের আদর্শ নমূনা নিম্নরুপঃ
উপাদান | ১ নং নমুনা | ২নং নমুনা | ৩নং নমুনা |
গমের ভূষি | ৩০ কেজি | ৪০ কেজি | ২০ কেজি |
চালের কুঁড়া | ১০ কেজি | ১৫ কেজি | ২০ কেজি |
খেসারী ভূষি | ২৬ কেজি | ২০ কেজি | ২০ কেজি |
ভাঙ্গা ছোলা | ১০ কেজি | ১০ কেজি | ১৬ কেজি |
খৈল | ২০ কেজি | ১৬ কেজি | ২০ কেজি |
ঝিনুকের পাউডার/হড়ের গুড়া | ০৩ কেজি | ০৩ কেজি | ০৩ কেজি |
লবণ (অতিরিক্ত) | ০১ কেজি | ০১ কেজি | ০১ কেজি |
DB ভিটামিন | ১০০ গ্রাম | ১০০ গ্রাম | ১০০ গ্রাম |
গাভীর খাদ্য দেবার নিয়মঃ
- ১০০ কেজি ওজনের গাভীকে প্রতিদিন মিশ্রণের ৩ কেজি দানাদার খাদ্য দিতে হবে।
- গাভী গর্ভবতী হলে ৫ম মাস থেকে বাচ্চা প্রসব পর্যন্ত ১.৫ কেজি অতিরিক্ত দানাদার খাদ্য দিতে হবে।
- দুধালো হলে প্রতি ২.৫ লিটার দুধের জন্য ১ কেজি দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
সাধারণতঃ গরুর সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য ওজনের শতকরা ২ ভাগ আঁশ জাতীয় খাদ্য, শতকরা ১ ভাগ দানাদার জাতীয় খাদ্য ও ৪ ভাগ রসালো আঁশ জাতীয় খাদ্য সরবরাহ করতে হয়। অর্থাৎ গাভীর প্রাথমিক ওজন ২০০ কেজি হলে উক্ত গাভীর দৈনন্দিন ব্যবস্থাপনার জন্য ৪ কেজি শুষ্ক আঁশ জাতীয়, ২ কেজি দানাদার জাতীয় এবং ৮ কেজি রসালো আঁশ জাতীয় খাদ্য সরবরাহ করতে হয়।
গাভীর দৈনন্দিন পরিচর্যাঃ
- প্রতিদিন সঠিক সময়ে খাদ্য প্রদান করতে হবে।
- পরিমিত পরিমাণ খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
- নিয়মিত গাভীকে গোসল করাতে হবে।
- গাভীর থাকার স্থান পরিস্কার ও শুস্ক রাখতে হবে।
- গোবর ও মূত্র নিয়মিত পরিস্কার করতে হবে।
- গাভীর ঘর সংলগ্ন ড্রেন নিয়মিত পরিস্কার করতে হবে।
- খাদ্য সরবরাহের পূর্বে খাদ্যের পাত্র পরিস্কার করতে হবে।
- খাদ্য সংরক্ষন ঘর পরিস্কার করতে হবে।
- শুস্ক আঁশ জাতীয় খাদ্য সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত অবস্থায় পরিবেশন করতে হবে অর্থাৎ ছোট আকারে কেটে দিলে ভালো হয়।
- দানাদার খাদ্য সঠিকভাবে ভেঙে দিতে হবে।
- ভেজালমুক্ত খাবার পরিবেশন করতে হবে।
- ২-৪ মাস পর পর পশু চিকিৎসকের সহায়তায় গোবর পরীক্ষা করে দেখতে হবে গাভী কৃমি আক্রান্ত কিনা। প্রয়োজনে খামারে কৃমিনাশক ব্যবহার করতে হবে।
- নিয়মিত রোগ প্রতিষেধক টিকা প্রয়োগ করতে হবে।
বাছুরের যত্ন ও পরিচর্যা
আশানুরূপ উৎপাদন পেতে হলে জন্মের পর হতেই একটি বাছুরের যত্ন, পরিচর্যা, খাদ্য ও প্রতিপালন ব্যবস্থা উন্নত হওয়া প্রয়োজন। খামার স্থাপন করে লাভবান হতে শংকর জাতের অথবা দেশী উন্নত জাতের ও অধিক উৎপাদনশীল গাভী পালন করা উচিত। এ ধরনের গাভী হতে প্রাপ্ত বাছুরের অধিক যত্ন প্রয়োজন এবং এজন্য এদের পরিচালনা ব্যবস্থা সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।
জন্মের পর প্রথমেই বাসস্থানের পাশেই শুকনা জায়গায় বাঁশ দিয়ে ঘেরাও করে শুকনা খড় বিছিয়ে বাছুরের থাকার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। কয়েকদিন পর পর ঘর পরিষ্কার করে পুরনো খড় ফেলে দিয়ে অথবা রোদে শুকিয়ে নতুন করে দিতে হবে।
