ভূট্টার জমিতে ঝিঙের ফলন হয়েছে একইসাথে। গাছ থেকে ভুট্টা তোলা শেষ হয়েছে। সেই ভূট্টার সবুজ পাতার ফাঁকে হলদে ফুল দেখা যাচ্ছে। হলদে ফুলের মাঝে জড়িয়ে আছে ঝিঙে আর ঝিঙে। এমনটা দেখা গেছে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলায়।
উপজেলার লেহেম্বা ইউনিয়নের বিরাশি গ্রামের বাসিন্দা আকবর আলী।
তার ঝিঙে খেতে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
ফসল তোলার পর জমিতে দাঁড়িয়ে থাকে ভুট্টা গাছের ডাঁটা।
এই ডাটাকেই খুঁটি হিসেবে ব্যবহার করে ঝিঙে চাষ করছেন আকবর আলী।
এতে ভুট্টা আর আগাম আলুর মাঝখানে আরও বাড়তি ফসল পেয়েছেন তিনি।
তবে কৃষক আকবর আলী একমাত্র নন।
একই অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামের বেশ অনেক কৃষক এই পদ্ধতিতে ঝিঙে চাষ শুরু করেছেন।
যার ফলে তাঁদের বাড়তি আয়ও হচ্ছে ভালো।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এই উপজেলায় ব্যাপক ভুট্টার চাষ হয়।
খেত থেকে ভুট্টা তোলার পরপরই আগাম আলু চাষের ব্যস্ততা শুরু হয়।
এর আগে এসকল জমি এমনিই পরে থাকতো।
ভূট্ট এবং আগাম আলুর মাঝের সময়টা খুবই অল্প।
এই সময়টাতে অন্য কোনো ফসল চাষের সুযোগ না থাকায় চাষিরা জমি ফেলে রাখতেন।
তবে এখন সেই সকল জমিতে ঝিঙে চাষ করে বাড়তি আয় করছেন চাষিরা।
ভুট্টার গাছ খুব দ্রুত বাড়ে।
জমিতে বীজ বপনের এক মাসের মধ্যেই গাছগুলো বেড়ে ওঠে।
গাছগুলো বেড়ে উঠলে সেগুলোর গোড়ায় ঝিঙের বীজ বপন করে দেয়া হয়।
গাছগুলোর দূরত্ব হয় সাত থেকে আট ফুট দূরত্বে।
ঝিঙে লতাগুলো ভুট্টার ডাঁটা জড়িয়ে জড়িয়ে বেড়ে উঠতে থাকে।
ভুট্টার ফল তোলার উপযোগী হতে হতে ঝিঙে গাছে ফুল আসতে শুরু হয়।
ভুট্টার মোচা ভেঙে নিলে খেতে ভুট্টার ডাঁটা পড়ে থাকে।
ঝিঙে লতা সেই ডাটাকে জড়িয়ে থাকে।
কিছু দিনের মধ্যেই লতায় ভরে ওঠে ফুল-ফলে।
এরপর ঝিঙের ফলন তুলে চাষিরা বাজারে বিক্রি করেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় জানায়, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ৬০ হেক্টর জমিতে এভাবে চাষ করা হয়।
প্রায় দুই শতাধিক চাষি এখন এ পদ্ধতিতে ঝিঙের চাষ করছেন।
এখান থেকে সপ্তাহে ৩৫০ থেকে ৪০০ মণ ঝিঙের ফলন পাওয়া যাচ্ছে।
কৃষকরা জানান, ভুট্টার সাথি ফসল হিসেবে ঝিঙে আবাদ করা হয়।
যার ফলে একই খরচে দুটি ফসল পাওয়া যাচ্ছে প্রায় একই সময়।
এই পদ্ধতিতে ঝিঙে চাষে আলাদা কোনো খরচ লাগে না।
এতে পারিবারিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাজারে বিক্রি করে বেশ ভাল আয় হচ্ছে।
রানীশংকৈল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ।
তিনি বলেন, ভুট্টার ডাঁটা ঝিঙের খুঁটি হিসেবে ব্যবহার এর মাধ্যমে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন।
কৃষি বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শসহ সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন বলেও তিনি জানান।