Saturday, 19 April, 2025

সর্বাধিক পঠিত

দেশি শিং (Heteropneustes fossilis) মাছের পোনা হ্যাচারিতে উৎপাদনের কলা কৌশল


শিং মাছ

দেশি শিং মাছের পোনা হ্যাচারিতে উৎপাদনের কলাকৌশল বেশ সূক্ষ্ম ও যত্নশীল প্রক্রিয়া। এটি মূলত ব্রুড মাছের নির্বাচন, প্রজনন, ডিম সংগ্রহ, রেনু উৎপাদন ও পরিচর্যার ওপর নির্ভর করে। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো—

. ব্রুড মাছ নির্বাচন সংরক্ষণ

    আরো পড়ুন
    কক্সবাজার উপকূলে ১০ হাজারের বেশি কচ্ছপের বাচ্চা সাগরে অবমুক্ত

    চলতি মৌসুমে কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন উপকূলে কচ্ছপের ডিম সংরক্ষণ ও বাচ্চা প্রজননে তৎপরতা বেড়েছে। বনবিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং বেসরকারি সংস্থা Read more

    হালদা নদীতে মা মাছের আগমন, ডিম আহরণে প্রস্তুতি তুঙ্গে
    হালদার মা মাছ

    চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে মা মাছের আনাগোনা শুরু হয়েছে। প্রতি বছর চৈত্র মাসের শুরুতে এই নদীতে ডিম Read more

  • ১২০-১৫০ গ্রাম ওজনের সুস্থ ও পরিণত শিং মাছ (Heteropneustes fossilis) ব্রুড মাছ হিসেবে নির্বাচন করা হয়।
  • ব্রুড মাছের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত পুকুরে (৩-৪ ফুট গভীর) সংরক্ষণ করতে হয়।
  • প্রতি ১০০০ লিটার পানির জন্য ১০০-১৫০টি ব্রুড মাছ রাখা যেতে পারে।
  • খাদ্য হিসেবে উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার (২৫-৩০%) প্রদান করা হয়।

শিং মাছের (Heteropneustes fossilis) পুরুষ ও স্ত্রী মাছ চেনার কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সাধারণত প্রজনন মৌসুমে এদের পার্থক্য করা সহজ হয়। নিচে প্রধান পার্থক্যগুলো উল্লেখ করা হলো—

পুরুষ স্ত্রী শিং মাছের পার্থক্য

বৈশিষ্ট্যপুরুষ মাছস্ত্রী মাছ
দেহের গঠনসরু, লম্বাটে ও চিকনমোটা ও তুলনামূলকভাবে বড়
পেটের আকৃতিপাতলা এবং সামান্য চাপাবড়, গোলাকার ও নরম
পায়ুপথ (Genital Opening)ছোট এবং সামান্য উঁচুঅপেক্ষাকৃত বড় ও ফোলা
প্রজনন মৌসুমে পরিবর্তনযৌনাঙ্গ লম্বা ও স্পষ্ট হয়ে ওঠেপেট আরও ফোলা ও নরম হয়
রঙের পার্থক্যতুলনামূলক গাঢ় রঙেরকিছুটা হালকা রঙের
শুক্রাণু নির্গমনপেটে চাপ দিলে সাদা রঙের তরল বের হয়পেটে চাপ দিলে ডিম বের হতে পারে

সহজ চেনার কৌশল

  1. পেটের গঠন দেখে বোঝা: স্ত্রী মাছের পেট গোলাকার ও নরম থাকে, বিশেষত প্রজনন মৌসুমে।
  2. পায়ুপথ পরীক্ষা: স্ত্রী মাছের যৌনাঙ্গ পুরুষের তুলনায় বেশি ফোলা ও বড় হয়।
  3. শুক্রাণু পরীক্ষা: পুরুষ মাছের পেটে হালকা চাপ দিলে সাদা রঙের তরল বের হয়, যা শুক্রাণু।

প্রজননের জন্য সুস্থ ও পরিণত পুরুষ ও স্ত্রী মাছ নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

. প্রজনন প্রক্রিয়া (Hormonal Induction)

  • কৃত্রিম প্রজননের জন্য ইনজেকশন পদ্ধতিতে হরমোন প্রয়োগ করা হয়।
  • সাধারণত Ovaprim, HCG (Human Chorionic Gonadotropin) অথবা P.G (Pituitary Gland) Extract ব্যবহার করা হয়।
  • স্ত্রী মাছের প্রতি কেজি ওজনে ০.৫-১.৫ মি.লি. ও পুরুষ মাছের ক্ষেত্রে ০.৫-১.০ মি.লি. হরমোন ইনজেকশন দেওয়া হয়।
  • ইনজেকশনের ৮-১০ ঘণ্টা পর ডিম সংগ্রহ করা হয়।

. ডিম সংগ্রহ নিষেক (Fertilization)

  • স্ত্রী মাছ থেকে ডিম সংগ্রহ করে এবং পুরুষ মাছ থেকে শুক্রাণু সংগ্রহ করে শুকনো পদ্ধতিতে নিষেক করানো হয়।
  • নিষিক্ত ডিমকে ২-৩ বার ধুয়ে হ্যাচিং ট্রেতে রাখা হয়।

. হ্যাচিং লার্ভা উৎপাদন

  • হ্যাচিং ট্রেতে পানির তাপমাত্রা ২৫৩০°C এবং পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়।
  • ২৪-৩০ ঘণ্টার মধ্যে ডিম ফুটে লার্ভা বের হয়।
  • প্রথম ৩-৪ দিন লার্ভাকে সেলাইনের পানিতে রাখতে হয় এবং পরে কৃত্রিম খাবার বা জোঁকের রস দেওয়া হয়।

. পোনা পরিচর্যা

  • ৫-৭ দিন পর লার্ভাগুলোকে বিশেষভাবে প্রস্তুত পোনা চাষ পুকুরে ছাড়া হয়।
  • শুরুতে আর্থওয়ার্ম, ইনফুসোরিয়া সঠিক পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয়।
  • প্রতি লিটার পানিতে ৩টি পোনা ছাড়া হয় এবং ৩-৪ সপ্তাহ পর এগুলো বড় আকারের পোনায় পরিণত হয়।

এই পদ্ধতিতে দেশি শিং মাছের পোনা উৎপাদন সফলভাবে করা সম্ভব, যা বাণিজ্যিকভাবে খুবই লাভজনক।

0 comments on “দেশি শিং (Heteropneustes fossilis) মাছের পোনা হ্যাচারিতে উৎপাদনের কলা কৌশল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক লেখা

আর্কাইভ