করলার লাভজনক চাষ চাষ পদ্ধতি
করলার ইংরেজি নাম Gourd, আমাদের দেশে করলা গ্রীষ্মকালীন সবজি হলেও বর্তমানে করলা বার মাসই বাজারে পাওয়া যায়। করলা একটি রুচিকর ও পুষ্টিকর সবজি। তাছাড়া করলার উপকারিতাও অনেক।
পুষ্টিগুণ, করলা খাওয়ার উপকারিতা
করলা রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রণ, বিটা ক্যারোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ম্যাগনেশিয়াম,পটাশিয়াম, ফলিক এসিড, জিংক ও ফসফরাস ইত্যাদি।
যা শরীরের নানা রকম রোগব্যাধি প্রতিরোধ করে থাকে। নিম্নে করলা লাভজনক চাষ পদ্ধতির নিয়ে আলোচনা করা
হলঃ
কেমন মাটি নির্বাচন করবেন ?
আমাদের দেশে প্রায় সব ধরণের মাটিতে করলা চাষ করা যায়। তবে জৈব পদার্থযুক্ত দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি করলা চাষের জন্য বেশি উপযোগী।
কোন জাতের করলা চাষ বেশি লাভজনক ?
করলা চাষের আগে উত্তম জাতের করলা নির্বাচন করা অতিগুরুত্বপূর্ণ কাজ। আমাদের দেশে করলার বেশ কয়েকটি উচ্চফলনশীল জাত রয়েছে।
এসব জাতের মধ্যে বারি করলা-১ এবং বিএডিসির গজ করলা উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ও হাইব্রিড জাতের মধ্যে রয়েছে। যথা- বুলবুলি, টিয়া,প্যারট, গৌরব, গ্রীন রকেট, হীরক, মানিক, জয় , রাজা, প্রাচী ইত্যাদি।
জমি প্রস্তুত করণ
করলা চাষের জন্য জমি ৪-৫ টি চাষ ও মই দিয়ে উত্তম রূপে জমি প্রস্তুত করতে হবে। এবং জমিতে চাষের পর বড় বড় ঢিলা থাকলে তা ভেঙ্গে মাটি ঝুরঝুরে করতে হবে।
মাদা তৈরী ও বীজের পরিমাণ করলা চাষের জন্য জমিতে বেড বা মাদায় তৈরি করার ৫-৭ আগে জৈব সার মিশিয়ে দিতে হবে। করলার জন্য ১.৫ মিটার দূরে দূরে মাদা তৈরী করতে হবে।
প্রতিটি মাদার সাইজ হবে লম্বা, চওড়া ও গভীরতায় কমপক্ষে ৩০ সেমি। সাধারণত প্রতি শতকে করলা চাষের জন্য ১৫ থেকে ২০গ্রাম বীজ দরকার হয়।
করলা চাষের উপযুক্ত সময়
বীজ বপনের সময় ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস।
কিভাবে করলার বীজ বপন করবেন?
করলার বীজে বপনের পূর্বে ২/১ দিন পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। প্রতিটি মাদায় ৪-৫টি বীজ বপন করতে হবে। তারপর মাদায় সুস্থ সবল ২-৩টি চারা রেখে বাকি চারা তুলে ফেলতে হবে
জমিতে সার প্রয়োগ নিয়ম
করলার জমিতে কম্পোষ্ট সার জমি তৈরীর সময় ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এছাড়াও ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি ও জিংক সালফেট সার দেওয়া যেতে পারে। এই সব সার গুলো মাটির অবস্থা ও গুণাগুণ দেখে পরিমাণ মতো দিতে হবে।
জমিতে সেচ
করলার জমিতে রসের অভাব হলে সেচ দিতে হবে।
কিভাবে করলার জমিতে পরিচর্যা করবেন?
করলা চাষের জমিতে আগাছা দেখা দিলে নিয়মিত আগাছা দমন করতে হবে। করলার চারা ১০-১৫ সেমি লম্বা হলে গাছের গোড়ার কাছাকাছি মাটিতে বাঁশের কঞ্চি পুঁতে দিতে হবে ।
তারপর সুবিধা মতো করে মাচা তৈরি করে দিতে হবে। এবং মাঝে মধ্যে মাটি কুপিয়ে আলগা করে গাছের গোড়ায় মাটি দিয়ে উঁচু করে দিতে হবে।
করলার পোকা দমনে করনীয় কি ?
করলা গাছে তেমন বেশি পোকা-মাকড়ের আক্রমণ হয় না। তবে কিছু পোকা করলা গাছের জন্য খুবই বিপদ জনক। যেমন- ফলের মাছি পোকা, লাল কুমড়া বিটল ও কাঁটালে পোকা। স্ত্রী মাছি পোকা কচি ফলের গায়ে ৩-৫টি ডিম পাড়ে।
ডিম ফুটে পোকার কীড়াগুলো আক্রান্ত ফলে ভিতর ঢুকে এবং ফলের শাঁস খায়। আক্রান্ত ফল অকালে ঝরে পড়ে। লাল
কুমড়া বিটল পূর্ণ বয়স্ক পোকা পাতা ও ফল খেয়ে ফেলে।এসব আক্রান্ত ফল কীড়াসহ সংগ্রহ করে মাটির গভীরে পুতে
দিতে হবে।
এছাড়া এসব পোকা দমনের জন্য জমি সর্বদা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ করতে হবে। এবং বিভিন্ন ধরণের বিষটোপ ব্যবহার করে এসকল পোকা দমন করতে হবে।
রোগবালাই ও প্রতিকার
করলা গাছে পাতার গুচ্ছ রোগ, পাউডারি মিলডিউ ও ডাউনি মিলডিউ রোগ হতে পারে।এসব রোগের কারণে গাছে ফুল ও ফল কম হয়।
গাছ হলদে হয়ে যেতে পারে। গাছের গোড়া পচতে পারে ইত্যাদি। এসকল রোগ দেখা দিলে দ্রুত দমনের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে যোগাযোগ করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ
বীজ বপনের দেড়-দুই মাস পরে গাছে ফল ধরে। ফল ধরার ১২-১৫ দিন পর করলা সংগ্রহ করা যায়। ভাল ফলন হলে হেক্টর প্রতি ১০-১২ টন বা তার অধিক করলার পাওয়া যেতে পারে।