বর্ষার প্রতিকূলতা কেটেছে সবে কদিন হল। এর পরপরই চলতি বছরের আমন মৌসুম একেবারে ভিন্নভাবে ধরা দিয়েছে। ময়মনসিংহ সদর উপজেলার ছাতিয়ানতলা গ্রামের কৃষকদের কাছে আমনের মৌসুম দেখা দিয়েছে আলাদাভাবে। ধানের ক্ষেত বন্যায় তলিয়ে গেলেও একাধিক কৃষক শতভাগ ফলন ঘরে তুলছেন। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত পানিসহিষ্ণু বিনা-১১ ধান ওই এলাকার কৃষকদের কাছে আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে। কৃষকের মুখের হাসি চওড়া হয়েছে বন্যাসহিঞ্চু স্বল্পমেয়াদি এ ধানের চাষ করে। সঙ্গে সুযোগ মিলেছে বাড়তি সরিষা আবাদের।
সম্প্রতি সরেজমিনে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার ছাতিয়ানতলা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাঠে সোনালী রঙের বিনা ধান ১১ দোল খাচ্ছে।
ইতোমধ্যে কিছু জমিতে ধান কাটা শেষ হয়েছে। কৃষকদের মধ্যে দেখা গেল আত্মতৃপ্তির ছোঁয়া মাঠে পৌঁছাতেই।
ময়মনসিংহ শহর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে ছাতিয়ানতলা গ্রাম।
এখানকার কৃষকেরা জানান, ব্রহ্মপুত্র তীরের এ চরে বন্যা-বৃষ্টিতে ধানের ফলন একেবারেই পাওয়া যায় না।
শুধু বোরো ধানেরই সারাবছর ভালো আবাদ হয়।
কিন্তু এবছর অনেকেই ভালো ফলন ঘরে তুলছেন বিনা ধান ১১ আবাদ করে।
সরিষার আবাদও করতে পারবেন তারা বোরো মৌসুম শুরুর আগে।
এ জাতটি বন্যা সহনশীল বলে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) বিজ্ঞানীরা জানান।
২৫ দিন পর্যন্ত পানিতে ডুবে থাকলেও কোনো ক্ষতি হয় না এ ধানের সেই সাথে ফলনও বেশি।
আবার তুলনামূলক উৎপাদন খরচও অনেক কম।
ফলন ঘরে তোলায় যায় মাত্র ১০৫ থেকে ১১০ দিনের মধ্যে।
ফলে কৃষক এসব জমি থেকে বছরে অন্তত তিনটি ফসল করতে পারবেন।
কৃষকরা জানায়, কৃষকরা যেন নতুন করে জেগে উঠেছেন একই জমি থেকে বছরে তিন ফসলের চাষের সুযোগে।
এখন আর তাদের দুশ্চিন্তা করতে হবে না বন্যায় ধান ডুবে যাওয়া নিয়ে।
আর্থিক ক্ষতিতে পড়তে হবে না।
বিনার বিজ্ঞানীরা জানান, চলতি বছরে উত্তরের জনপদ রংপুরের বিভিন্ন এলাকা, বরেন্দ্রভূমি, গোপালগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে এটি চাষ হয়।
জলমগ্নতাসহিষুষ্ণ, উচ্চফলনশীল ও আগাম আমন ধানের জাত বিনা ধান-১১ চাষে তারা সফল হয়েছে।
বিভিন্ন দূর্যোগের কথা মাথায় রেখে বিনার বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেছেন জলমগ্নতাসহিষুষ্ণ ধানের জাত বিনা-১১।
আমন ধানের এ জাত ২০-২৫ দিন জলমগ্নতা সহ্য করার পরও বন্যা আক্রান্ত জমিতে হেক্টরপ্রতি পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ টন ফলন দেয়।
বন্যামুক্ত স্বাভাবিক জমিতে ছয় থেকে সাড়ে ছয় টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম এটি।
বিনা সূত্রে জানা যায়, এই ধান কাটা হয় মধ্য আশ্বিন মাস থেকে।
ফলে এ সময় গো-খাদ্যের চাহিদা মিটছে ধানের খড় থেকে।
খড় বিক্রি করেও কৃষক বাড়তি আয় করতে পারছেন।
বর্তমানে সারাদেশে বিনা-১১ কৃষকের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে এক হাজারেরও বেশি মাঠ প্রদর্শনী করা হচ্ছে।