পালং শাকের পুষ্টিগুণ
প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাকে রয়েছে –
প্রোটিনের পরিমাণ ২.০ গ্রাম,
কার্বোহাইড্রেট ২.৮ গ্রাম,
আয়রন ১১.২ মি. গ্রাম,
ফসফরাস ২০.৩ মি. গ্রাম,
নিকোটিনিক এসিড ০.৫ মি. গ্রাম,
অক্সালিক এসিড ৬৫২ মি. গ্রাম,
ক্যালসিয়াম ৭৩ মি. গ্রাম,
পটাশিয়াম ২০৮ মি. গ্রা।
এবং আঁশের পরিমাণ ০.৭ গ্রাম।
এ ছাড়া প্রচুর ভিটামিন বিদ্যমান রয়েছে। এতে ভিটামিন-এ আছে ৯৩০০ আইইউ, রিবোফ্লোবিন ০.০৮ মি. গ্রাম, ভিটামিন সি ২৭ মি. গ্রা, ও থায়ামিন ০.০৩ মি. গ্রাম।
পালং শাকের চাষাবাদ পদ্ধতি নিয়ে আজকের আলোচনা। পালং শাকের রয়েছে পুষ্টিগুন। পালং শাকের জনপ্রিয়তা রয়েছে স্বাস্থ্য সচেতন দের কাছে। পালং শাকে রয়েছে উচ্চ মাত্রার ম্যাগনেসিয়াম, যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এতে থাকা বেশি মাত্রার ভিটামিন এ, লিম্ফোসাইট বা রক্তের শ্বেত কণিকা দেহকে বিভিন্ন সংক্রমণ ও রোগ থেকে রক্ষা করে।
চাষের জন্য জাত নির্বাচন
পুষা জয়ন্তী, কপি পালং, গ্রিন, সবুজ বাংলা ও টকপালং। এছাড়া আছে নবেল জায়েন্ট, ব্যানার্জি জায়েন্ট, পুষ্প জ্যোতি ইত্যাদি।
পালং শাকের মাটি কেমন হওয়া উচিত ?
দোআঁশ উর্বর মাটি বেশি উপযোগী। এছাড়াও এঁটেল, বেলে-দোআঁশ মাটিতেও চাষ করা যায়।
কিভাবে জমি মাটি তৈরি করবেন ?
জমি চাষ ও মই দিয়ে মাটি মিহি করে তৈরি করতে হবে।
রাসায়নিক এবং জৈব সার প্রয়োগের নিয়মাবলি
সার জমির শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হয় তবে ইউরিয়া চাষের শেষে দিতে হয় । তবে গোবর জমি তৈরির প্রথম দিকে প্রয়োগ করাই উত্তম।
চারা গজানোর ৮-১০ দিন পর থেকে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করে মাটির সাথে ইউরিয়া সার মিশিয়ে দিতে হবে।
প্রতি শতকে গোবর⇒ ৪০ কেজি, ইউরিয়া⇒ ১ কেজি, টিএসপি⇒ ৫০০ গ্রাম এবং এমপি⇒ ৫০০ গ্রাম দিতে হয়।
পালং শাকের জমিতে আল নির্বাচন ও তৈরি:
পালংশাক চাষে জমিতে আল তৈরি করতে হয় । মাটি দিয়ে উঁচু আল পালংশাকের জন্য নির্বাচন করা হয়। উঁচু আলে কিছুটা আগাম পালংশাক বীজ বপন করা যায়। কোদাল দিয়ে আলের মাটি কুপিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে মাটি তৈরি করতে হয়।
বীজ বপনের নিয়ম
প্রতি আলে ⇒৩৫-৪০ গ্রাম, প্রতি শতকে ⇒১১৭ গ্রাম, প্রতি একরে ⇒৯-১১ কেজি, প্রতি হেক্টরে ⇒২৫-৩০ কেজি
বীজ বপনের উত্তম সময়:
পালং শাক বপনের উত্তম সময় সেপ্টেম্বর- জানুয়ারি মাস। ১০ সেমি দূরে দূরে পালং শাকের বীজ বপন করতে হয়। তবে ছিটিয়েও বীজ বপন করা যায়। বীজ বপনের পর অঙ্কুরোদগমে প্রায় ৭-৮ দিন সময় লাগে।
জমিতে আলে সরাসরি বীজ ছিটিয়ে বা গর্ত তৈরি করে মাদায় বীজ বপন করা যায় অথবা বীজতলায় চারা তৈরি করে সে চারা রোপণ করেও পালংশাক চাষ করা যায়। বীজ বপনের পূর্বে বীজ ২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। নির্দিষ্ট দূরত্বে গর্ত তৈরি করে প্রতি মাদায় ২-৩ টি করে বীজ বপন করতে হয়।
পালং শাকের জমির পরিচর্যা
জমিতে আগাছা দেখা দিলেই তা তুলে ফেলতে হবে।
সময় মতো নিয়মানুযায়ী সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে।
পালং শাকের জন্য প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। তাই সারের উপরিপ্রয়োগের আগে মাটির ‘জো’ অবস্থা বুঝে সেচ দেওয়া প্রয়োজন। চারা রোপণের পর হালকা সেচ দেওয়া প্রয়োজন।
কোনো স্থানের চারা মরে গেলে অথবা বীজ না গজালে সেখানে ৭-১০ দিনের মধ্যে পুনরায় চারা রোপণ করতে হয়।
পালং শাক গাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য মাটিতে বেশি দিন রস ধরে রাখা এবং মাটিতে যাতে সহজে আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে সেজন্য প্রতিবার পানি সেচের পর আল/জমির উপরের মাটি আলগা করে দিতে হয়।
বীজ গজানোর ৮-১০ দিন পর প্রতি মাদায় ২টি করে চারা রেখে অতিরিক্ত চারা উঠিয়ে ফাঁকা জায়গায় রোপণ করতে হয়।
পোকার আক্রমনে করনীয়
পালংশাকে মাঝে মাঝে পিপঁড়া, উরচুঙ্গা, উইপোকা এবং পাতাছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ দেখা যায়। আক্রমণ হলে আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলতে হয়।
পালং শাকের অন্যান্য রোগ
পালংশাকের প্রধান রোগের মধ্যে রয়েছে- গোড়া পচা রোগ, পাতার দাগ রোগ, এবং পাতা ধ্বসা রোগ। এছাড়া পালংশাকে আরও দুইধরনের রোগ দেখা যায়। যেমন- ডাউনি মিলডিউ, পাতায় দাগ।
শাকের বীজ বপনের এক মাস পর থেকে পালংশাক সংগ্রহ করা যায় এবং গাছে ফুল না আসা পর্যন্ত যে কোনো সময় সংগ্রহ করা যায়।