আলু চাষে বেশ খ্যাত ঠাকুরগাঁও জেলা। এখন জাতভেদে আলুর দাম বেড়েছে ঠাকুরগাঁও জেলায়। প্রতি কেজিতে ৬–৭ টাকা পর্যন্ত। এতে স্বস্তি ফিরেছে লোকসানে মুখে পড়া কৃষক-ব্যবসায়ীদের মধ্যে। তবে আলুর এই দামের স্থায়ীত্ব নিয়ে তাঁদের মধ্যে আশঙ্কাও রয়েছে। যদিও আলুর দাম বেড়েছে ঠাকুরগাঁও জেলায়, তবুও স্বস্তির সাথে তাদের মধ্যে আছে আশংকাও।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা পাড়িয়া গ্রামের কৃষক নারায়ণ রায়। তিনি জানান, প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ৯০ হাজার টাকা খরচ হয় আলু আবাদ করতে।
আর গড়ে ১৬০ বস্তা উৎপাদন হয়।
প্রতি বস্তায় আলু থাকে ৬০ কেজি।
প্রতি কেজি আলু উৎপাদনের ন্যূনতম খরচ দাঁড়ায় ১৬ টাকার ওপরে থাকলেও বাজারে সেই আলু ১০ থেকে ১১ টাকা দর ছিল।
এতে কৃষকের মরণদশা হয়েছিল।
তবে আলুর দাম বাড়ায় তাঁদের মনে স্বস্তি এসেছে।
বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন ঠাকুরগাঁও জেলা সূত্রে জানায়, সাধারণত ৮০ ভাগ আলু হিমাগার থেকে বের হয়ে যাবার কথা।
কিন্তু এখন পর্যন্ত হিমাগার থেকে ৫০ ভাগ আলুও হিমাগার থেকে বের হয়নি।
হিমাগারে থাকা আলুর মধ্যে ১০ শতাংশই আবার বীজ আলু।
গত ১৮ অক্টোবর থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত ঠাকুরগাঁওয়ে বৃষ্টি হয় বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপের কারণে।
এতে খেতে ব্যাপক ক্ষতি হয় রোপণ করা আগাম বীজ আলু ও রবি ফসলের।
ভোক্তারা সবজির বিকল্প হিসেবে আলুতে ঝুঁকে পড়েন।
যার ফলে বাড়তে শুরু করে আলুর দাম।
ঠাকুরগাঁও থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা খুচরা বাজারে বিক্রির জন্য আলু কিনে নিয়ে যান। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের সূত্রমতে, ২০২০ সালের আলু মৌসুমে জেলায় ২৫ হাজার ৩৫ হেক্টর (৬১ হাজার ৮৩৬ একর) জমিতে আলু আবাদ হয়েছিল। আলু উৎপাদন হয়েছিল ৬ লাখ ৭২০ মেট্রিক টন। সে বছর বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষক-ব্যবসায়ীরা আলুতে ব্যাপক লাভ করেন। আর এতেই কৃষকেরা আলু চাষে ঝুঁকে পড়েন। চলতি বছরে কৃষকেরা ২৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ করেছেন। ফলন হয়েছে ৬ লাখ ৯৮ হাজার ৬১৭ মেট্রিক টন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের উপপরিচালক (ডিডি) আবু হোসেন।
তিনি বলেন, এলাকার একজন কৃষক একটি ফসলে লাভ পেলে অন্যরাও সেটাতেই ঝুঁকে পড়েন।
আলুর ক্ষেত্রেও গত মৌসুমে এমনটি হয়েছে।
সবজিও আলুর পাশাপাশি রেকর্ড উৎপাদন হয়েছিল সে সময়।
তাতে চাহিদা কমে যায় হিমাগারে সংরক্ষণ করা আলুর।
গত কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে শীতকালীন আগাম সবজির ক্ষতি হয়েছে।
তাই বাজারে আলুর দামে প্রভাব পড়েছে।
এতে স্বস্তি ফিরেছে চরম লোকসানের মুখে পড়া আলুচাষিদের মনে।