
সাধারণত নরসিংদীতে আখ চাষ খুব বেশি হয় না। তবে সেই ধারণা পাল্টে দিয়েছেন দুই কৃষি উদ্যোক্তা— মহসিন ও মারুফ। ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ চাষ করে তাঁরা শুধু সফলই হননি, কৃষকদের জন্য সম্ভাবনার এক নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছেন। মাত্র একটি চারা দিয়ে শুরু করে তাঁরা এখন বাণিজ্যিকভাবে এই আখ চাষ করছেন, যা দেখে স্থানীয় কৃষকেরা এই লাভজনক চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
আখ চাষে দ্বিগুণ লাভ, কৃষকদের মুখে হাসি
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর নরসিংদীতে ১৮২ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই চিবিয়ে খাওয়ার আখ। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এবার ফলন হয়েছে বাম্পার, আর বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকেরাও বেশ খুশি।
শিবপুরের মুনশেফের চরের কৃষক মহসিন ২ বিঘা জমিতে ফিলিপাইনের কালো আখ চাষ করে গত বছর ১ লাখ টাকা খরচ করে প্রায় ৩ লাখ টাকা আয় করেন। এই বছরও তাঁর জমিতে বাম্পার ফলন হয়েছে এবং তিনি ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন।
শখ থেকে বাণিজ্যিক সাফল্য: তরুণ উদ্যোক্তা মারুফ
শিবপুরেরই আরেক তরুণ মারুফ হাসান মুরাদ। শখের বশে ৩ বছর আগে বাড়ির আঙিনায় ফিলিপাইনের কালো জাতের একটি আখের চারা রোপণ করেন। আখটি নরম, রসালো ও সুমিষ্ট হওয়ায় তিনি মুগ্ধ হন এবং বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার পরিকল্পনা করেন। প্রথমে বাড়ির আঙিনায় চারা তৈরি করেন, এরপর জমিতে চাষ শুরু করেন। দীর্ঘ ৩ বছরের প্রচেষ্টায় তিনি একজন সফল আখ চাষি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং আর্থিক দিক থেকেও স্বাবলম্বী হয়েছেন। এখন তিনি নরসিংদীসহ আশেপাশের জেলার কৃষকদের এই নতুন জাতের আখ চাষের বিষয়ে পরামর্শ ও চারা দিয়ে সহযোগিতা করছেন।
চাহিদা বেশি, লাভও বেশি
স্থানীয় পাইকারি আখ বিক্রেতা ওমর ফারুক জানান, বাজারে এই জাতের আখের চাহিদা ব্যাপক। কারণ, এটি আকারে মোটা, লম্বা এবং খুবই রসালো। তিনি বলেন, “প্রতি পিস আখ ৬০ টাকা দরে কিনে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করি। এতে বেশ ভালো লাভ হয়।”
স্থানীয়রা বলছেন, মারুফের আখ চাষ এলাকার মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ তাঁর আখের ক্ষেত দেখতে আসেন। মারুফ আখ ও আখের চারা বিক্রি করে এখন আর্থিকভাবে খুবই সফল।
কৃষি বিভাগের প্রত্যাশা: ফিলিপাইনের কালো আখ ছড়িয়ে পড়ুক সারাদেশে
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ড. মুহাম্মদ আবদুল হাই বলেন, “ফিলিপাইনের এই কালো আখ রোগবালাই প্রতিরোধী এবং এটি খেতেও খুব সুস্বাদু। এই আখ চাষ খুবই লাভজনক।” তিনি আরও বলেন, “কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সবসময় কৃষকদের পাশে আছে। বীজ, কীটনাশক, সারসহ সব ধরনের প্রযুক্তিগত পরামর্শ দিয়ে আমরা কৃষকদের সহযোগিতা করি।”
স্থানীয়দের প্রত্যাশা, কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় এই নতুন জাতের আখ চাষ যদি সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তবে তা দেশের কৃষি খাতে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে এবং অনেক কৃষক লাভবান হবেন।