গাইবান্ধার সাঘাটা, ফুলছড়ি ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার নদীর চরবেষ্টিত এলাকায় মিষ্টি আলু চাষের ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষকেরা। চর ও নদীর দুই কূলের বালুচরে জমি প্রস্তুতের পর আলুর বীজ ও ডাল রোপণকাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। চলতি বছরের শেষ বন্যায় আলুবীজের অধিকাংশ ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় রোপণকাজ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জানা গেছে, দেশের উত্তরাঞ্চলে চৈত্র-বৈশাখ মাসে অভাবের সময় ভাতের বিকল্প হিসেবে মিষ্টিআলু খেলেও এখন শখ ও স্বাদের জন্য আলু খায় এলাকার লোকজন। ধীরে ধীরে আলুর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সাঘাটা উপজেলার দলদলিয়া, ভুতমারা, দুর্গাপুর, রামনগর, কচুয়া, গুজিয়া, ওসমানেরপাড়া, কামালেরপাড়া, যমুনার বেষ্টিত হলদিয়া, ফুলছড়ি তিস্তামুখেরচর ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বাঙ্গালী নদীর তীরবর্তী মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের পুনতাইড় গ্রামের চরপাড়া, বালুয়া, বোচাদহ, বিশপুকুর, পাড়সোনাইডাঙ্গা, তালুকসোনাইডাঙ্গা, শালমারা গ্রামে ব্যাপকভাবে আলুর চাষ শুরু করেন কৃষকরা। নদীচরের যেসব জমিতে তেমন কোনো ফসল উৎপাদন করা যেত না, সেসব জমিতে নির্ভরযোগ্য ফসল হিসেবে এই মিষ্টিআলু চাষ করছেন কৃষক। প্রতিবছর অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বরের মধ্যে জমিতে মিষ্টিআলুর চারালতা রোপণ করতে হয়। গত বছর বাঙ্গালী নদীর তীরবর্তী এই এলাকায় প্রায় ৭ হাজার বিঘা জমিতে মিষ্টিআলু চাষ হলেও এবার চারার অভাবে আবাদ কিছুটা কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বালুয়া গ্রামের মিষ্টিআলুচাষি খায়রুল আলম রাজা জানান, চাষিরা বাইরের বীজের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে স্থানীয়ভাবে চারা উৎপাদন বৃদ্ধি করেন। স্থানীয় হিসাবে আগে প্রতিবিঘার জন্য ১২ বোঝা (বান্ডিল) চারালতা এক থেকে দেড় হাজার টাকায় কেনা যেত। কিন্তু এ বছর বন্যায় এই এলাকায় চারাবীজতলা প্রায় সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বগুড়ার বিহারহাটসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতি বোঝা চারালতা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় কিনতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। এতে তাদের বিঘাপ্রতি চারালতার খরচ দাঁড়াচ্ছে ছয় হাজার থেকে সাত হাজার টাকা।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, কয়েক বছর ধরে এখানকার আলু বাণিজ্যিকভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়। কেবল গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম থেকে সংগ্রহ করে বালুয়া পয়েন্ট থেকে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার থেকে দেড় হাজার মণ মিষ্টিআলু রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়। সাড়ে ৪০০ থেকে সাড়ে ৬০০ টাকা মণ আলু জমি থেকেই কিনে নেন বেপারীরা। প্রতিবছরের ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে মে মাস পর্যন্ত একনাগাড়ে চলে মিষ্টিআলুর উত্তোলন ও বিক্রির মৌসুম। এ সময় প্রতিদিন এখান থেকে ১৫০ থেকে ২০০ মণ মিষ্টিআলু ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁওসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়। এর সঙ্গে জড়িত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট অনেকেই ইতোমধ্যে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করে ফেলেছেন। তবে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা এই আলু চাষে কৃষি বিভাগ থেকে তেমন কোনো সহায়তা পান না বলে অভিযোগ করেছেন। প্রয়োজনীয় সরকারি সহায়তা পেলে এই মিষ্টিআলুর চাষ ব্যাপক আকারে করা সম্ভব। এতে এই এলাকার আরও বহু কৃষিজীবী মানুষ এ আলু চাষের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে পারবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সাঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাদেকুজ্জামান জানান, মিষ্টিআলুসহ কন্দাল ফসল প্রকল্পের আওতায় উন্নত উপায়ে চাষাবাদের জন্য কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। এ ছাড়া উন্নত জাতের মিষ্টিআলু চাষ বিষয়ে বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণেরও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।