অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনতে ‘পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপন’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, ৪৩৮ কোটি টাকার এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় পাঁচ লাখ পুষ্টিবাগান স্থাপন করা হবে। সফলভাবে এটি বাস্তবায়ন করতে পারলে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি পারিবারিক শাকসবজি ও পুষ্টিচাহিদা পূরণ হবে।
মঙ্গলবার (২২ জুন) বিকেলে ঢাকায় বিএআরসি মিলনায়তনে ‘অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙিনায় পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপন’ প্রকল্পের অবহিতকরণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে কঠিন তদারকির নির্দেশ দেন মন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার পর আমাদের মোট বাজেট ছিল মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকা, সেখানে আজকে শুধু বাড়ির আঙিনায় পুষ্টিবাগান স্থাপনে ৪৩৮ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের প্রত্যেকটি টাকার হিসাব আমাদেরকে দিতে হবে। যে উদ্দেশ্যে এ প্রকল্প নেয়া হয়েছে তার কতটুকু অর্জিত হলো তার গাণিতিক ও বাস্তবসম্মত হিসাব এবং মূল্যায়ন করতে হবে। নির্বাচিত কৃষকরা সবজি উৎপাদন করছে কি-না অন্যরা উৎসাহিত হচ্ছে কি-না এবং উৎপাদিত সবজি খেয়ে তাদের পুষ্টি স্তরের উন্নতি হচ্ছে কি-না তা যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে হবে।
মন্ত্রী জানান, প্রকল্প গ্রহণের আগে গত বছর দেশব্যাপী চার হাজার ৪৩১টি ইউনিয়নে ৩৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় এক লাখ ৪১ হাজার পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপন করা হয়েছে।
কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহর সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পিপিসি) মো. রুহুল আমিন তালুকদার, অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) ড. মো. আব্দুর রৌফ, বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মো. বখতিয়ার বক্তব্য রাখেন। প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরেন প্রকল্প পরিচালক মো. মাইদুর রহমান।
জানা গেছে, ৪৩৮ কোটি টাকার ‘অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙিনায় পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপন’ প্রকল্পটি এ বছরের মার্চে একনেকে অনুমোদিত হয়। তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পটি বাংলাদেশের সকল উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে।
প্রকল্পের উপস্থাপনায় জানানো হয়, বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি ৫৩ লাখ বসতবাড়ি রয়েছে। এসব বসতবাড়ির অধিকাংশ জায়গা অব্যবহৃত ও পতিত পড়ে থাকে। কিছু বসতবাড়িতে অপরিকল্পিতভাবে শাকসবজি আবাদ করা হয়। প্রকল্পের আওতায় প্রত্যেকটি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বসতবাড়ির অব্যবহৃত জমিতে ১০০টি করে অর্থাৎ মোট চার লাখ ৮৮ হাজার সবজি, ফল ও মসলাজাতীয় ফসলের পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপন করা হবে। বসতবাড়ির স্যাঁতস্যাঁতে জমিতে কচুজাতীয় সবজির প্রদর্শনীও স্থাপন করা হবে।
এছাড়াও মাটির স্বাস্থ্যসুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ ফসল উৎপাদনের জন্য ১০০টি কমিউনিটি বেইজড ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদন পিট স্থাপন করা হবে। উৎপাদিত ভার্মিকম্পোস্ট নিরাপদ ফসল উৎপাদনে ব্যবহৃত হবে এবং গ্রামীণ কৃষক-কৃষাণিদের আয়বর্ধক কাজে সম্পৃক্ত করা সম্ভব হবে। এছাড়া কৃষক-কৃষাণিদের প্রশিক্ষণ ও কৃষক গ্রুপ পর্যায়ে ক্ষুদ্র কৃষি যন্ত্রপাতি প্রদান করা হবে। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের আওতায় সবজি সংরক্ষণের জন্য ক্ষুদ্র আকারে দেশজ পদ্ধতির বিদ্যুৎবিহীন ৬৪টি কুল চেম্বার স্থাপন করা হয়েছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে পারিবারিক পর্যায়ে নিরাপদ মানসম্মত শাকসবজি, মসলা এবং মৌসুমি ফল উৎপাদনে সহায়ক হবে। উৎপাদিত ফসল দ্বারা পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কৃষক-কৃষাণীর আয়বৃদ্ধি পাবে। কমিউনিটি বেইজড ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদনের মাধ্যমে কৃষক কৃষাণিদের আয়বর্ধক কাজে সম্পৃক্তকরণ করে গ্রামীণ পর্যায়ে কৃষকদের দক্ষ জনগোষ্ঠীতে রূপান্তরে সহায়তা করবে।