
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ভেনামি চিংড়ি চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সঠিক পরিকল্পনা ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে চাষিরা কম সময়ে বেশি উৎপাদন ও ভালো দাম পেতে পারেন। কয়েকটি মৌলিক ধাপ মেনে চললেই চাষে সাফল্য নিশ্চিত করা সম্ভব।
১. সাইট নির্বাচন
পুকুরের মাটি শক্ত ও পানি ধরে রাখার উপযোগী হতে হবে। স্যালিনিটি ১০–২৫ ppt এবং pH ৭.৫–৮.৫ বজায় রাখা জরুরি। পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
২. পুকুর প্রস্তুতি
পানি শুকিয়ে পুকুরের তলা শক্ত করুন। প্রতি হেক্টরে ৫০–৭৫ কেজি চুন ছিটিয়ে pH ঠিক করুন। জীবাণুনাশক (যেমন জিপসাম বা ব্লিচিং পাউডার) ব্যবহার করে পানি ভর্তি করুন। প্রয়োজন অনুযায়ী সার প্রয়োগ করে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি করুন।
৩. বীজ (PL) নির্বাচন ও স্টকিং
SPF (Specific Pathogen Free) সার্টিফাইড হ্যাচারি থেকে বীজ সংগ্রহ করুন। PL আকার ১–১.২ সেমি এবং সুস্থ, স্বচ্ছ হওয়া উচিত। প্রতি বর্গমিটারে ২৫–৩০টি PL ছাড়ুন। পুকুরে পর্যাপ্ত এ্যারেশন ও অন্যন্য ব্যবস্থাপন সুবিধা থাকলে আরো বেশি PL ছাড়া যায়।
৪. পানি মান নিয়ন্ত্রণ
প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে DO, pH, স্যালিনিটি ও তাপমাত্রা মাপুন। প্রয়োজন হলে আংশিক পানি বদল করুন (৭–১০ দিনে ১০–১৫%)। পর্যাপ্ত এয়ারেশন নিশ্চিত করুন যাতে অক্সিজেনের ঘাটতি না হয়।
৫. খাদ্য ব্যবস্থাপনা
৩৫–৪০% প্রোটিনযুক্ত মানসম্মত ফিড ব্যবহার করুন। দিনে ৪–৬ বার খাবার দিন, অপচয় এড়াতে পরিমাণ সামঞ্জস্য করুন। টেস্ট ফিড দিয়ে চিংড়ির খাওয়ার আগ্রহ পর্যবেক্ষণ করুন। নিয়মিত এফ সি আর পর্যবেক্ষন করুন।
৬. রোগ নিয়ন্ত্রণ ও বায়োসিকিউরিটি
প্রবেশপথে বায়ো-ফেন্স ও জীবাণুনাশক ব্যবহার করুন। প্রতিদিন মৃত্যুর হার রেকর্ড করুন; ২% এর বেশি হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। প্রয়োজনমত পানি পরিশোধক ও রোগ প্রতিরোধক ব্যবহার করুন।
৭. ফসল সংগ্রহ ও বাজারজাত
Harvest-এর আগে চিংড়ির আকার ও ওজন পরীক্ষা করুন। গ্রেডিং ও ঠান্ডা সংরক্ষণ (cold chain) করে বাজারে পাঠান। মান বজায় রাখলে ভালো দাম পাওয়া যায়।
ভেনামি চিংড়ি চাষে সফল হতে হলে প্রতিটি ধাপ মনোযোগ দিয়ে পালন করতে হবে। সঠিক বীজ, পানি ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা, রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং বাজারজাতকরণের পরিকল্পনা চাষিকে লাভজনক ও টেকসই উৎপাদনের পথে নিয়ে যাবে।