মিষ্টি কুমড়ায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ থাকে। কুমড়া কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থায়ই খাওয়া যায়। তবে এর প্রধান ব্যবহার পাকা অবস্থায়। কুমড়ার পাতা ও কচি ডগা খাওয়া যায়। মিষ্টি কুমড়া পছন্দের একটি সবজি।
মিষ্টি কুমড়া উন্নত জাত
বারি মিষ্টিকুমড়া-১, বারি মিষ্টিকুমড়া-২, সুইট বল, ইয়েলো কার্ড।
মিষ্টি কুমড়া চাষের উত্তম সময়
সারাবছর চাষ করা যায় এই মিষ্টি কুমড়া। শীতকালীন চাষাবাদের জন্য ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্তিক মাসের মাঝামাঝি (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) মাসে বীজ বপন করা হয়।
বৈশাখী কুমড়ার বীজ মাঘ মাস, বর্ষাতি কুমড়ার বীজ বৈশাখ এবং মাঘী কুমড়ার বীজ শ্রাবণ মাসে বপন করতে হয়।
মাদা তৈরি ও সার প্রয়োগ
মিষ্টি কুমড়োর মাদার তৈরির জন্য সাধারণত ৩-৪ মিটার দূরত্বে ৮০-১০০ ঘন সেমি. আকারের গর্ত তৈরি করতে হবে।
প্রতি গর্তে গোবর বা কমপোস্ট ৫ কেজি, ইউরিয়া ১৩০ গ্রাম, টিএসপি ২০০ গ্রাম, এমপি ১৫০ গ্রাম, জিপসাম ৯০ গ্রাম ও জিংক সার ৫ গ্রাম দিতে হবে।
ইউরিয়া ছাড়া অন্যান্য সার বীজ বোনার ৮-১০ দিন আগে গর্তের মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া দুইভাগে বীজ বোনার ১০ দিন পর প্রথমবার ও ৩৫ দিন পর দ্বিতীয়বার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
মাদার চারপাশে অগভীর একটি নালা কেটে সার নালার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
পলিব্যাগে বীজ বপন করতে করনীয়
অর্ধেক মাটি ও অর্ধেক গোবর মিশিয়ে মাটি তৈরি করে নিতে হবে। মাটিতে বীজ গজানোর জন্য “জো” নিশ্চিত করে (মাটিতে “জো” না থাকলে পানি দিয়ে “জো” করে নিতে হবে) তা পলিব্যাগে ভরতে হবে। অতঃপর প্রতি ব্যাগে দুইটি করে বীজ বুনতে হবে। বীজের আকারের দ্বিগুণ মাটির গভীরে বীজ পুঁতে দিতে হবে।
সার প্রয়োগ পদ্ধতি এবং করনীয়
সার | কম উর্বর | মধ্যম উর্বর | বেশি উর্বর |
পচাগোবর/কম্পোষ্ট | ৩২ | ২৪ | ১৬ |
ইউরিয়া | ০.৫২ | ০.৪৪ | ০.৩৬ |
টিএসপি | ০.৮ | ০.৭ | ০.৮ |
এমোপি | ০.৬০ | ০.৫২ | ০.৪৪ |
জিপসাম | ০.৪৪ | ০.৩২ | ০.২৪ |
দস্তা | ০.০৫ | ০.০৩ | ০.০২ |
বোরিক এসিড | ০.০৪ | ০.০৩ | ০.০২ |
ম্যাগনেশিয়াম | ০.০৪ | ০.১ | ০.০৮ |
খৈল | ২.০ | ১.৬ | ১ |
প্রয়োগ পদ্ধতি
মূল জমি তৈরীর সময় জৈব সার, টিএসপি, দস্তা, ম্যাগনেসিয়াম ও বোরিক এসিডের অর্ধেক অংশ প্রয়োগ করতে হবে।
অর্ধেক জৈব সার, টিএসপি, দস্তা, ম্যাগনেসিয়াম ও বোরিক এসিড মাদায় প্রয়োগ করতে হবে।
ইউরিয়া ও এমওপি সমান তিনভাগে ভাগ করে বীজ বপনের সময় প্রথম ভাগ, ১৫-২০ দিন পর দ্বিতীয় ভাগ এবং ৩৫-৪০ দিন পর তৃতীয়ভাগ প্রয়োগ করতে হবে।
