ভোলা সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ও রাজাপুর ইউনিয়নের সীমানায় প্রবহমান টাঙ্গির খাল। দুজন জনপ্রতিনিধিসহ ছয় ব্যক্তি টাঙির খালে মাছ চাষ করছেন আড়াআড়িভাবে বাঁধ দিয়ে। যার কারণে বর্ষাকালে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। অন্যদিকে শীত মৌসুমে পানির সংকট দেখা দিচ্ছে। স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ করেন, ওই এলাকায় ১০ থেকে ১২ বছর ধরে ২০০ একর জমিতে বোরো ধান আবাদ বন্ধ হয়ে গেছে। বাঁধ দিয়ে টাঙির খালে মাছ চাষ যার প্রধান কারণ।
পশ্চিম ইলিশা ও রাজাপুর দুই ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম সরেজমিনে ঘুরে ঘুরে দেখা যায় টাঙির খালে মাছ চাষ হচ্ছে।
খাল দখল করে রেখেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা
তেঁতুলিয়া নদী থেকে উঠে আসা টাঙ্গির খাল।
এটি পরে ইলিশা নদী ও দারোগার খালের সঙ্গে মিলিত হয়েছে।
টাঙ্গির খাল ছাড়াও সেখানে আরও কিছু খাল রয়েছে।
যেমন হুজুখালী, কাটাখালী, কয়লাখালি, বোয়ালখালী, ভারানির খাল, তহশিলদারের খাল, জোড় খাল ও জালুবয়াতির খাল ইত্যাদি।
ইলিশা নদীতেএসব খালের অনেকাংশ ভেঙে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বাঁধ দিয়ে এর মধ্যে কিছু অংশ আটকে দিয়েছে।
আর স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কিছু খাল দখল করেছেন।
তবে সবচেয়ে বেশি দখল হয়েছে রাজাপুর ইউনিয়নে।
খালের মাঝের অংশে বাঁধ দিয়ে রাস্তা বানানো হয়েছে।
তবে দুই বাঁধের মাঝখানের বদ্ধ জলাশয়টি কোনো না কোনো প্রভাশালীর দখলে।
অভিযোগ রয়েছে মাছ চাষে গুটি কয়েক ব্যক্তি লাভবান হচ্ছেন।
কিন্তু খালের আশপাশের কৃষক বা জেলেরা এতে প্রচুর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
স্থানীয় ৮-১০ জন কৃষক ও জেলের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়।
তারা জানান ১০-১২ বছর আগে স্থানীয় লোকজন এই খালে মাছ ধরতেন।
কৃষকরা জানান যে, আশপাশের এলাকায় এ খালের পানি দিয়ে বোরো ধানের আবাদ হতো।
খালের তীরে সেসময় পাঁচ-ছয়টি পাম্প বসিয়ে নিয়মিত বোরো ধানের আবাদ করতেন কৃষকেরা।
কিন্তু একসময়ের প্রবহমান খালটি প্রভাবশালীদের দখলের কারণে বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়েছে।
যার ফলশ্রুতিতে বন্ধ হয়ে গেছে বোরো আবাদ।
খালের আশপাশের বাসিন্দারা বর্ষাকাল এলেই জলাবদ্ধতার কবলে পড়েন।
এতে প্লাবিত হয়ে মাছ ভেসে যাচ্ছে আশপাশের পুকুর, মাছের ঘের।
স্থানীয় সূত্র মারফত জানা যায়, দখল করা আড়াই কিলোমিটার অংশে তিন দফায় খাল খনন করা হয়েছে।
‘জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি’ প্রকল্পের টাকায় খনন করা হয় খাল।
বাঁধ দেবার কারণে কারও কোন সমস্যা হচ্ছে না: ইউপি মেম্বার
কাগজে-কলমে এ প্রকল্পের সুবিধাভোগী আছেন ৪০ জন থাকলেও মাত্র গুটি কয়েক মানুষ িএর সুবিধা ভোগ করেন।
বিশেষ করে পশ্চিম ইলিশার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুল খালেক, রাজাপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মিলন ও তাঁদের কয়েকজন সহযোগী এ প্রকল্প থেকে সুবিধা পাচ্ছেন।
অভিযোগের বিষয়ে আব্দুল খালেক এর সাথে কথা হয়।
তিনি বলেন, খামারের ভাগ পাচ্ছেন ৪০ জন উপকারভোগীই।
বাঁধ দেয়ায় কারও কোন সমস্য হচ্ছে না দাবি করে তিনি জানান যে এতে খালপাড় স্থায়ী হচ্ছে।
রাজাপুর ইউনিয়নে কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, ৩টি পাম্পের অধীন প্রায় ১৫০ একরে বোরো আবাদ হতো দখল হয়ে যাওয়া টাঙ্গির খালের রাজাপুর অংশে।
অন্যদিকে কিছু পাম্প বসত পশ্চিম ইলিশার অংশেও।
তিনি জানান যে, সব মিলিয়ে প্রায় ২০০ একর জমিতে বোরো আবাদ হয়।
কিন্তু এখন খালের আশপাশে আর বোরো আবাদ হয় না।
তার মতে, রাজাপুরের দখল ও ভরাট হওয়া খালের অনেকগুলো অংশে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে এখন খনন করে।
সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. জামাল হোসাইন।
তিনি বলেন, কোন সরকারি খাল এককভাবে খনন করতে পারে না মৎস্য বিভাগ।
খাল খননের আগে দরকার হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ভূমি কমিশনারের (এসি ল্যান্ড) অনাপত্তিপত্র বা অনুমোদন।
তার দাবি এ খালও সম্পূর্ণ নিয়ম মেনে খনন করা হয়েছে। এমনকি সেখানে নিয়ম মেনে মাছ চাষ হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
ভোলা সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আলী সুজা।
তিনি বলেন, টাঙ্গির খালে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের ব্যাপারে তিনি শুনেছেন।
এ বিষয়ে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।