দেশে ধান চাষের প্রয়োজনীয়তার কোন বিকল্প নেই। তবে ধানের চাষ দেশের চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট নয়। তবে দেশে উচ্চফলনশীল জাতের ধান চাষ সম্প্রসারণ করলে তা থেকে উদ্ধার হওয়া সম্ভব। পরিসংখ্যান বলছে এমনটা করা গেলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে হেক্টরপ্রতি উৎপাদন বেড়ে যাবে। এতে উৎপাদনশীলতা ৪ দশমিক ৬০ টনে উন্নীত করা সম্ভব হবে।
এর ফলে দেশে বোরোর মোট উৎপাদন ১৪.৩৮ লাখ টন বাড়ানো যাবে।
অন্যদিকে আমনের হেক্টরপ্রতি উৎপাদন বেড়ে দাঁড়াবে ৩.৪৪ টন।
এতে মোট উৎপাদন ১৪.৬৩ লাখ টন বাড়বে।
সেই সাথে আউশ মৌসুমে ৩.৬২ লাখ টন ধানের উৎপাদন বাড়ানো যাবে।
যার মোট হিসাব করলে তিন বছরে উৎপাদন বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় সাড়ে ৩৩ লাখ টন।
গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর খামারবাড়ির কেআইবি অডিটোরিয়ামে এক কর্মশালা আয়োজিত হয়।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) আয়োজিত এ কর্মশালায় এসব তথ্য জানানো হয়।
বিদ্যমান শস্য বিন্যাসে তৈল ফসলের অন্তর্ভুক্তি এবং ধান ফসলের অধিক ফলনশীল জাতসমূহের উৎপাদন বৃদ্ধি’ শীর্ষক কর্মশালার আয়োজন করে ব্রি এবং ডিএই।
এই কর্মশালায় বলা হয়, দুই যুগের বেশি সময় ধরে চাষ করা হচ্ছে ব্রি-২৮, ব্রি-২৯ জাতগুলো।
এগুলো রিপ্লেস করে ব্রি-৮৯, ব্রি-৯২, বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ সহ বিভিন্ন উচ্চফলনশীল জাতের চাষ সম্প্রসারণ করার কথা এতে বলা হয়।
এসকল ধান পরিকল্পনা অনুযায়ী করা গেলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে হেক্টরপ্রতি উৎপাদনশীলতা কয়েক গুন বেড়ে যাবে।
একইভাবে জাতের পরিবর্তন করে ধানের মোট উৎপাদন হবে প্রায় সাড়ে ৩৩ লাখ টন।
ব্রি’র উপস্থাপনায় ধানের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর প্রতি জোর দেয়া হয়।
এর জন্য প্রথমে ভ্যারাইটির মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর কথা বলা হয়।
সেই সাথে উৎপাদন ব্যবস্থার উন্নয়ন, অব্যবহৃত জমি চাষের আওতায় আনা, প্রচলিত শস্যবিন্যাসের পরিবর্তন করার কথাও বলা হয়।
ডিএইর প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, দেশে প্রচলিত শস্যবিন্যাস হলো আমন-পতিত-বোরো চাষ।
এই শস্যবিন্যাসের পরিবর্তন করে আমনে স্বল্পকালীন ধান চাষ করার কথা বলা হয়।
পরবর্তীতে সেই জমি পতিত না রেখে স্বল্পকালীন উন্নত জাতের তেল ফসলের চাষ এর সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করা হয়।
এরপরই একই জমিতে বোরো চাষ করা সম্ভব।
ভোজ্যতেলের বিষয়েও প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়।
বলা হয়, নতুন শস্যবিন্যাস আমন-সরিষা-বোরো প্রচলন কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে।
এতে ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে তেল ফসলের উৎপাদন ২৪ লাখ টন বাড়ানো সম্ভব।
এই উৎপাদন বর্তমান উৎপাদনের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি হবে।
এতে তিন বছরের মধ্যেই স্থানীয়ভাবে ভোজ্যতেলের চাহিদার শতকরা ৪০-৫০ ভাগ উৎপাদন করা সম্ভব।
এ কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক।
এছাড়াও এতে উপস্থিত ছিলেন কৃষিসচিব মো. সায়েদুল ইসলাম, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান।
ব্রি’র মহাপরিচালক শাহজাহান কবীর কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্রি’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও রাইস ফার্মিং সিস্টেমস ডিভিশনের প্রধান মো. ইব্রাহিম।
তাকে সহযোগিতা করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক হাবিবুর রহমান চৌধুরী।