বাছুরের খাদ্য ও পুষ্টিঃ
জন্মের পর প্রথম কয়েক মাস পর্যন্ত বাছুরের দৈহিক বৃদ্ধি অতি দ্রুত হয়। তাই জন্মের পর প্রথম তিন মাস বাছুরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি অতি গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় পুষ্টির অভাব হলে বাছুরের দৈহিক বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্থ হয়, যৌবন প্রাপ্তি দীর্ঘায়িত হয় অর্থাৎ গর্ভধারণ ক্ষমতা বিলম্বিত হয় বলে খামারীর ক্ষতির কারণ হয়।
দুধঃ
সাধারণত একটি বাছুরকে তার শরীরের ওজনের ১০% ভাগ দুধ খাওয়াতে হয়। খেয়াল রাখতে হবে জন্মের পর প্রথম ৫-৭ দিন বাছুরকে যেন অবশ্যই শালদুধ খাওয়ানো হয়। ৬-৮ সপ্তাহ পর্যন্ত দৈনিক নির্দিষ্ট সময়ে দুধ খাওয়াতে হয়। পরবর্তী সময়ে দৈনিক ২ বেলা নির্দিষ্ট পরিমাণ দুধ খাওয়ানোই যথেষ্ট কেননা এ সময়ে বাছুর আঁশ ও দানাদার খাদ্য গ্রহণে অভ্যস্ত হয়ে উঠে।
বয়স অনুযায়ী দুধের পরিমাণ
১ম সপ্তাহ ২ লিটার
২য় সপ্তাহ ৩ লিটার
৩য়-১২ সপ্তাহ ৪ লিটার
১৩-১৬ সপ্তাহ ৩ লিটার
১৭-২০ সপ্তাহ ২ লিটার
দুধ ছাড়া পর্যন্ত ১ লিটার
বাছুরের জন্য আঁশ ও দানাদার খাদ্যঃ
বাছুরকে জন্মের ১ মাস পরেই কিছু কিছু কাঁচা ঘাস ও দানাদার খাদ্যে অভ্যস্ত করে তুলতে হয়। ২ মাস বয়স হতে পরিমিত সহজপাচ্য আঁশ জাতীয় খাদ্য এবং দৈনিক ২৫০ গ্রাম-৫০০ গ্রাম দানাদার খাদ্য দিতে হবে।
বয়স অনুসারে ক্রমান্বয়ে দানাদার খাদ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে ৪ মাস বয়সে দৈনিক প্রায় ৭৫০ গ্রাম, ৬-৯ মাস বয়স পর্যন্ত ১ কেজি এবং এক বৎসর বয়সে দৈনিক ১.৫ কেজি দানাদার খাদ্য দিতে হবে। অনুরূপ কাঁচা ঘাসের পরিমাণ বাড়িয়ে দৈনিক ৬-৮ কেজি পর্যন্ত দিতে হবে।
বাছুরের জন্য দানাদার খাদ্যঃ
খাদ্য উপাদান ও পরিমাণ
নমুনা-১
গমের ভূষি ৬.৫ কেজি
খেসারী ভাঙ্গা ২.৫ কেজি
তিলের খৈল ৫০০ গ্রাম
খনিজ মিশ্রণ ৪০০ গ্রাম
লবণ ১০০ গ্রাম
সর্বমোট = ১০ কেজি
নমুনা-২
গমের ভূষি ৩.৫ কেজি
খেসারী ভাঙ্গা ১.৫ কেজি
ছোলা ভাঙ্গা ১ কেজি
গম/ভূট্টা ভাঙ্গা ২.৫ কেজি
তিলের খৈল ১ কেজি
খনিজ মিশ্রণ ৪০০ গ্রাম
লবণ ১০০ গ্রাম
সর্বমোট = ১০ কেজি
বাছুরের জন্য আঁশ জাতীয় খাদ্যঃ
বয়স | কাঁচা ঘাস | খড় |
৬-৯ মাস | ৪-৫ কেজি | ১-২ কেজি |
৯-১২ মাস | ৫-৬ কেজি | ২-৩ কেজি |
১৩ মাস-গর্ভধারণ পর্যন্ত | ৬-৮ কেজি | ৩-৪ কেজি |
বাছুরের স্বাস্থ্য পরিচর্যাঃ
কতিপয় রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে হলে বাছুরের মালিককে কিছু রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্বন্ধে সচেতন হতে হবে। বাছুর ও গাভীর খামার ব্যবস্থাপনা র একটি পার্ট । বাছুরের সাধারণ রোগ হলো-
১. সাদা উদরাময় বা কাফ স্কাউর
২. নেভাল ইল বা নাভীর রোগ
৩. সর্দি বা ঠান্ডা লাগা
৪. উদরাময় বা ডায়রিয়া
৫. কৃমি
৬. গিরা রোগ
এসকল ক্ষেত্রে অবশ্যই ভেটেরিনারি চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করে পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রজনন
