আমাদের মাঝে অনেকেই শহরে থাকেন, যারা হয়তো ফ্লাট কিম্বা পার্সোনাল বাড়িতে থাকেন। তাদের অনেকেই বাগান বা গাছের শখ থাকে। সেক্ষেত্রে তাদের জন্য ফুলের বাগান করা সহজ।
এটা তারা ছোট লন ,ব্যালকনি, ছাদ, বারান্দা, সিঁড়িঘর ইত্যাদি স্থানে করতে পারে। বাড়ির ছাদ এই ক্ষেত্রে খুবই উপযোগী। ফুলগাছ টবে লাগিয়ে ছাদে বাগান করা যেতে পারে। এখানে লক্ষণীয় যে সব ফুলের গাছ আবার টবে ভালো হয় না। সেজন্য প্রথমেই জেনে নিতে হবে যে কোন ফুলগাছ গুলো টবে চাষের উপযোগী
টবে চাষের উপযোগী ফুল গাছ
যে ফুল গাছ সমূহ বৃক্ষজাতীয় ও দীর্ঘজীবী সেগুলো টবে রোপণ না করা উচিত। সেগুলো পরবর্তীতে হয়তো অন্যত্র স্থাপন করতে হবে। সেদিক বিবেচনা করে জবা ফুল গাছ ও বিভিন্ন মৌসুমী ফুল টবের জন্য সবচেয়ে ভালো।
খেয়াল রাখতে হবে যে ফুলগাছই লাগানো হোক না কেন, তারা যেন পর্যাপ্ত আলো বা রোদ পায়। যদি একটু সঠিক পরিকল্পনা করে টবে ফুলগাছ লাগানো যায় তাহলে সারা বছরই কিছু না কিছু ফুল পাওয়া যাবেই।
যে সকল ফুলগাছ টবে চাষের জন্য উপযুক্ত
গ্রীষ্মকালীনঃ রজনীগন্ধা, গন্ধরাজ, জিনিয়া, সূর্যমূখী, দোপাটি, মণিকুন্তলা, বিচিত্রা ইত্যাদি লাগানো যায়।
বর্ষাকালীনঃ হাইড্রেঞ্জিয়া, জুঁই, পত্রলেখা, চাঁপা, তুষারমোতি, দোপাটি, ছোট সূর্যমুখী, স্থলপদ্ম, মালতীলতা ইত্যাদি।
শীতকালীনঃ প্যানজি,গাঁদা, ন্যাস্টারশিয়াম, গোলাপ পিটুনিয়া, ভারবেনা, ডালিয়া, ক্যামেলিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, কারনেশন, স্যালভিয়া, জারবেরা ইত্যাদি।
সারা বছরঃ সাদা কাঞ্চন, কামিনী, জবা, করবী, অলকানন্দা, জয়তী, নয়নতারা, সন্ধ্যামালতী বা সন্ধ্যামণি ইত্যাদি।
তবে যদি কেউ দীর্ঘস্থায়ী ফুল চাষ করতে চান তাহলে জুঁই, বেলি, গোলাপ, জবা, করবী, গন্ধরাজ, কাঞ্চন, চাঁপা, মুসেন্ডা, কামিনী, অ্যালামন্ডা, পোর্টল্যান্ডিয়া, ব্রানফেলসিয়া, ক্যামেলিয়া, টগর, শিউলি উল্লেখযোগ্য।
কিভাবে টবে প্রিয় ফুলগাছ লাগাবেন ?
প্রথমেই টবের বিষয় টা গুরুত্বপূর্ণ। গাছের সঙ্গে মানানসই সাইজের টব সংগ্রহ করা ভালো । তবে ছোট গাছের জন্য বড় টব হলে কোন সমস্যা হবে না।
ছাদের মাটি তৈরি কৌশল জানতে পড়ুন ছাদে বাগান করতে টবের মাটি তৈরির নিয়ম।
টবের জন্য মাটি তৈরি করাটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এক ভাগ দো-আঁশ মাটির সঙ্গে তিন ভাগের একভাগ পরিমাণ জৈব সার বা পচা গোবর মিশিয়ে নিতে হবে।
একই সাথে ৬০ গ্রাম হাড়ের গুড়ো, দুই চা-চামচ চুন, ১৫০ গ্রাম ছাই মিশিয়ে দিলে টবের মাটি দীর্ঘদিন উর্বর থাকে।
গাছ লাগালাম, পরিচর্যা কিভাবে করব
মৌসুমী ফুলের ক্ষেত্রে ১৫-৩০ দিন বয়সী ফুলের চারা টবে রোপণ করা উত্তম। অন্য কোন গাছের চারার বেলায় কম বয়সী ভালো ও তরতাজা, চারা বা কলম লাগানো গেলে খুব ভালো।
চারা লাগানোর পর হালকা করে চাপ দিয়ে মাটি শক্ত করে দিতে হবে গোড়ার দিকে । লাগানোর পর গাছের গোড়ায় পানি দিতে হয়। কমবয়সী গাছ যেন বেকে না যায় তার জন্য অবলম্বনের দরকার হয়। গাছ চারা অবস্থায় থাকার সময় থেকে এ ব্যবস্থা নিতে হয়।
তাই বাশের কঞ্চি বা শক্ত লাঠি দিয়ে হালকা করে বেধে দিতে হয়। প্রথমদিকে ফুলের চারা কয়েক দিন ছায়ায় রেখে পরিবেশ সহনশীল করে নিতে হবে। তবে অবস্থায় সকালে ও বিকেলে রোদ লাগার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে হবে। ফুল গাছের গোড়ার মাটিটুকু একেবারে মিহি গুড়ো না করে একটু চাকা চাকা করে খুচিয়ে দিলে ভালো হয় ভালো।
তবে লক্ষ রাখতে হবে মাটি খোঁচানোর সময় গভীরতা কোনভাবেই ৩-১০ সেন্টিমিটার এর বেশি না হয়। সপ্তাহে একবার করে করা ভালো । যদি কুঁড়ি আসার সময় হয় তাহলে ৫০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ২৫ গ্রাম এমওপি সার এক সাথে এক চা-চামচ করে ৮-১০ পর পর দিতে হবে। তবে একই মৌসুমে এই রাসায়নিক সার সমুহ তিনবারের বেশি কোনভাবেই দেওয়া যাবে না। তাতে হিতে বিপরিত হতে পারে।
ভাল ফল পেতে হলে টবের মাটি নিয়মিত পরিবর্তন করতে হয় জানতে পড়ুন ছাদে বাগান করতে টবের মাটি তৈরির নিয়ম।
লক্ষ রাখতে হবে যে রাসায়নিক সার ব্যবহারের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন শেকড়ের ওপর না পড়ে থাকে। জৈব সার ও ব্যবহার করা যেতে পারে।যদি বেশিদিন ফুল ফোটাতে চান তো গাছে ফুল শুকাতে দেয়া যাবে না, এর আগেই কেটে দিতে হবে যাতে ভালো ফুল পাওয়া যায়।
কিছু কিছু ফুল যেমন গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা ইত্যাদি গাছ থেকে বেশি ফুল পেতে চাইলে প্রথম দিকে আসা কিছু কুঁড়ির মাথায় চিমটি দিয়ে ছেঁটে দিলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।