কুমড়া লতার পরিচর্যা
আগাছা থাকলে তা পরিষ্কার করে চারা গাছের গোড়ায় কিছুটা মাটি তুলে দিতে হবে। মাঝে মাঝে নিড়ানি দিয়ে গাছের গোড়ার মাটি আলগা করে দিতে হবে।
গোড়ার কাছাকাছি কিছু খড় ১৫-২০ দিন পর বিছিয়ে দিতে হবে। ফল ধরা শুরু করলে ফলের নিচেও খড় বিছিয়ে দিতে হবে।
বৈশাখী কুমড়া মাটিতে হয়, অন্যান্য কুমড়ার জন্য মাচার ব্যবস্থা করতে হয়। গাছের লতাপাতা বেশি হলে কিছু লতাপাতা ছেঁটে দিতে হবে।
কুমড়া লতার রোগবালাই ও দমন
মিষ্টি কুমড়ার মাছি পোকা ক্ষতির ধরণ
এই পোকা মিষ্টি কুমড়ার কচিফল ও ফুলের মধ্যে প্রথমে ডিম পাড়ে। পরবর্তীতে ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে ফল ও ফুলের ভিতর কুরে কুরে খায় যার ফলে ফল ও ফুল পচন ধরে নষ্ট হয়ে যায়। এই পোকার আক্রমণের ফলে প্রায় ৫০-৭০ ভাগ ফল নষ্ট হয়ে যায়।
কুমড়া লতার রোগ দমন ব্যবস্থাপনা
আক্রান্ত ফল সংগ্রহ করে তা নষ্ট করে ফেলতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ। সেক্স ফেরোমন ফাঁদের ব্যবহার
মাছির আক্রমণ থেকে ফসল রৰা করার জন্য বিষটোপ অত্যন্ত কার্যকর।
কুমড়া লতার রেড পামকিন বিটল ক্ষতির ধরণ
পামকিন বিটলের পূর্ণবয়স্কপোকা চারা গাছের পাতায় ফুটো করে এবং পাতার কিনারা থেকে খাওয়া শুরু করে সম্পূর্ণ পাতা খেয়ে ফেলে। এ পোকা ফুল ও কচি ফলেও আক্রমণ করে।
দমন ব্যবস্থাপনা
চারা আক্রান্ত হলে হাত দিয়ে পূর্ণবয়স্ক পোকা ধরে মেরে ফেলে। ক্ষেত সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে।
কুমড়া লতায় জাবপোকা ক্ষতির ধরণ
জাবপোকার আক্রমণে মিষ্টি কুমড়ার বাড়ন্ত ডগা ও পাতা হলুদ হয়ে যায়। গাছ তার সতেজতা হারিয়ে ফেলে এবং ফলন গুরুতর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক জাবপোকা দলবদ্ধভাবে গাছের পাতার রস চুষে খায়। ফলে পাতা বিকৃত হয়ে যায়, বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও প্রায়শ নিচের দিকে কোঁকড়ানো দেখা যায় মেঘলা, কুয়াশাচ্ছন্ন এবং ঠান্ডা আবহাওয়ায় জাবপোকার বংশ বৃদ্ধি বেশি হয়।
প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হলে এদের সংখ্যা কমে যায়।
রোগ দমন ব্যবস্থা
প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত পাতা ও ডগার জাবপোকা হাত দিয়ে পিষে মেরে ফেলা যায়।
নিমবীজের দ্রবণ বা সাবানগোলা পানি সেপ্র করেও এ পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কমে যায়।
বায়োলজিকাল কন্ট্রোল এর মাধ্যমে বন্ধু পোকাসমূহ সংরক্ষণ করলে এ পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কম হয়।
কুমড়া লতায় সাদা গুঁড়া রোগ বা পাউডারি মিলডিউ ক্ষতির লক্ষণ