উন্নত জাতের গাভীর বীজের উপর নির্ভর করে উন্নত জাতের গাভী। বিভিন্ন কোম্পানি এর মাধ্যমে উন্নত জাতের গাভীর বীজ পাওয়া যায়। গাভী যখন গরম হয় তখন বিভিন্ন কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে বিভিন্ন জাতের বীজ পাওয়ার যায়। ব্র্যাক এবং এসিআই এর মাধ্যমে আপনি চাইলে কৃত্রিম প্রজনন করাতে পারেন। কৃত্রিম প্রজনন প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে একটি পূর্ণ বয়স্ক গাভী গর্ভধারণের জন্য গরম হয় বা ডাকে আসে।
গাভী বা বকনার ডাকে আসার বা গরম লক্ষণ:
- প্রতিটি গাভী স্বাভাবিক নিয়মে ১৮ থেকে ২৪ দিন বিরতিতে ঋতুচক্রে ফিরে আসে ৷
- সাধারণত বেশিরভাগ গাভী রাতে ডাকে আসতে দেখা যায়, ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ডাকে আসার লক্ষণ বোঝা বেশ দুরুহ হয়ে পড়ে।
- গাভীর ডাকে থাকা অবস্থা প্রায় ২ থেকে ১৮ ঘন্টা স্থায়ী হয়৷ এ সময়ে প্রথম ৮ থেকে ১০ ঘন্টা গাভী অস্থির থাকে, তার যৌনদ্বার দিয়ে স্বচ্ছ সুতোর ন্যায় আঠাযুক্ত বিজল পড়ে এবং অন্য গাভীর উপর লাফিয়ে উঠতে চেষ্টা করে।
- চূড়ান্ত ডাকে আসার গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হলো চূড়ান্ত ডাকে আসা গাভীর উপর খামারের অন্য গাভী লাফিয়ে উঠলে সে নীরব থাকে ৷ সাধারণত ডাকের লক্ষণ শুরু হওয়ার ১২ থেকে ১৮ ঘন্টা পর চূড়ান্ত ডাক আসে।
- অপুষ্টি, আবহাওয়া, জলবায়ু, জাতের প্রভাব এবং বিশেষ করে প্রসবের পর ২/৩ ঋতুচক্রের সময় অনেক গাভীর ডাকে আসার লক্ষণ খুবই মৃদুভাবে প্রকাশ পায়৷ এসব ক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে ডাকের লক্ষণগুলি কমপক্ষে ২ ঘন্টা পর পর কাছ থেকে নজর রাখতে হয়।
- লেজের গোড়া বা তার আশপাশের জায়গায় শুকনা আঁঠালো পদার্থ লেগে আছে কিনা তা দেখতে হবে।
- এছাড়া আগের মাসের ডাকে আসার সঠিক দিনক্ষণ মনে রেখে সে অনুযায়ী বর্তমান ১৮ দিন মিলিয়ে অথবা কোনো ষাঁড়ের সাথে রেখে এ ধরনের মৃদু ডাকে আসা গাভী সহজে সনাক্ত করা যায়।
গাভীর প্রজননের সঠিক সময়:
কোনো গাভী রাতে গরম হয়েছে বোঝা গেলে তাকে পরদিন সকালে একবার এবং আরও নিশ্চিত হবার জন্য ঐদিন বিকেলের মধ্যে আরেকবার প্রজনন করাতে হবে৷ একইভাবে যে গাভী সকালে ডাক এসেছে বোঝা যাবে তাকে ঐদিন বিকেলে ও পরদিন সকালে আরেকবার প্রজনন করাতে হবে ৷ এ নিয়ম মেনে চললে গাভীর গর্ভধারণের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
গাভী বা বকনার দেরীতে ডাকে আসার বা গরম হওয়ার কারণ:
অনেক খামারের বকনা অনেক দেরিতে বা কখনোই ডাকে আসে না এবং প্রসবের পর অনেক গাভীর ডাক দীর্ঘদিন বন্ধ থাকে৷ এ সমস্যার অন্যতম কারণগুলি হলো:
- পুষ্টি-হীনতা ও গাভীর ওলানের বাঁটে মুখ দিয়ে বাছুরের দীর্ঘক্ষণ ধরে চুষে ঘন ঘন দুধ খাওয়া।
- দুগ্ধবতী গাভীর প্রসব পরবর্তীতে জননাঙ্গের ব্যাধি, কৃমি, দৈনিক দুধ উৎপাদনের হার ইত্যাদি।
- বাছুরের দুধ ছাড়ানোর সময় দীর্ঘ হলেও গাভীর প্রসবের পর পুনর্বার বাচ্চা ধারণক্ষমতা ফিরে পেতে দেরি হয় (ঌ০ থেকে১২০ দিন বা এর চেয়ে বেশি দেরি হয়)।
