সুনামগঞ্জে হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধের জন্য সময় বেধে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের এক মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো অনেক হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু হয়নি। ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’ সংগঠনের নেতারা এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অবিলম্বে তাঁরা দাবি জানিয়েছেন জেলার সব হাওরে বাঁধের কাজ শুরুর।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরে সংগঠনের অস্থায়ী কার্যালয়ে আজ সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে তারা। সেখানেই ফসল রক্ষা বাঁধের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ ও দাবির কথা জানান তারা। সংগঠনের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক এ সংক্রান্ত লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
পাউবোর কাগুজে হিসাব ও মাঠের বাস্তবতায় কোন মিল নেই
ওবায়দুল হক লিখিত বক্তব্যে বলেন, ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের নির্ধারিত সময়সীমা করা হয়েছে।
কিন্তু এক মাস সময় পেরিয়ে গেছে। অথচ এখনো পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) হিসাবেই প্রায় ৩০০ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি।
পাউবোর কাগুজে হিসাব আর মাঠের বাস্তবতায় কোনো মিল নেই বলেও জানানো হয়।
গত ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত ৭টি উপজেলার কোথাও কাজের কোনো রকম কোন প্রকল্প দেওয়া হয়নি।
কাজে শুরু এক ধরনের ঢিলেমি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এদিকে মাঠপর্যায়ে গণশুনানির মাধ্যমে পিআইসি গঠনের দাবি থাকলেও, তা আদতে করা হয়নি।
বরং অভিযোগ রয়েছে পিআইসি গঠন করা হয়স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রভাবে।
এবং এদের মাধ্যমেই কাজে অনিয়ম হয়ে থাকে বলে ওবায়দুল হক লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
হাওর আন্দোলন নেতারা সরেজমিন পরিদর্শন করে জানান এখনো অনেক হাওরে কাজই শুরু হয়নি।
অনেক স্থানেই প্রয়োজনীয় তথ্যসহ সাইনবোর্ড দেওয়ার কথা থাকলেও তা পাওয়া যায়নি।
কিছু কিছু স্থানে প্রকল্পের কাজ নামমাত্র ভাবে শুরু হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পিআইসি গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রতিটি উপজেলাতেই ইউএনও ও পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী মিলে প্রকল্প গ্রহণ ও অনুমোদন দিয়ে সুবিধা নিচ্ছেন।
স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা অভিযোগ করেছেন উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
এদিকে বাহাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এক পাউবো কর্মকর্তা।
শাল্লা উপজেলায় ফসল রক্ষা বাঁধের প্রকল্প গ্রহণে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় তার বিরুদ্ধে এই মামলা করা হয়।
দিরাই উপজেলার রফিনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর চৌধুরী অনিয়ম ও দুনীতির অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
গাফিলতি ও অনিয়ম সহ্য না করার হুশিয়ারি
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতারা হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন বাঁধের কাজে গাফিলতি ও অনিয়ম সহ্য করা হবে না।
এ কারণে যদি ফসলের কোনো রকম ক্ষতি হয় তাহলে সংশ্লিষ্টদেরকে এর দায় নিতে হবে।
অভিযোগ অস্বীকার করে সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম জানান যে, কাজে কোনো অবহেলা বা অনিয়ম নেই।
বরং নীতিমালা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সব প্রকল্পের কাজ জানুয়ারি মাসের মধ্যেই শুরু হবে।
জেলার ১১টি উপজেলায় এবার ৫২০ কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধ মেরামত ও নির্মাণ হবে বলে জানান তিনি।
এ পর্যন্ত ৭২০টি প্রকল্প নির্ধারণ করা হয়েছে।
এসব প্রকল্পে ১১৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে ৭০০টি পিআইসি গঠন করা হয়েছে।
সোমবার পর্যন্ত কাজ ৪৫৫টি প্রকল্পে শুরু হয়েছে।
এখনো ২৬৫টি প্রকল্পে কাজ শুরু হয়নি।