ইলিশের আবাস, প্রজননস্থল, নদী ও সমুদ্রের পানির গুণগত মান, খাদ্যের মতো বিষয় নিয়ে গবেষণায় এবার নতুন মোড় আসবে। আগামী সপ্তাহেই একটি জাহাজ গবেষণা কার্যক্রম শুরু করছে। খুলনা শিপইয়ার্ডে নির্মিত এ জাহাজ ইলিশ গবেষণা সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করবে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন দেশে এই জাহাজ মাছ উৎপাদনের চিত্র পাল্টে দেবে।
দেশে এ ধরনের জাহাজ এবারই প্রথম।
নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কেন্দ্র প্রধান ড. মো. আনিছুর রহমান এবং জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালক মো. আবুল বাশার এ ব্যাপারে কথা বলেন।
জাহাজটি ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে কী কী ভূমিকা রাখতে পারে, তা তুলে ধরেছেন তারা।
প্রকল্প পরিচালক আবুল বাশার বলেন, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের আওতাধীন চাঁদপুরস্থ নদী কেন্দ্রে ইলিশ গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্প চালু রয়েছে।
এই প্রকল্পের আওতায় ২০১৯ সালের মে মাসে খুলনা শিপইয়ার্ডে জাহাজটি নির্মাণ শুরু হয়।
এটি দুই বছরের মধ্যে নির্মাণের কথা ছিল।
কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে প্রশিক্ষণের মতো কিছু কাজ পিছিয়ে পড়ে তাই জাহাজটি হস্তান্তরে দেরি হয়ে গেছে।
আগামী সপ্তাহে জাহাজ এর মাধ্যমে নদী ও সমুদ্রে গবেষণা শুরু হবে বলে তিনি জানান।
জাহাজে কী কী রয়েছে
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম মঙ্গলবার খুলনা শিপইয়ার্ডে উপস্থিত হয়ে জাহাজ হস্তান্তর অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), বাংলাদেশ নৌবাহিনী, নৌপরিবহন অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ মেরিন সায়েন্সেস, মেরিন ফিশারিজ একাডেমির সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠিত হয়।
এই কমিটির মাধ্যমে ইলিশ গবেষণা জাহাজটির প্রাক্কলন প্রণয়ন করা হয়।
গবেষণা জাহাজটিতে ফিশ ফাইন্ডার, ইকো সাউন্ডার, নেভিগেশন সিস্টেম যুক্ত করা হয়েছে।
এতে আরও সংযোজন হয়েছে অত্যাধুনিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা, অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম, ইলিশ গবেষণা ল্যাবরেটরি, নেটিং সিস্টেম, পোর্টেবল মিনি হ্যাচারিসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি।
খুলনা শিপইয়ার্ডের নিজস্ব ডিজাইনে তৈরি হয় গবেষণা জাহাজটি।
এর মাধ্যমে দেশের প্রায় সব নদ-নদী এবং সাগর উপকূলে ইলিশ বিষয়ক গবেষণা করা সম্ভব হবে।
জাহাজটির মূল কাজ কি হবে
নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনিছুর রহমান।
তিনি জানান, জাহাজটি দিয়ে মূলত ইলিশের বিচরণ ও প্রজনন কেন্দ্রগুলোর ইকোসিস্টেম, পানির গুণগত মান ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা চালানো হবে।
ছোট নৌযান দিয়ে একই কাজ করা হলেও ভোলার মনপুরার মতো স্থানে যাওয়া সম্ভব হত না।
এ জাহাজের মাধ্যমে বর্তমানে সে বাধা দূর হবে বলে তিনি মনে করেন।
জাহাজটিতে থাকা ল্যাবরেটরিতে তাৎক্ষণিকভাবে পানির মান কিংবা ইলিশের খাদ্যের মতো বিষয়গুলো পরীক্ষা করা যাবে।
ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে কীভাবে ভূমিকা রাখবে
প্রকল্প পরিচালক আবুল বাশার জানান, আগে পানির নমুনা ঘটনাস্থল থেকে চাঁদপুরে আনতে আনতে গুণগত মান কিছুটা নষ্ট হয়ে যেত।
কিন্তু জাহাজে ল্যাব থাকায় তাৎক্ষণিক ভাবে তা পরীক্ষা সম্ভব হবে।
এ কর্মকর্তা আরও জানান যে, কোন জলাশয়ের কোনো একটি স্থানে জাটকা বেশি, কোথাও কম হয়।
সে স্থানে কেন জাটকা বেশি বা কম হয় তা নিরূপণে জাহাজটি ব্যাপক সাহায্য করবে।
দেশে ইলিশ উৎপাদনের অবস্থায় রাখা অবদান
দুই কর্মকর্তা আনিছুর ও আবুল বাশার বলেন, দেশে ১০ বছর আগে প্রায় ২ লাখ টন ছিল ইলিশের বার্ষিক গড় উৎপাদন।
ক্রমাগত গবেষণার সুপারিশে নীতি পরিবর্তন করার ফলে গত কয়েক বছর বার্ষিক উৎপাদন বেড়েছে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টন করে।