গবাদিপশুর কৃত্রিম প্রজনন
সাধারণত ষাঁড়ের বীজ সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট কয়েকটি পদ্ধতির মাধ্যমে গাভীর প্রজনন অঙ্গে স্থাপন করাকে কৃত্রিম প্রজনন বলে।
কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি ব্যবহারের জন্য উন্নত ষাঁড়ের শুক্রাণু ব্যবহার ও সুস্থ গাভীর প্রজনন অঙ্গে স্থাপন করতে পারলে বছরে বাচ্চা উৎপাদন দু’লক্ষেরও বেশি পাওয়া সম্ভব।
- গাভী ডাকে আসার ১২ থেকে ১৮ ঘন্টার মধ্যে গাভীকে কৃত্রিম প্রজনন করাতে হবে।
- একটি ষাঁড়ের বীজ থেকে প্রতি বছর ৬০ থেকে ৮০টি গাভীর প্রজনন করানো সম্ভব।
- কিন্তু কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ গাভী প্রজনন করানো যায়।
- স্বাভাবিকভাবে একটি ষাঁড়ের সর্বমোট ৭০০ থেকে ৯০০টি বাছুর প্রসবে ভূমিকা রাখতে পারে।
- কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে অনেকাংশে সংক্রামক ব্যাধি রোধ করা যায় এবং গাভী ষাঁড়ের দ্বারা আঘাত প্রাপ্ত হয় না।
- আমাদের দেশে ষাঁড়ের বীজ সংগ্রহ, সংরক্ষণ, পরিবহন বা সংস্থাপনে অজ্ঞতার কারণে অনেক সময় গাভীর উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়।
- বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে ষাঁড়ের অভাব থাকায় কৃত্রিম প্রজনন জরুরি হয়ে পড়েছে।
- কিন্তু কৃত্রিম প্রজননে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পদ্ধতিগত ত্রুটি -বিচ্যুতি এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অসাবধানতা ও অনভিজ্ঞতার কারণে নানা সমস্যার সন্মুখিন হতে হয়।
- রোগাক্রান্ত ষাঁড়ের বীজ গাভীর প্রজনন অঙ্গে স্থাপন করা হলে পরবর্তীতে দেখা যায় নানাবিধ সমস্যা। যার প্রভাব পরবর্তী বংশবিস্তারের উপর বর্তায়। এ ছাড়া অনেক গাভী বার বার গরম হয়ে থাকে।
- রাসায়নিক দ্রব্য, ধূলিকণা, মাত্রারিক্ত তাপমাত্রার সংস্পর্শে খুব সহজেই ষাঁড়ের বীজ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আবার যে সমস্ত জিনিস পত্রের সংস্পর্শে বীজ আসে তাতে রাসায়নিক পদার্থ থাকলেও বীজ নষ্ট হতে পারে।
- অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বীজ তরল হলে কিংবা প্রজনন অঙ্গের বাইরে স্থাপন করা হলেও গাভী গর্ভধারণ করতে পারে না।
- ডিম্বাণু নির্গমনের আগে অথবা নির্গমনের পরে বীজ স্থাপন করলে গাভীর উর্বরতা হ্রাস পায়।
- তাই প্রথমবার বীজ স্থাপনের পর অন্তত ৬ ঘন্টা পর দ্বিতীয়বার বীজ স্থাপন করলে সুফল পাওয়া যায় বেশি।
- বীজ স্থাপনের সময় প্রজনন অঙ্গ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে গাভীর নানাবিধ সমস্যা হতে পারে। যেমন ব্রুসেলেসিস, ভিব্রিওসিস, ট্রাইকোমনোসিসসহ বিভিন্ন বংশগত রোগের সন্মুখিন হতে হয়। এ জন্য কোন সমস্যা দেখা দিলে প্রাণিচিকিৎকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
