ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের কারণে টানা বৃষ্টি হয়েছে। এতে শরীয়তপুর জেলায় পেঁয়াজ রসুনের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনও জলাবদ্ধতায় রয়েছে অনেক জমিতে। সেই সাথে যে সকল জমি শুকিয়ে গেছে সেগুলোতে মড়ক দেখা দিয়েছে। এরকম সময়ে পেঁয়াজ রসুনের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত এবং নতুন করে আবাদের সুযোগ না থাকায় কৃষকরা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।
কৃষি বিভাগ নানা ধরনের পরামর্শ দিচ্ছে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে
সরেজমিনে জাজিরা উপজেলায় গিয়ে দেখা যায়, দুই সপ্তাহ পার হলেও জাওয়াদের প্রভাব রয়ে গেছে। বিভিন্ন ফসলের মাঠে পেঁয়াজ রসুনের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার প্রভাবেই।
পেঁয়াজ ও রসুনের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে আছে।
আবার কোন কোন স্থানে পানি নেমে যাওয়া জমির ফসলে পচন ধরেছে।
এতে বেঁচে যাওয়া ফসলের বৃদ্ধি থেমে গেছে।
কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, মুনাফার আশায় পেঁয়াজ-রসুনের আবাদ করেন তারা।
অনেকেই ধারদেনা করে চাষ করেছেন পেঁয়াজ রসুনের।
কিন্তু এখন তারা আশঙ্কা করছেন জাওয়াদের কারণে ফসলের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসতে পারে বলে।
অন্যদিকে এখন মৌসুমের শেষ সময়।
তাই এখন নতুন করে চাষ করাও সম্ভব না।
ঘুরে দাঁড়ানোর বিকল্প পথ না পেয়ে দিশাহারা চাষিরা চোখের জল ফেলছেন প্রতিনিয়ত।
ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মাঠ ঘুরে দেখেছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে।
একই সাথে পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪২ হাজার ৬৬৫ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়।
এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৭৩ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে।
অন্যদিকে রসুন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে।
তার বীপরিতে ৩ হাজার ৬৭০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।
সেই সাথে ৭২ হাজার ২০৮ মেট্রিক টন রসুনের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
কৃষি বিভাগ জানায় প্রাথমিক তথ্য অনুসারে ৭৬০ হেক্টর জমির পেঁয়াজ এবং ৯৪০ হেক্টর জমির রসুন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুস সাত্তার।
তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মাঠ ঘুরে দেখেছেন তিনি।
প্রায় জমিতে এখনও জলাবদ্ধতা রয়েছে।
যেসব জমির পানি নেমে গেছে, সেসব জমি এখনও ভেজা রয়েছে যার ফলে ফলনে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটবে।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা জরিপ করে অধিদপ্তর থেকে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান যে প্রণোদনা এলে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা যেন অন্য ফসলের আবাদ করে সে বিষয়ে কৃষি বিভাগ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
তিনি আরও জানান যে, যদি ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে হালি পেঁয়াজ আবাদ করলে মোট উৎপাদনে কোন প্রভাব পড়বে না।
তার মতে বিকল্প ফসল হিসেবে ভুট্টা, ধনিয়া ও কালিজিরা চাষাবাদের সুযোগ রয়েছে।
এসব চাষ করে কৃষকের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে।