
দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর অবশেষে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলাস্থ রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র (পিএআরএস) বারি-৪ জাতের লাউ চাষে বড় ধরনের সাফল্য লাভ করেছে। যদিও গবেষণা কেন্দ্রটি দীর্ঘদিন ধরে এই জাতের লাউ চাষ করে আসছিল, তবে এবারই প্রথম তারা ব্যাপক আকারে ও সফল ফলন নিশ্চিত করতে পেরেছে।
বিস্তীর্ণ মাচায় লাউয়ের সমাহার
জানা যায়, পাহাড়ে চাষ উপযোগী ফসল ও কৃষিপ্রযুক্তি উদ্ভাবনের লক্ষ্যে ১৯৭৬ সালে কর্ণফুলী নদীর মোহনায় রাইখালী ইউনিয়নে প্রায় ১০০ একর জমিতে এই গবেষণা কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন ফসল নিয়ে নিয়মিত গবেষণা চালায় প্রতিষ্ঠানটি।
সম্প্রতি গবেষণা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের বিস্তীর্ণ এলাকার মাচাজুড়ে শোভা পাচ্ছে বারি-৪ জাতের লাউ গাছ। সারি সারি লাউ ঝুলছে, যা দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি পরিপক্ব।
বারি-৪ লাউয়ের বিশেষত্ব
গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ড. মুহাম্মদ জিয়াউর রহমান জানান, এই জাতের লাউয়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি তাপ সহনশীল এবং সারাবছর চাষ করা যায়। তাই পার্বত্য অঞ্চলে চাষের জন্য এটি একটি অত্যন্ত উপযোগী জাত।
ফলের বৈশিষ্ট্য: লাউগুলো গাঢ় সবুজ রঙের এবং গায়ে সাদাটে দাগ থাকে।
ফলন: প্রতিটি গাছে সাধারণত ১০-১২টি ফল পাওয়া যায়।
ওজন ও আকার: এর গড় ওজন প্রায় আড়াই কেজি। লাউগুলো লম্বায় ৪২-৪৫ সেন্টিমিটার এবং ব্যাস ১২-১৩ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে।
ফসল সংগ্রহের সময়: চারা রোপণের মাত্র ৭০-৮০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। গাছের জীবনকাল থাকে ১৩০-১৫০ দিন।
হেক্টর প্রতি ফলন: প্রতি হেক্টরে ফলন হয় ৮০-৮৫ টন।
ড. জিয়াউর রহমান আরও জানান, জাতটি তাপসহিষ্ণু হওয়ায় কৃষকেরা বছরজুড়ে এটি চাষ করে লাভবান হতে পারেন। বাংলাদেশের সব এলাকার পাশাপাশি পাহাড়ি অঞ্চলেও এই জাতটি চাষ করার জন্য খুবই উপযোগী।
বীজ ও চারা সরবরাহের উদ্যোগ
বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে চাষের জন্য ফাল্গুনের শেষে আগাম ফসল হিসেবে এর চাষ শুরু করা যায়। এছাড়া, চৈত্র মাসে বীজ বপন করে বৈশাখ মাসে চারা রোপণ করাও সম্ভব।
প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ড. মুহাম্মদ জিয়াউর রহমান নিশ্চিত করেছেন যে গবেষণা কেন্দ্রে প্রচুর পরিমাণে বীজের সংগ্রহ আছে। স্থানীয় চাষিরা চাইলে বিনা মূল্যে গবেষণা কেন্দ্র থেকে এই বীজ অথবা চারা সংগ্রহ করতে পারবেন।