- গাভী গর্ভবতী কিনা, নিয়মিত গরম হয় কিনা তা নির্ণয় করা, উন্নত ও উর্বর ষাঁড় নির্বাচন করা, গাভীর গর্ভধারনের ক্ষমতা নির্ণয় করা, গর্ভধারনের হার বৃদ্ধি করা, গাভীর দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং ভেটেরিনারিয়ানের সাহায্যে গাভীর নিয়মিত পরিচর্যা ও চিকিৎসাসেবা দেওয়া অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ডাক্তার দিয়ে করতে হবে।
রক্ষণাবেক্ষণ, বাসস্থান, গাভীর দুধ উৎপাদনের পরিমাণ ও গুণগতমানের হ্রাস-বৃদ্ধির জন্য অনেকাংশে দায়ী। পারিপার্শ্বিক অবস্থা গাভীর জন্য আরামদায়ক হওয়া উচিত। দোহনের সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন না করলে অর্থাত দুধ দোহন ত্রুটিপূর্ণ হলে দুধ উৎপাদনের পরিমাণ ও গুণগতমান কমতে পারে।
প্রতিকূল আবহাওয়া দুধ উৎপাদনের জন্য ক্ষতিকর। শীত মৌসুম দুধাল গাভীর জন্য আরামদায়ক। এ মৌসুমে দুধ উৎপাদনের এবং দুধে মাখনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, গরমকাল, বর্ষাকাল, আর্দ্র আবহাওয়ায় গাভীর দুধের উত্পাদন ও গুণগত মান হ্রাস পায়। গরমের দিকে গাভীকে ঠাণ্ডা অবস্থায় রাখলে উৎপাদনের কোনো ক্ষতি হয় না। গাভীর প্রজননের সময় দুধ উৎপাদন কমে যায়।
দীর্ঘ বিরতিতে বাচ্চা প্রসব করলে গাভীর দুধ উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। স্বল্প বিরতিতে বাচ্চা প্রসবের কারণে দুধ উৎপাদন কিছুটা হ্রাস পেতে পারে। তাই গাভীকে বাচ্চা প্রসবের ৬০-৯০ দিনের মধ্যে পাল দিতে হবে। কোনোক্রমেই ৬০ দিনের আগে প্রজনন করানো উচিত নয়। গাভীর শরীরে ৫০% এবং দুধে প্রায় ৮৭% পানি থাকে। তাই গাভীকে ইচ্ছামত পানি পান করার ব্যবস্থা করলে দুধ উৎপাদন বেশি হয় এবং দুধে মাখনের পরিমাণ বেশি থাকে।
মোটকথা পরিকল্পিতভাবে গাভী পালন একটা লাভজনক কার্যক্রম অল্প মাঝারি বেশি সব ধরনের পুঁজি দিয়ে সুষ্ঠুভাবে গাভী পালন করলে অনেক লাভবান হওয়া যায়।গাভী পালনের জন্য ঘরটি মোটামুটি খোলামেলা জায়গায় হতে হবে; বাঁশ, ছন, খড়, পাটখড়ি দিয়ে ঘর নির্মাণ; ঘরের মেঝে ঢালু ও ড্রেনের ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে চোনা ও পানি গড়িয়ে বেরিয়ে যেতে পারে; খাদ্য ও পানির পাত্রগুলো প্রতিদিন নিয়মিত পরিষ্কার করা; খাওয়া শেষ হলে পাত্রগুলো ঢেকে রাখতে হবে। গরুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে; প্রতিদিন নিয়মিত গোয়াল ঘরের গোবর-চোনা পরিষ্কার করে নির্দিষ্ট স্থানে বা গর্তে জমা করতে হবে।
যা পরবর্তীতে মূল্যবান সারে পরিণত হয়; গরুর গায়ের আঠালি, ডাসা (মাছি), জোঁক অবাঞ্ছিত পোকামাকড় বেছে ফেলতে হবে; গরুর স্বাস্থ্য নিয়মিত পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে; উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে গবাদিপশুকে গোবসন্ত, তরকা, বাদলা, গলাফুলা, ক্ষুরা রোগের প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে; গবাদিপশুর রোগ দেখা দিলে প্রাণিচিকিৎসক বা নিকটস্থ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
নাম প্রকাশ এ অনিচ্ছুক :)
June 2, 2020 at 10:23 amপড়তে পড়তে পড়ে যাবার মতো অবস্থা 🙂 তবে ধন্যবাদ তথ্যবহূল একটি লেখার জন্য