গলদা চিংড়ীর লাভজনক চাষে উপযুক্ত খাদ্য তালিকা অতিব জরুরী। গলদা চিংড়ির খাদ্য তালিকা নিয়ে জানতে চাই
গলদা চিংড়ির খাদ্য তালিকা নিচে দেয়া হলঃ
চিংড়ির সম্পুরক খাদ্য প্রয়োগঃ
গলদা চিংড়ি প্রাকৃতিক খাদ্যের উপর নির্ভর করে না। তাই তাকে প্রতিদিন পম্পুরক খাদ্য দিতে হবে। পোণা মজুদের পর প্রথম ৭ দিন প্রতি ৫০০০ রেণুর জন্য একমুঠ সুজি প্রতিদিন একবার সন্ধ্যায় দিতে হবে। কারণ চিংড়ি সাধারণত রাতেই আহার করে থাকে।
পরবর্তী ২য় ও ৩য় সপ্তাহের জন্য- | ১ কেজির তৈরীতে- |
মাছের গুড়া / মাংসের গুড়া ৪০% | ⇒৪০০ গ্রাম |
খৈল (সরিষা / সয়াবিন) ৪০% | ⇒৪০০ গ্রাম |
চিটাগুড় ১০% | ⇒১০০ গ্রাম |
এবং গমের আটা ১০% | ⇒১০০ গ্রাম |
উপরোক্ত পরিমাণে বিভিন্ন উপাদন একত্রে মিশিয়ে কাই তৈরী করে ডিমের আকারে বল তৈরী করে নিতে হবে।
প্রতিটি ডিম আকরের বল প্রতিহাজর রেণুর জন্য সন্থ্যায় দিতে হবে। প্রতিটি বল আবার চারটি ছোট বল তৈরী করে যেখানে ঝোঁপঝাড় দেয়া হয়েছে সেখানে দিতে হবে। পরবর্তী সপ্তাহ গুলোতে এই খাবারের পরিমাণ ২০% হারে বাড়াতে হবে।
গলদা চিংড়ির জন্য সম্পূরক খাদ্যঃ
চিংড়িকে খাওয়ানোর জন্য বাজারের বিভিন্ন ধরনের প্যাকেটজাত খাদ্য কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু এই খাদ্যগুলোর দাম অনেক বেশী। যেহেতু চিংড়িকে নিয়মিত খাদ্য দিতে হয় আর একজন চাষী যদি বাজার থেকে চিংড়ি খাবার কিনে খাওয়াতে চান তবে, চাষাবাদ খরচ অনেক বেড়ে যাবে। ফলে চাষীর লাভের পরিমাণ কমে যাবে। তাই বাজার থেকে খাদ্য না কিনে সহজ পদ্ধতিতে বিভিন্ন উপাদানের মাধ্যমে বাড়িতে খাদ্য তৈরী করে চিংড়িকে খাওয়ানোই উত্তম। এতে যেমন খাদ্যের পুষ্টিমাণ নিশি্টত থাকবে তেমনি খরচও কম (৫০%) হবে। বিভিন্ন উপাদান বিভিন্ন পরিমাণে মিশিয়ে চিংড়ির খাদ্য তৈরী করা যায়। তবে উপাদানের সহজ প্রাপ্যতা ও খাদ্যের পুষ্টিগুণ বিবেচনা করে চিংড়ির জন্য
সম্পূরক খাদ্য তৈরীর ৩টি নিয়ম এখানে উল্লেখ করা হলোঃ
নিয়মঃ ১
উপাদানের নাম | পরিমাণ |
মাংস/শুটকী মাছের গুড়া | ২৫% |
খৈল (সরিষা/সয়াবিন) | ২৫% |
চাউলের কুঁড়া | ২০% |
আটা | ২৫% |
শাক-সব্জি | ০৫% |
মোট | ১০০% |
নিয়মঃ ২
উপাদানের নাম | পরিমাণ |
মাংস/শুটকী মাছের গুড়া | ২৫% |
খৈল (সরিষা/সয়াবিন) | ২৫% |
চাউলের কুঁড়া | ২০% |
আটা | ১৫% |
ভুঁষি | ১০% |
শাক-সব্জি | ৫% |
মোট | ১০০% |
নিয়মঃ ৩
ক্রমিক নং | উপাদানের নাম | পরিমাণ |
১. | খৈল (সরিষা/সয়াবিন) | ৪০% |
২. | আটা/ ময়দা | ১০% |
৩. | চাউলের কুঁড়া | ৪০% |
৪. | চিটা গুড় | ১০% |
মোট | ১০০% |
উপরোক্ত ছকে উল্লেখিত প্রথম নিয়ম অনুসরণ করে যদি ১ কেজি খাদ্য তৈরী করা হয় তবে মাংসের /শুটকি মাছের গুড়া, খৈল ও আটা ? ময়দা সমান পরিমাণ অর্থাৎ ২৫০ গ্রাম ও ৫০ গ্রাম মিলিয়ে ১০০০ গ্রাম পূরণ করতে হবে। যদি বেশী পরিমাণ খাবার একসাথে তৈরী করা হয় তবে এভাবে সহজেই বিভিন্ন উপাদানের পরিমাণ বের করা যাবে।
খাদ্য প্রস্তুত প্রণালীঃ
পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, খাদ্য উপাদানের মাধ্যমে বাড়িতে তৈরী করা উত্তম। ছকে উল্লেখিত বিভিন্ন উপাদানের পরিমাণ ম্বলিত ৩টি নিয়মের যে কোন একটি বাছাই করে সে মোতাবেক উপাদানগুলো সংগ্রহ করতে হবে।
তারপর নিম্নোক্ত উপায়ে খাদ্য প্রস্তুত করতে হবে-
- খৈলগুলোকে খাবার তৈরীর একদিন আগে জলতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
- শাকসব্জিগুলোকে একটু হালকা সিদ্ধ করে নিতে হবে।
- এবার সবগুলো উপাদান (মাংস / মাছের গুড়া, খৈল, চালের কুঁড়া, আটা, ভূষি, শাক-সব্জি) একত্রে মিশিয়ে ঠিক রুটি বানানোর কাঁই এর মত তৈরী করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন জলর পরিমাণ বেশী না হয়ে যায়।
- এবার মেশিন বা ছিদ্রযুক্ত টিনের থালার মাধ্যমে কাইগুলো দিয়ে সেমাই এর মত রৈী করে ১ ঘন্টা সূর্যের আলোতে শুকিয়ে নিতে হবে।
- শুকানোর পর এই পিলেটগুলোকে (সেমাইয়ের মত) হাত দিয়ে ছোট ছোট টুকরো করে প্লাষ্টিক জার (বয়াম) টিন বা প্লাষ্টিকের বস্তায় ভরে প্রয়োজন মত চিংড়িকে খাওয়ানো যাবে। প্রতিবার প্রস্তুতকৃত খাদ্য ১৫-২০ দিনের মধ্যে চিংড়িকে খাইয়ে ফেলাই উত্তম। অর্থাৎ প্রতিবার ১৫-২০ দিনের আন্দাজে খাদ্য তৈরী করতে হবে। এতে খাদ্যের পুষ্টিগুণ অটুট থাকবে।