লালমনিরহাট জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল বলতে ভুট্টা। ভুট্টা চাষের বদৌলতে বদলে গেছে লালমনিরহাট জেলার অর্থনীতি। তবে কেবল ভুট্টাই নয়। এখন ভুট্টার পাতা বিক্রিতে স্বাবলম্বী হচ্ছেন এ অঞ্চলের মানুষ। ভূট্টা তোলার সময় এসে যাওয়ায় পাতা ছিড়ে ফেলছেন চাষি। চরাঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষ ভুট্টার পাতা বিক্রিতে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
বিগত ২৫ বছর ধরে ভুট্টা চাষ করছেন এ অঞ্চলের মানুষ।
এবছর তাদের ভুট্টা চাষ লক্ষ্যমাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে।
বছরে কয়েকবার বৃষ্টি হবার কারনে ফলে কৃষকদের খরচও কম হয়েছে।
তিস্তা ও ধরলা নদীর চরগুলোতে এখন ভুট্টা তোলার ধুম পড়েছে।
কিছুদিনের মধ্যে পুরোদমে ভুট্টা তোলার কাজ শুরু হবে৷
কৃষকরা সে কারণে এখন তাদের ভুট্টা গাছের পাতা ছিঁড়ে ফেলছেন।
এ সুযোগকে কাজে লাগিয়েছেন চর অঞ্চলের নিন্ম আয়ের লোকজন।
তারা ভুট্টার পাতা বিক্রি করে আয় করার চেষ্টা করছেন।
কিছুদিন ভালোভাবে জীবন-জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছেন তারা।
এমনিতেই প্রতিবিঘা ভুট্টা ক্ষেতের পাতা ও গাছের মাথা কাটতে ২ জন শ্রমিক প্রয়োজন হয়।
এখন আর তা লাগছে না বিধায় চাষিদের এতে সুবিধা হচ্ছে।
নিন্ম আয়ের লোকজন বিনা মূল্যে পাতা ছিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছে।
এতে অবশ্য ভুট্টার কোনরূপ ক্ষতি হচ্ছে না।
সাধারণ ভাবে ভুট্টা তোলার ১৫-২০ দিন আগে গাছের পাতা ও মাথা কেটে দিতে হয়।
যার কারণে ভুট্টায় সূর্যের আলো পড়ে ভুট্টার রং ভালো আসে।
দিনমজুর শ্রেণির লোকজন পরিবারের সবাই মিলে ভুট্টার পাতা ছিঁড়ে নিচ্ছে।
সেই পাতা বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে যাচ্ছেন তারা।
দামে কম তাই অনেকেই ভূট্টার পাতা গোখাদ্য হিসেবে নিচ্ছেন।
একদিকে নিন্ম আয়ের লোকজন আয় করছেন।
অন্যদিকে কম দামে পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছেন খামারিরা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে পাতার হাট বসেছে।
বিশেষ করে ভুল্লারহাট, ভোটমারী গ্রামে দেখা যায় এ বাজার।
অন্যদিকে হাতীবান্ধা উপজেলার ঘুন্টি, পারুলিয়া, হাতীবান্ধাহাটসহ বিভিন্ন স্থানে এ বাজার বসে।
প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ভুট্টা পাতার হাট বসছে।
বাজারগুলোতে কিছু সংখ্যক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও দেখা যায় ভুট্টার পাতা বিক্রি করতে।
প্রতি ভুট্টার পাতার আটি বিক্রি হয় ৫ টাকা দরে।
দামে কম হবার কারনে গরুর খামারিরা প্রায় ৩০ থেকে ৫০টি আটি কিনছেন।
তিস্তারচর থেকে মাথায় বা ঘাড়ে বা সাইকেলে করে ভুট্টার পাতা নিয়ে বাজারে ঢুকতে দেখা যায়।
লালমনিরহাট জেলার প্রাণিসম্পদ অফিসার জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি জানান, পশুখাদ্য হিসেবে ভুট্টার পাতা অতি উত্তম খাবার।
গবাদি পশুকে ভুট্টার পাতা খাওয়ালে কোনো রকম ক্ষতি হয় না।
খামারিরা ভুট্টার পাতা গরু খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করলে বেশি লাভবান হবেন বলে তিনি জানান।
লালমনিরহাট কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামীম আশরাফ।
তিনি আশা করেন, তিস্তা ও ধরলা নদীর চরে এবছর ভুট্টার বাম্পার ফলন হবে।
কৃষকরা ভুট্টা চাষে লাভবান হচ্ছেন।
পাশাপাশি গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে কৃষকরা ভুট্টার পাতা বিক্রি করছেন।
এতে করেও তারা স্বাবলম্বী হচ্ছেন।