উচ্চ মূল্যে বাজারে বিক্রি হয় বাসমতী চাল। কিন্তু বাসমতী চালে ক্ষতিকর মাত্রায় ভারী ধাতু সিসা পাওয়া গেছে। এটি রান্না বা সেদ্ধ করলেও রয়ে যায়। উচ্চ মূল্যে বিক্রি হওয়া বাসমতী চালে ক্ষতিকর মাত্রায় এই ভারী ধাতু পাওয়া গেছে। ক্যানসার, মস্তিষ্ক, যকৃৎ, কিডনির স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত করে এই ধাতু। একই সাথে দাঁত ও হাড়ে জমা হয়ে অস্টিওপরোসিস-জাতীয় রোগ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে এই ক্ষতিকর ধাতু।
বিদেশ থেকে আমদানি করা এই চাল ২২০ টাকা প্রতি কেজি। কিন্তু বাসমতী চালে ক্ষতিকর মাত্রায় পাওয়া এই সীসা দেশে উৎপাদিত চালে পাওয়া যায়নি।
বাজারে বিক্রয় হওয়া ১৩ ধরণের চালে বিভিন্ন ধাতুর উপস্থিতি
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) থেকে এক সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়।
সেই সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারে বিক্রি হওয়া ১৩ ধরনের চালে আর্সেনিক, সিসা, ক্যাডমিয়াম ও ক্রোমিয়ামের উপস্থিতি নিয়ে এই সমীক্ষা করা হয়।
বিএআরসির পুষ্টি বিভাগের পরিচালক ড. মো. মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে সমীক্ষাটি করা হয়েছে।
মো. মনিরুল ইসলাম সাথে এ বিষয়ে কথা হয়।
তিনি বলেন, বিভিন্ন সংস্থা থেকে বাংলাদেশের চালে ভারী ধাতু আছে বলে মন্তব্য আসে।
সেকারণে তারা আন্তর্জাতিক মানের পরীক্ষাগারে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে গবেষণা করে বিষয়টি যাচাই করেছেন বলে তিনি জানান।
আমাদের দেশে উৎপাদিত চালে পাওয়া ভারী ধাতু পাওয়া জৈব অবস্থায় রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
কিন্তু আমদানি করা বাসমতী চালে পাওয়া সিসার পরিমাণ মানমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।
এই মাত্রার সীসা রান্নার পরও তা থেকে যায় যা মানুষের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
আমদানি করা চালগুলোতে থাকতে পারে ভারী ধাতু
তবে খাদ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা কেবল বাসমতীকেই দায়ী করছেন না।
তারা উল্লেখ করছেন, আমদানি করা মোটা চালের মধ্যেও এই ক্ষতিকর উপাদান থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
কিন্তু দেশে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে আমদানিকৃত চালে ভারী ধাতুর পরীক্ষা করা হয় না।
আমদানি বিধিমালাতেও এর কোনো বাধ্যবাধকতা নেই বলেই বিশেষজ্ঞদের মতামত।
খাদ্য অধিদপ্তরের সংগ্রহ বিভাগের পরিচালক মো. রায়হানুল কবীর।
তার ভাষ্যমতে, দেশের আমদানি বিধিমালায় ভারী ধাতুর উপস্থিতি পরীক্ষা করার শর্ত নেই।
কেবল এর পুষ্টিগুণ ও অন্য কোনো ক্ষতিকর উপাদান এর উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয়।
গবেষণা কি বলছে!
বিএআরসির গবেষক দলের ভাষ্য, বাসমতী চালের মধ্যে ক্ষতিকর মাত্রায় সিসার উৎস প্রাথমিকভাবে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তবে ধারণা করা হয় মাটি, সার, কীটনাশক প্রয়োগ বা চাল প্রক্রিয়াজাত করার সময় এমন হতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংগ্রহ করা নমুনা বিশ্লেষণে একমাত্র আমদানি করা কোহিনুর বাসমতী চালে এ ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
তাছাড়া অন্য কোনো নমুনায় ভারী ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া যায়নি বলেই তাদের পরীক্ষার ফলাফল বলছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান।
তিনি জানান, দেশে বাসমতীর মতো দামি চালের পাশাপাশি মাঝারি ও সরু চালে ভারী ধাতুর উপস্থিতি পরীক্ষা করা উচিত।