
দিনাজপুরে প্রতি বছরই কলার আবাদ বাড়ছে, আর ফলনও হচ্ছে বাম্পার। এতে একদিকে যেমন ভালো ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে, তেমনই ভালো দাম পাওয়ায় তারা বেশ লাভবান হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, কলা বিক্রিতে তাদের ভোগান্তিও কমেছে। বর্তমানে কলা ব্যবসায়ীরা সরাসরি ক্ষেত থেকেই কলা কিনে ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছেন। প্রতিদিন কোটি টাকার কাঁচা কলা বিক্রি হচ্ছে, যার মধ্যে শুধুমাত্র হাটেই প্রায় ৭০-৮০ লাখ টাকার কলা কেনাবেচা হয়। বাকি ৩০ লাখ টাকার কলা ব্যবসায়ীরা সরাসরি বাগান থেকে কিনে নিয়ে যান।
কলা চাষের চিত্র ও প্রধান জাতসমূহ
দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলার মধ্যে সদর, বীরগঞ্জ, চিরিরবন্দর, কাহারোল এবং বিরল উপজেলায় ৬৫-৭০% কলা চাষ হয়। শ্রাবণ মাসের শেষ থেকে আশ্বিনের শেষ পর্যন্ত তিন মাস ধরে চলে কলা সংগ্রহের কাজ। এ সময়ে কাহারোল উপজেলার দশমাইল মোড়ে বসে উত্তরাঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম কলার হাট। নীলফামারী, পঞ্চগড় এবং ঠাকুরগাঁও থেকেও কৃষকরা এখানে কলা নিয়ে আসেন। ঢাকা ও দেশের অন্যান্য জেলার পাইকাররা ভোর থেকে রাত পর্যন্ত এই হাটে এসে কলা কেনেন। ট্রাক বোঝাই হয়ে এসব কলা চলে যায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন শহরে। এই হাটে মেহেরসাগর, মালভোগ ও চিনিচাম্পাসহ বিভিন্ন জাতের কলা পাওয়া যায়। এর মধ্যে মেহেরসাগর কলার খ্যাতি দেশজুড়ে।
কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ও লাভজনক চাষ
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর জেলায় ১ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ২৫০ হেক্টর বেশি। কৃষকরা জানান, অন্যান্য ফসলের তুলনায় কলা চাষে খরচ কম, কিন্তু লাভ বেশি। তাই তারা নিয়মিত কলা চাষ করেন। দশমাইল কলার হাটের ইজারাদার জানান, মৌসুমে প্রতিদিন প্রায় ৭০-৮০ লাখ টাকার কলা বিক্রি হয়। প্রতিদিন ১৬ থেকে ২০টি বড় ট্রাক বোঝাই হয়ে কলা দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। একটি বড় ট্রাকে ৭০০ এবং ছোট ট্রাকে ৪৫০ কলার কাঁদি ধরে।
চাষি ও ব্যবসায়ীদের অভিজ্ঞতা
কাহারোল উপজেলার নয়াবাদ গ্রামের কলাচাষি আবুল হোসেন জানান, তিনি ৪৮ শতক জমিতে কলা চাষ করে দশমাইল হাটে ১০০ কলার কাঁদি ৬২ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। আরেক কৃষক সাদেক আলী বলেন, সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে কলার ফলন ভালো হয়েছে এবং প্রতিটি কাঁদি ৬০০ টাকা দরে বিক্রি করে তিনি এবার ৫ লাখ টাকার বেশি আয় করার আশা করছেন। ঢাকা থেকে আসা ব্যবসায়ী বাবুল হোসেন তালুকদার জানান, ভালো মানের কলার দামও বেশি। গত বছর যে কলার কাঁদি ৪৫০-৫০০ টাকায় কিনেছিলেন, এবার তা ৬০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। ফেনীর ব্যবসায়ী মো. জালাল উদ্দীন বলেন, “এক মাস আগে দাম আরও বেশি ছিল। এখন জোগান বাড়ায় কিছুটা কমেছে, তবে ফলন ভালো হওয়ায় চাষিরা বেশ লাভবান হচ্ছেন।”
দশমাইল কলার হাটের শ্রমিক এরশাদুল জানান, প্রতিদিন ট্রাক বোঝাইয়ের কাজ করে একজন শ্রমিক হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন। এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, “কলা একটি লাভজনক ফসল। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে উন্নত জাতের কলা চাষে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ বছর ফলন ও দাম দুটোই ভালো হওয়ায় কৃষকরা খুবই খুশি।”