
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পালং শাক একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ও লাভজনক শীতকালীন সবজি। অল্প সময়ে, কম পুঁজিতে এবং সীমিত জমিতে এটি চাষ করে চাষিরা দ্রুত মুনাফা অর্জন করতে পারেন। তবে সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে অনেক সময় কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া যায় না।
নিচে পালং শাক চাষকে অধিক লাভজনক করতে চাষিদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ করনীয় ও বর্জনীয় দিক তুলে ধরা হলো:
পালং শাক চাষে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য: চাষিদের জন্য প্রয়োজনীয় করনীয় ও বর্জনীয়
চাষিদের যা করতে হবে (করনীয়)
উন্নত জাত নির্বাচন: ফলন বেশি পেতে হলে এলাকা উপযোগী উন্নত জাতের (যেমন: পুসা জয়ন্তী, কপি পালং বা হাইব্রিড জাত) বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
সঠিক সময়ে বীজ বপন: বাংলাদেশে আশ্বিন থেকে অগ্রহায়ণ মাস পালং শাকের উপযুক্ত সময়। আগাম বাজার ধরতে পারলে অধিক মুনাফা পাওয়া যায়।
মাটি প্রস্তুতি ও সার প্রয়োগ: দোআঁশ মাটি পালং শাকের জন্য সবচেয়ে ভালো। জমি তৈরির সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব সার বা কম্পোস্ট প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া অনুমোদিত মাত্রায় টিএসপি ও পটাশ সার ব্যবহার করা জরুরি।
বীজ শোধন: বপনের আগে বীজ শোধন করে নিলে চারা অবস্থায় রোগবালাইয়ের আক্রমণ অনেক কমে যায়।
পরিমিত সেচ ও নিষ্কাশন: মাটিতে রসের অভাব হলে হালকা সেচ দিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন পানি জমে না থাকে।
আগাছা পরিষ্কার ও পাতলাকরণ: চারা ঘন হলে কিছু চারা তুলে পাতলা করে দিতে হবে (গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ২-৩ ইঞ্চি রাখা ভালো)। এতে প্রতিটি গাছ পর্যাপ্ত পুষ্টি ও আলো পায় এবং দ্রুত বড় হয়।
সঠিক উপায়ে সংগ্রহ: বাজারজাত করার আগে শাক পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে আটি বেঁধে সাজিয়ে রাখতে হবে। এতে সতেজতা বজায় থাকে এবং ভালো দাম পাওয়া যায়।
চাষিদের যা এড়িয়ে চলতে হবে (বর্জনীয়)
অতিরিক্ত ইউরিয়া ব্যবহার: পাতা দ্রুত বড় করার জন্য মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়া সার ব্যবহার করা যাবে না। এতে শাকের স্বাদ নষ্ট হয় এবং রোগবালাইয়ের ঝুঁকি বাড়ে।
জমিতে পানি জমিয়ে রাখা: পালং শাক অতিরিক্ত পানি সহ্য করতে পারে না। জমিতে পানি জমে থাকলে গাছের গোড়া পচে যেতে পারে। তাই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রাখা একটি বড় ভুল।
নিম্নমানের বীজ ব্যবহার: খোলা বাজারের নিম্নমানের বা পুরনো বীজ ব্যবহার করবেন না। এতে অঙ্কুরোদগম হার কম থাকে এবং ফলন বিপর্যয়ের সম্ভাবনা থাকে।
বালাইনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার: পোকা দমনে অতিরিক্ত রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার এড়িয়ে চলতে হবে। বিশেষ করে শাক তোলার কমপক্ষে ৭-১০ দিন আগে কোনো প্রকার কীটনাশক স্প্রে করা সম্পূর্ণ নিষেধ।
অপরিণত বা অতি-পরিপক্ক অবস্থায় সংগ্রহ: খুব ছোট অবস্থায় শাক তুললে ওজন কম হয়, আবার বেশি দেরি করলে পাতা শক্ত হয়ে যায় এবং ফুল চলে আসে, যা বাজারের চাহিদা কমিয়ে দেয়।
উপসংহার
পালং শাক চাষে বড় কোনো ঝুঁকি নেই, তবে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও সঠিক ব্যবস্থাপনার সমন্বয় ঘটানো জরুরি। চাষিরা যদি উপরের নিয়মগুলো মেনে চলেন, তবে খুব অল্প সময়েই এই সবজি থেকে বড় অংকের মুনাফা অর্জন করা সম্ভব।
পরামর্শ: কোনো প্রকার সমস্যার সম্মুখীন হলে স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শ গ্রহণ করুন। সঠিক পরামর্শই পারে আপনার পরিশ্রমকে সার্থক করতে।

