বরিশালকে একসময় বাংলার শস্যভান্ডার বলা হতো। প্রচুর পরিমাণ কৃষিজমি ও আমন ধান উৎপাদনের জন্য এই সুখ্যাতি ছিল। কিন্তু আমন তোলার পর বছরের বাকি সময় জমি পতিত থাকতো। এ অঞ্চলের কৃষি আমননির্ভর ছিল বিধায় ধানের উৎপাদন বাড়েনি। সেই সাথে কৃষকেরা আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তির ব্যাপারেও অনাগ্রহী ছিল। তারপরেও বিভিন্ন রকম দূর্যোগের ফলে তারা বিপর্যস্ত ছিলেন। তবে সে অবস্থা কাটিয়ে উঠেছেন তারা, করছেন প্রযুক্তির ব্যবহার। আর ফিরে আসছে হারানো সুখ্যাতি, জেলা হয়ে উঠছে আবার শস্য ভান্ডার।
বিভিন্ন বিপর্যয় ঠেকিয়ে মাথা তুলে দাঁড়ান কৃষকেরা।
নিজেদের উদ্যোগেই পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে নতুন নতুন কৌশল প্রয়োগে উদ্যোগী হন।
আমন ছাড়াও, জমির বহুমুখী ব্যবহার শুরু করেন তারা।
প্রথমে আউশ আবাদের ব্যাপক বিস্তৃতির মধ্য দিয়ে শুরু।
পরবর্তীতে সম্প্রসারণ হয় বোরো এবং অন্যান্য ফসল উৎপাদন।
বরিশাল বিভাগে এবার সব মিলিয়ে সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন অতিরিক্ত চাল উৎপাদিত হয়েছে।
গত অর্থবছরে (২০১৯-২০) সব মিলিয়ে চাল উৎপাদিত হয়েছিল ২৮ লাখ মেট্রিক টন।
৯৭ লাখ ১৪ হাজার ৫৬ জনসংখ্যা অধ্যুষিত বরিশাল বিভাগ।
বর্তমানে বিভাগের খাদ্যের চাহিদা ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ১৬৮ মেট্রিক টন।
এবার ১৫ লাখ মেট্রিক টনের বেশি খাদ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে বিভাগে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ অঞ্চলের কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম, প্রযুক্তিকে গ্রহণ এবং জমির বহুমুখী ব্যবহারের কারণে এ সফলতা।
চাল উৎপাদনের পাশাপাশি চলতি মৌসুমে ২ লাখ মেট্রিক টনের বেশি গমও উৎপাদিত হয়েছে।
এটি খাদ্য উৎপাদনে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) চলতি বছরের গত ৫ মে ‘নিউ গ্লোবাল রিপোর্ট অন ফুড ক্রাইসিস’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিবেদন অনুসারে ২০২০ সালে ৫৫টি দেশের সাড়ে ১৫ কোটি জনসংখ্যা তীব্র খাদ্যসংকটে পড়ে।
এর মধ্যে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে খাদ্য উৎপাদন ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে।
এতে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার পথ সুগম হয়েছে।
বরিশাল অঞ্চলে আগে বোরো আবাদ খুবই সীমিত হলেও গত কয়েক বছরে বোরোর আবাদ ব্যাপক বেড়েছে।
বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর হিসাব মতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিভাগে বোরো উৎপাদন হয়েছিল ৫,৪১,৭৫৪ মেট্রিক টন।
২০২০-২১ অর্থবছরে বোরো চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ লাখ মেট্রিক টন।
কিন্তু উৎপাদন হয়েছে ৭ লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন চাল।
বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই বিভাগে প্রায় ২৭ লাখ মেট্রিক টন চালের উৎপাদন হয়।
২০১৯-২০ অর্থবছরে ধারাবাহিক ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের কারণে আমনে বেশ ক্ষতি হয়।
কিন্তু তবুও আগের বছরের চেয়ে উৎপাদন ১ লাখ মেট্রিক টন বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিভাগে প্রায় ২৮ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়েছিল।
আর ২০২০-২১ অর্থবছরে সেই উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৩১ লাখ ৬৪ হাজার ৫৬৫ মেট্রিক টন।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের বরিশালের অতিরিক্ত পরিচালক মো. তাওফিকুল আলম।
তিনি বলেন, বাংলার শস্যভান্ডার হিসেবে বরিশালের পুরোনো খ্যাতি আবার ফিরতে শুরু করেছে।
নানা প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।
তবুও প্রতিবছর এই বিভাগে চাল ও অন্য শস্যের উৎপাদন বেড়েই চলেছে।