এগ্রোবিডিঃ কৃষি প্রধান দেশে অর্থনীতির চাকা কৃষি আর বেচে থাকার অবলম্বন। কৃষিই আমাদের মূল চালিকা শক্তি। কিন্তু কৃষির সৌন্দর্যের কথা সচরাচর কাউকে বলতে শোনা যায় না। অথচ আমাদের শখ, ঘর সাজানো সবই কিন্তু কৃষির উপকরনের মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি হয়। যেমন ধরুন আমরা টবে যে ফুল গাছ লাগাই সেটাও কিন্তু কৃষি থেকেই আগত। ছাদ কৃষি বলুন বা বাগিচা কৃষিই বলুন মূলত কৃষি আমাদের যতটা সুন্দর করে তোলে তা আর কৃত্তিমভাবে সম্ভব নয়।
তেমনি সৌন্দর্যের খোজ পাওয়া গেল চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায়। উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নের দক্ষিণ পুটিবিলা গ্রামের তেলি পাড়া বাসিন্দা আ.স.ম. দিদারুল আলমের সাথে দীর্ঘদিনের পরিচয় হলেও কখনো যাওয়া হয়নি তার কর্মক্ষেত্রে। অথচ আধুনিক কৃষিতে বিশ্বাসী এ মানুষ সূচনা করছে নতুন সম্ভাবনার।
আ.স.ম দিদারুল আলম মূলত ছিলেন একজন প্রবাসী। দীর্ঘদিন সৌদি আরবে তিনি কর্মরত ছিলেন। ২০১৮ সালে পুরোপুরি ভাবে চলে আসেন বাংলাদেশে। নিজ গ্রামে ফিরে এসে ভাবতে থাকেন কিছু একটা করা দরকার। দারুন সাংগঠনিক দক্ষতা ও কর্মক্ষমতার গুণে স্থানীয় সি. এন. জি চালকদের নিয়ে শুরু করেন সি.এন.জি মালিক-চালক সমিতি। কিন্তু মন ভরছিল না তাতে, খুজছিলেন এমন কিছু যাতে ভরে মন। তাই শুরু করে দিলেন চাষাবাদ। অনেক জমি ও পাহাড়ে নিজের জায়গা থাকায় পরিকল্পনা শুরু করেন। তারপরই নেমে পড়েন কাজে।
গত সোমবার পুটিবিলা গ্রামে গিয়ে দেখা হয় দিদারুল আলমের সাথে। হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানিয়ে আপ্যায়ন করলেন। জানালেন তার পরিকল্পনা দেখতে যাওয়ায় খুব খুশি তিনি। তেলিপাড়ার পার্শ্ববর্তী মাটির রাস্তা দিয়ে আমার সহযোগী সহ তিনজন হেটে চললাম। পাহাড়ি লাল মাটির কর্দমাক্ত দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে আমরা পৌছাই তার কৃষি এলাকায়, “দিদার এগ্রো ফার্ম” এ।
ছোট পাহাড়ের আয়তন সর্বমোট সাড়ে তিন একর। চারিদিকে করা হয়েছে পেঁপের বাগান। পাহাড়ের ওপরের অংশেও করা হয়েছে পেঁপের বাগান। পাশে করা হয়েছে চারা গাছের নার্সারি। এর ঠিক উল্টো দিকেই রয়েছে লেয়ার মুরগীর খামার। খামারের শেডের আয়তন প্রায় ৩০০০ বর্গফুট। যেখানে রয়েছে প্রায় ৭৫ হাজার টাকার মুরগীর বাচ্চা। একই সাথে খানিকটা ছোট করে রয়েছে কবুতরের খামার।
দিদারুল আলম জানান যে, বর্তমানে পেঁপে গাছের পাতা হলুদ হয়ে যাওয়া রোগের কারণে তিনি চিন্তিত। তবে স্থানীয় কৃষি অফিসার তাকে পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করছেন। তিনি বলেন, “এই এগ্রো ফার্ম এর সাথে সাথে এটিকে একটি কৃষি সংশ্লিষ্ট পার্ক হিসেবে গড়ে তুলব। মানুষ একই সাথে এখানে এসে ঘুরতে পারবে, এবং সেই সাথে কৃষি কাজও হবে। অর্থাৎ আমার খামার দেখার মত করে সুন্দর হবে।” চারদিকে ঘুরে দেখা যায় যে তিনি খুব ভাল নিষ্কাশন ব্যবস্থা রেখেছেন। একই সাথে পার্শ্ববর্তী জমিতে তিনি তৈরি করছেন মাছের খামার, সেই সাথে প্রায় ৩ একর জমিতে তিনি ধান চাষ করছেন।
তার ভাষ্যমতে, “ভাই অনেক বছর দেশের বাইরে ছিলাম, ইনকামও করেছি। কিন্তু যে শান্তি দেশে এসে এই চাষবাস করে পাই, তা সেখানে পাইনি। তাই নিজের জমি-জমাগুলোকে ফেলে না রেখে সেগুলোতে চাষাবাদ করছি।” একই সাথে তিনি বিস্তারিত ভাবে জানালেন তার সকল পরিকল্পনা, দেখালেন পাহাড়ের কিছু অংশে লাগানো মোসাম্বির চারা, কিছু ঔষধি গাছ।
দিদারুল আলমের এই উদ্যোগ এর অনেক প্রশংসা করেছেন স্থানীয় লোকজন। স্থানীয় ব্যাংক এশিয়া এজেন্ট ব্যাংকিং এর এজেন্ট মামুনুল ইসলাম বলেন, “দিদার ভাই অনেক একটিভ মানুষ। সঠিকভাবে পরিকল্পনা করে তিনি তার জমিগুলোতে চাষাবাদ করছেন। এতে স্থানীয় অনেকেরই এই দুর্যোগকালীন সময়ে কর্মসংস্থান হচ্ছে।”
আ.স.ম দিদারুল আলমের উদ্যোগ এলাকায় সূচনা করেছে নতুন এক সম্ভাবনার। সেই সাথে সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছে তার চাষাবাদ এর আধুনিক ধরণ।
কি নাম দেবো ?
July 23, 2020 at 10:49 pmএভাবেই এগিয়ে যাবে দেশ । আমাদের জন্য অনুপ্রেরনা এগুলো যা কিনা সামনে এগিয়ে যেতে অনেক টা মানসিক শক্তি যোগায় মনের ভিতরে । সফলতার ছোট ছোট গল্পগুলো বেরিয়ে আসুক আমাদের মাঝে, শুভ কামনা রইলো ।