উর্বর ভূমি সংরক্ষণের পাশাপাশি সবুজ অর্থনীতি ও টেকসই ভবিষ্যত গড়তে ২০৩০ সালের মধ্যে ভূমির অবক্ষয় শুন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে সরকার। UN Convention to Combat Desertification-এ স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে এসকল কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) ‘অবক্ষয়িত ভূমিকে স্বাস্থ্যকর ভূমিতে রূপান্তর’ প্রতিপাদ্যে ‘বিশ্ব মরুকরণ ও খরা দিবস ২০২১’ উদযাপন উপলক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরে আয়োজিত সেমিনারে সরকারি বাসভবন হতে ভার্চুয়ালী যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, সরকার মরুকরণ ও খরা প্রতিরোধে পানির অপ্রাপ্যতা, বন উজাড়, ভূমিক্ষয় এবং পরিবেশের ওপর মানুষের অপরিকল্পিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে নিরলসভাবে কাজ করছে । মন্ত্রী এসময় ভূমির অবক্ষয় রোধে ইট ভাটায় সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করার উদ্যোগ নেয়ার কথা উল্লেখ করেন। তিনি জানান, ২০২৫ সালের পরে সরকারী কাজে মাটির তৈরী ইট ব্যবহার করা যাবে না।
মন্ত্রী বলেন, সরকার গত বছর সাড়ে আট কোটি গাছ রোপণ করেছে এবং এবছর ও আট কোটি গাছ রোপণ করবে। যেকোনো প্রয়োজনে ১ টি গাছ কাটা হলে ৫ টি গাছ লাগানোর নীতি বাস্তবায়ন করা হবে। এসকল উদ্যোগ ভূমির ক্ষয়রোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, টেকসই উন্নয়নের সাথে সামঞ্জস্য রেখে একটি ভূমি অবক্ষয়-নিরপেক্ষ বিশ্ব অর্জন কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাংলাদেশ একটি সক্রিয় অংশীদার। মরুকরণ ও মৃত্তিকা অবক্ষয় রোধ করে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা ও গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ বাড়বে; ফলে কৃষকের আয় বৃদ্ধির পথ প্রসারিত হবে। এ কার্যক্রম জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলিকেও প্রশমিত করতে সহায়ক।
মন্ত্রী তার বক্তব্যে খরা প্রতিরোধে বনায়ন ও পুনঃবনায়নের ওপর জোর দেন এবং খরা এলাকায় পানি সংরক্ষণাগার স্থাপন করে সেচের ব্যবস্থা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ত সহিষ্ণু ফসলের জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও প্রয়োগ করে উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যবস্থা করার ব্যপারে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি বাংলাদেশে নদীর উজানের পানির প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার বিষয়ে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সহযোগিতার বিষয়ে আলোকপাত করেন।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, সরকার ভূমি অবক্ষয়, মরুকরণ এবং খরা মোকাবিলায় National Action Progamme for Combating Desertification, Land Degradation and Drought 2015-2024 বাস্তবায়ন করছে।
জাতিসংঘের SDG 15 এর টার্গেট ১৫.৩ ভূমির অবক্ষয় নিরপেক্ষতা ২০৩০ সালের মধ্যে অর্জনের জন্য বাংলাদেশ সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। ভূমি অবক্ষয় রোধে জাতীয় রোডম্যাপ তৈরী করা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও ঝুঁকি মোকাবেলায় জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের আওতায় কার্যক্রম এবং খরা ও ভূমিক্ষয় রোধে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
সভাপতির বক্তব্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, দেশে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১ শতাংশ হারে আবাদী জমি অকৃষি কাজে ব্যবহারের জন্য চলে যাচ্ছে। ভূমিক্ষয়, লবনাক্ততা, মাটির অম্লতাবৃদ্ধি, মাটির পুষ্টি উপাদান হ্রাস, ভারী ধাতু দূষণ ইত্যাদি বাংলাদেশে ভূমির অবক্ষয়ের কারণগুলির অন্যতম। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জীববৈচিত্র্য, টেকসই কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা, দারিদ্র দূরীকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন, জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবিলা ও পানির সহজলভ্যতা বাড়াতে সুষ্ঠু ভূমি ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অপরিসীম। প্রাকৃতিক বিপযর্য় রোধে সকলের সম্মিলিত উদ্যেগ ও প্রচেষ্টা অত্যন্ত জরুরী।
পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ আশরাফ উদ্দিন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-মন্ত্রী হাবিবুন নাহার ও মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান, এনডিসি। সেমিনারে অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন সাবেক সচিব প্রফেসর ড. জহুরুল করিম, শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট গ্রাজুয়েট স্টাডিজ এর ডিন এবং মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. অলোক কুমার পাল, পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হুমায়ুন কবির, পরিচালক ড. মুঃ সোহরাব আলি, পরিবেশ অধিদপ্তরের এসএলএম প্রকল্পের সমন্বয়ক মোঃ শোয়েব প্রমুখ। এছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও বেসরকারী সংস্থার বিশেষজ্ঞ ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ বক্তব্য রাখেন।