
কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আজ (বুধবার) ঘোষণা করেছেন যে, গ্যাসের দাম বাড়লেও এর সঙ্গে সারের দামের কোনো সম্পর্ক নেই। সারের দাম বর্তমানে যা আছে, তা ভবিষ্যতেও স্থিতিশীল থাকবে এবং বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। একই সাথে, কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য তিনি পেঁয়াজ আমদানি না করার সরকারি সিদ্ধান্তের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
কৃষি মন্ত্রণালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি কৃষি খাতের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করেন।
সারের দাম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
কৃষি উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে সার মজুত আছে। সারের দাম না বাড়ার বিষয়ে তিনি নিশ্চিত করে বলেন:
“আপনারা জানেন যে, গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। গ্যাসের দামের সাথে সারের দামের কোনো সম্পর্ক নাই। সারের দাম আগে যা ছিল, এখনো তা আছে এবং ভবিষ্যতেও তা থাকবে। আমরা অন্তত যতদিন আছি।”
তবে কিছু দুর্নীতিবাজ অসৎ উপায়ে সারের দাম বাড়াচ্ছে জানিয়ে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি দেন:
নজরদারি ও ব্যবস্থা: “তারপরও কিছু কিছু দুর্নীতিবাজ বিভিন্ন জায়গায় সারের দাম বাড়ায়। এ জন্য আমি ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছি আমাদের কর্মকর্তারা এটা পুরো নজরদারি করবে। যে কর্মকর্তা নজরদারি করতে ব্যর্থ হবে, তার বিরুদ্ধেও আমরা ব্যবস্থা নেব।”
ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতকরণ: “কৃষক যেন ন্যায্য মূল্য সার পায়, এটার আমরা ব্যবস্থা করব—কোনো অবস্থায় আমাদের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে এক পয়সাও যেন বেশি নিতে না পারে।”
পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ: কৃষকের সুরক্ষা প্রধান লক্ষ্য
পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের অবস্থানের ব্যাখ্যা দেন কৃষি উপদেষ্টা। তিনি উল্লেখ করেন, বাজারে পেঁয়াজের দাম ১২০-১৩০ টাকা পর্যন্ত উঠলেও তা এখন কমে ৯৫ থেকে ১০০ টাকার ভেতরে চলে এসেছে।
আমদানি চাপ উপেক্ষা: “আমাদের কিছু সংখ্যক ব্যবসায়ী পেঁয়াজ আমদানির জন্য আমাদের খুবই চাপ দিয়েছে এবং তারা বিভিন্ন কোর্টেও গেছে, যেন আমরা পেঁয়াজ আমদানি করি। কৃষকদের কথা চিন্তা করে আমরা কিন্তু পেঁয়াজ আমদানি করতে দেই নাই।”
পেঁয়াজের সরবরাহ: গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ এবং মুড়ি কাটা পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে। এছাড়া কৃষকরা এখন পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারছেন। এসব কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
কৃষকের স্বার্থ: উপদেষ্টা মনে করেন, আমদানির চাপ সৃষ্টি করা কুচক্রী মহল আমদানি করলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং তারা চাষের আগ্রহ হারাবে। তিনি বলেন, “এই জন্য আমাদের সব সময় কৃষকদের দিকে তাকাতে হবে। যেহেতু তাদের প্রতিবাদ করার ক্ষমতা ও রকম নাই।”
আলু, আমন ও সবজির বর্তমান অবস্থা
আলু চাষী ক্ষতিগ্রস্ত: “কৃষকরা এবার আলুতে মার খেয়েছে। তারা (আলু চাষি) কিন্তু ও রকম দাম পায় নাই।” তবে ব্যবসায়ীরা লাভবান হয়েছে বলে তিনি জানান। আগাম আলু দেরিতে আসায় পুরোনো আলু ডিসেম্বর পর্যন্ত কোল্ড স্টোরেজে রাখতে কোল্ড স্টোরেজ মালিকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আমনের বাম্পার ফলন: আমনের ফলন খুবই ভালো হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বড় ধরনের সমস্যা না হলে আমন উৎপাদন ‘বাম্পার’ হবে, যা বোরো ধানের উৎপাদনের মতোই প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হতে পারে।
সবজির দাম সহনীয়: সবজির দাম কমতে শুরু করেছে এবং তা সহনীয় পর্যায়ে থাকবে বলে তিনি মনে করেন।
দুর্নীতি নিয়ে সতর্কতা
কৃষি উপদেষ্টা স্বীকার করেন, “আমরা সমাজ থেকে কিন্তু দুর্নীতি কমাতে পারিনি। সত্যি কথা এটা।” তিনি সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ ও টেন্ডারের ক্ষেত্রে দুর্নীতির ব্যাপারে গণমাধ্যমকর্মীদের সতর্ক দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানান।

