Saturday, 27 September, 2025

চট্টগ্রামে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ


চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড উপজেলার কৃষকেরা গ্রীষ্মকালীন হাইব্রিড টমেটো চাষ করে দারুণ সফল হয়েছেন। অসময়ে ভালো দাম পাওয়ায় তাদের মুখে ফুটেছে হাসির ঝিলিক। দুই উপজেলার কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় নতুন এই পদ্ধতিতে টমেটো চাষে কৃষকদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।

সফলতার গল্প: বারি-৮ টমেটোর জাদু

মিরসরাই উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এই উপজেলার কৃষক আব্দুল মান্নানসহ অনেকেই গ্রীষ্মকালীন হাইব্রিড বারি-৮ টমেটো চাষ করে চমকপ্রদ সাফল্য পেয়েছেন। বাজারে এই টমেটো বিক্রি করে তারা প্রত্যাশার চেয়েও ভালো দাম পাচ্ছেন।

আরো পড়ুন
ধানের বাম্পার ফলন: ফুল ফোটার সময় কৃষকের করণীয়

বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য ধান। এ দেশের কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা এই ফসলের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। ধানের ফলন বাড়াতে হলে এর Read more

ঢাকায় শুরু হলো আগ্রোফরেস্ট্রি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা এবং গ্রামীণ জীবিকা উন্নয়নের লক্ষ্যে ঢাকায় শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী আঞ্চলিক বিশেষজ্ঞ বৈঠক। মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫) Read more

সীতাকুণ্ডেও একই চিত্র। এখানকার কৃষি বিভাগ পানি সাশ্রয়ের জন্য ড্রিপ ইরিগেশন পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে বারি-৮ জাতের টমেটো চাষ শুরু করে। এই উদ্যোগে সাড়া দিয়ে নুনাছড়া এলাকার কৃষক মো. আবু তাহের অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছেন।

আবু তাহের জানান, এনজিও ইপসা এবং উপজেলা কৃষি বিভাগের উৎসাহ ও সহযোগিতায় তিনি সম্পূর্ণ নতুন এই পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করেছেন। তার জমিতে পলি শেড দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বিশেষ ঘর, যেখানে সারি সারি টমেটো গাছ লাগানো হয়েছে। ঘরের চারপাশে মশারির নেট দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য ড্রিপ ইরিগেশন পদ্ধতিতে ফোঁটা ফোঁটা পানি সরবরাহ করা হচ্ছে, যা পানির অপচয় রোধেও দারুণ কার্যকর।

আবু তাহের বলেন, “টমেটো চাষে আমার খরচ হয়েছে প্রায় ৬০-৬২ হাজার টাকা। জুন মাসের শেষ থেকে এখন পর্যন্ত আমি ২ লক্ষাধিক টাকার টমেটো বিক্রি করেছি। আরও লক্ষাধিক টাকার টমেটো বিক্রি হবে বলে আশা করছি।”

লাভজনক চাষাবাদ: কৃষি বিভাগের ভূমিকা

কৃষক আব্দুল মান্নান জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে তিনি ৫০ শতক জমিতে এই টমেটো চাষ করেছেন এবং ভালো দাম পাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, “ভালো ফলন পেতে পলিথিন দিয়ে ছাউনি তৈরি করা জরুরি। এতে ফলন ভালো হয় এবং চারার স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিশ্চিত হয়।”

সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, “আমরা ইপসার সহযোগিতায় কৃষক আবু তাহেরকে ড্রিপ ইরিগেশন প্রযুক্তি এবং পলি শেডের ঘর তৈরি করে দিয়েছি। এতে বর্ষার অতি বৃষ্টিতেও তার ফসল নষ্ট হয়নি।” তিনি আরও জানান, এই সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে ভবিষ্যতে আরও বেশি কৃষককে এই পদ্ধতিতে চাষাবাদে উৎসাহিত করা হবে।

মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, “মিরসরাই গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষের জন্য খুবই উপযোগী। গ্রীষ্মকালে টমেটো চাষ বেশ লাভজনক, তাই আমরা কৃষকদের এই চাষে উৎসাহিত করছি।”

বারি-৮ জাতের টমেটো একটি উচ্চ তাপসহিষ্ণু এবং উচ্চ ফলনশীল গ্রীষ্মকালীন জাত। প্রতিটি গাছে গড়ে ৪০-৪৫টি ফল ধরে, যার ওজন ৬০-৬৫ গ্রাম। এই টমেটোর রঙ আকর্ষণীয় লাল এবং শাঁস বেশ পুরু।

0 comments on “চট্টগ্রামে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক লেখা

আর্কাইভ