পুকুরের পানিতে অনেক দুর্গন্ধ। দুর্গন্ধ এর কারনে মাছ মরছে। পুকুরের পানির দুর্গন্ধ দূর করার উপায় কি ?
মাছ চাষ করতে গেলে পুকুরের পানির উপর কয়েক ধরণের স্তর সৃষ্টি হয়, এই স্তরে সৃষ্টি হলে পুকুরে মাছের উৎপাদন ব্যহত হয়। সাধারনত: তিন ধরনের সর/স্তর দেখা যায়:
১. ফাইটোপ্লাংটন প্রাচুর্যজনিত স্তর: সব সময়ই এটার রং সবুজ থাকে, মোটা কাথার মতও দেখা যায়।
২. ইউগ্লেনাজনিত স্তর: এই ধরনের সর দিনের বেলায় সূর্যালোকের উপস্থিতিতে লালচে-বাদামী বর্ণ ধারণ করে কিন্তু পড়ন্ত বিকেলে বা সন্ধ্যায় আলো মিলিয়ে যেতে না যেতেই সবুজ বর্ণ ধারন করে; এটার মধ্যে হাত কিংবা কোন কাঠ ঢুকিয়ে দিলে সরে যায় আবার হাত বা কাঠ বের করে নিলে সাথে সাথেই মুদে যায়।
৩. আয়রন জনিত স্তর: এটি সব সময়ই লালচে বাদামী; এটির বর্ণ কখনই পাল্টায় না;
১. ফাইটোপ্লাংটন প্রাচুর্যজনিত স্তর:
সব সময়ই এটার রং সবুজ থাকে, মোটা কাথার মতও দেখা যায়।
কারণ:
সাধারনত এটি অতিরিক্ত খাদ্য বা সার প্রয়োগের কারনে হয়ে থাকে। খাদ্যে অতিরিক্ত আমিষ, ফসফরাস থাকলেও হতে পারে। অতিরিক্ত শেওলার জন্য পানির রং ঘন সবুজ হয়ে যায়। ফলে রাতের বেলায় পানিতে অক্সিজেন কমে যায় এবং দিনের বেলায় পিএইচ মান বেড়ে যায়। অতিরিক্ত অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে ভোর রাতে মাছ পানির ওপর ভেসে উঠে এবং বেশি সময় ধরে এ অবস্থা চলতে থাকলে মাছ মারা যায়।
প্রতিকার:
১. মাছ খাবি খেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে পুকুরে অগভীর নলকূপের পরিষ্কার ঠান্ডা পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা এবং প্রতি শতকে ৫-৮ গ্রাম গ্রানুলার অক্সিজেন প্রয়োগ করতে হবে।
৩. সেই সাথে পুকুরে খাদ্য ও সার প্রয়োগ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হবে।
৪. চারা পোনা আকৃতির বা এর থেকে বড় আকৃতির কিছু সিলভার কার্পের পোনা (প্রতি শতকে ১টি) ছেড়ে জৈবিকভাবে অতিরিক্ত উদ্ভিদ প্লাংকটনের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
৫. সম্ভব হলে ঘাসের দড়ি দিয়ে চাপিয়ে নিয়ে উঠিয়ে ফেলতে হবে।
অথবা
১. সবুজ স্তরের জন্য প্রতি শতকে ১৫গ্রাম (৩-৫ ফুট গভীরতায়) তুঁতে পাতলা কপড়ে ছোট ছোট পটলায় বেধে পানি পৃষ্ঠের ১/২ ফুট নিচে খুটির মধ্যমে বেধে দিতে হবে।
২. তুঁতে প্রয়োগের ৩য় দিন পুকুরে ২০ কেজি/একর হারে জিওলাইট ও গ্যাস এবজরবেন্ট ২০০গ্রাম/একর হারে প্রয়োগ করতে হবে। অথবা জিওলাইট ও গ্যাস এবজরবেন্ট না পাওয়া গেলে প্রতি শতকে ৩০০ গ্রাম হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে।
২. ইউগ্লেনাজনিত স্তর:
এই ধরনের সর দিনের বেলায় সূর্যালোকের উপস্থিতিতে লালচে-বাদামী বর্ণ ধারণ করে কিন্তু পড়ন্ত বিকেলে বা সন্ধ্যায় আলো মিলিয়ে যেতে না যেতেই সবুজ বর্ণ ধারন করে; এটার মধ্যে হাত কিংবা কোন কাঠ ঢুকিয়ে দিলে সরে যায় আবার হাত বা কাঠ বের করে নিলে সাথে সাথেই মুদে যায়।
কারণ:
ইউগ্লেনা নামক বহু কোষী প্রাণীর উপস্থিতি; যেটিতে ক্লোরোফিল নামক উপাদান থাকায় সূর্যের আলোর উপস্থিতিতে ভিন্ন বর্ণ ধারণ করে থাকে
প্রতিকার:
১. ইউগ্লেনা হলে স্তরটি একপাশে চাপিয়ে বা বাতাসে এক পাশে চলে আসলে ৩ দিন অন্তর-অন্তর তুলে ফেলতে হবে এইভাবে ৩-৪ বার প্রক্রিয়াটির পুনরাবৃত্তি করতে হবে।
অথবা
১. জমে থাকা ইউগ্লেনার স্তরের উপর প্রতি শতকের জন্য ১ কেজি হারে টাটকা দলা অবস্থায় থাকাতেই পুকুর পাড়ে নিয়ে তাৎক্ষণিক ভাবে পাথুরে চুনে ( প্রতি কেজিতে ২০০ মিলি) পানি ছিটিয়ে দিয়ে পাউডার বানিয়ে ঠান্ডা হলেই সতর্কতার সাথে ইউগ্লেনার স্তরের উপর ছিটিয়ে দিন।
সর্তকতা:
হাতে গ্লোভস্, চোখ, মুখ ও দেহের সুরক্ষিত করে নিতে হবে
৩. আয়রন জনিত স্তর:
এটি সব সময়ই লালচে বাদামী; এটির বর্ণ কখনই পাল্টায় না
কারণ:
পানিতে আয়রনের পারিমান বেশি থাকা বা আয়রন সম্বলিত ভূ-গর্ভস্থ পানি সরবরাহ
প্রতিকার:
ক) বোরিং এর গভীরতা আয়রন মুক্ত স্তরে স্থাপন করতে হবে।
খ) সম্ভব না হলে ঘাস সম্বলিত নালা দিয়ে পানি প্রবাহিত করে একটি পুকুরে ফেলে তারপর মূল পুকুরে সরবরাহ করতে হবে
গ) সম্ভব না হলে বাঁশ বা ঘাসের দড়ি দিয়ে চাপিয়ে নিয়ে উঠিয়ে ফেলতে হবে।
ঘ) পুকুরে প্রতি শতকে ২০০ গ্রাম চুন এবং ৫০-১০০ গ্রাম/শতক হারে ফিটকিরি ব্যবহার করা যেতে পারে।
তথ্যসূত্র: কাজী আবেদ লতিফ, মৎস্য অধিদপ্তর