রোগের প্রারম্ভে গাছের নিচের বয়স্ক পাতায় রোগের লৰণ প্রকাশ পায়। ক্রমশ উপরের পাতায় রোগ ছড়িয়ে পড়ে।
প্রথমে পাতার উপর বিক্ষিপ্ত সাদা সাদা দাগের সৃষ্টি হয়। রোগ বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে দাগ আকারে বড় হতে থাকে এবং হলুদ বর্ণ থেকে বাদামী রঙ ধারণ করে।
রোগের প্রকোপ বেশি হলে গাছের লতা ও কান্ড আক্রান্ত হয়। ধীরে ধীরে সেই লতা ও পরে পুরো গাছই মরে যেতে পারে।
রোগ দমন ব্যবস্থাপনা
রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য লাউ ও কুমড়াজাতীয় আগাছা বিনাশ করতে হবে।
জমির আশে-পাশে কুমড়া জাতীয় যে কোন সবজি চাষ থেকে বিরত থাকা
আগাম চাষ করে রোগের প্রকোপ কমানো যায়।
প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম ইনসাফ/থিয়ভিট বা সালফোলাঙ/কুমুলাস অথবা ১০ গ্রাম ক্যালিঙিন ১৫ দিন পর পর সেপ্র করে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা।
কুমড়া লতার ডাউনি মিলডিউর ক্ষতির লক্ষণ
ডাউনি মিল ডিউ রোগ শুধু পাতায় হয়। আক্রান্ত পাতায় নানা আকারের দাগ পড়ে। সাধারণত দাগগুলি কোণাকৃতি ও হলদে হয়। দাগগুলি খুব তাড়াতাড়ি সংখ্যায় বৃদ্ধি পায় ও আকারে বড়ো হয়।
পাতার নিচে দিকে দাগের উপরে বেগুনি রংয়ের ছত্রাক জন্মে।
রোগ দমন ব্যবস্থাপনা
রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য লাউ ও কুমড়াজাতীয় আগাছা বিনাশ করতে হবে।
জমির আশেপাশে কুমড়া জাতীয় যে কোনো সবজি চাষ থেকে বিরত থাকা।
আগাম চাষ করে রোগের প্রকোপ কমানো যায়।
সতর্কতা
বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যবহারের আগে বোতল বা প্যাকেটের গায়ের লেবেল ভালো করে পড়ুন এবং নির্দেশাবলি মেনে চলুন।
ব্যবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুন। ব্যবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবে না।
বালাইনাশক ছিটানো জমির পানি যাতে মুক্ত জলাশয়ে না মেশে তা লক্ষ্য রাখুন। বালাইনাশক প্রয়োগ করা জমির ফসল কমপক্ষে সাত থেকে ১৫ দিন পর বাজারজাত করুন।
বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যাবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুন। ব্যবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবে না।
ফসল এবং ফলন
মিষ্টি কুমড়া জাত ভেদে শতক প্রতি ফলন ১২০ – ২০০ কেজি।
কুমড়া সংরক্ষন
মিষ্টি কুমড়া সংরক্ষনের জন্য ঠান্ডা ও বাতাস চলাচল করা জায়গা বেছে নিতে হবে । বীজ বেশিদিন সংরক্ষণ করতে চাইলে নিমের তেল মিশিয়ে রাখতে পারেন। কিছুদিন পর পর বীজ হালকা রোদে শুকিয়ে নিবেন।
Osman Goni
March 8, 2023 at 9:53 pmmisti kumra chaser sajano information. Dhonnobad!!