Friday, 09 May, 2025

সর্বাধিক পঠিত

হ্যাচারিতে মেনি মাছের (Nandus nandus) সফল প্রজননের জন্য করণীয়


মেনি মাছ_Nandus nandus

মেনি মাছ (Nandus nandus) বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাদুপানির মাছ। এটি মূলত নদী, বিল ও খাল-ঝিলের মাছ হলেও বর্তমানে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে হ্যাচারিতে উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। তবে সফলভাবে মেনি মাছের প্রজনন নিশ্চিত করতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মেনে চলতে হবে।

হ্যাচারির উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি

মেনি মাছের কৃত্রিম প্রজননের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য—

আরো পড়ুন
মৎস্য খামার ব্যবস্থাপনায় আসছে ‘স্মার্ট নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা’ (IOT) , মোবাইল অ্যাপে হবে খামার মনিটরিং

বাংলাদেশে মাছ চাষ ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। খুব শিগগিরই মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে দূরবর্তী মৎস্য খামার নিয়ন্ত্রণের সুযোগ Read more

দেশজুড়ে শুরু হলো মাসব্যাপী ভ্রাম্যমাণ মাটি পরীক্ষা কার্যক্রম

বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় শুরু হয়েছে মাসব্যাপী ভ্রাম্যমাণ মাটি পরীক্ষা কার্যক্রম, যা চলবে আগামী ৫ জুন ২০২৫ পর্যন্ত। কৃষকের হাতে পৌঁছে Read more

হ্যাচারির পানির pH ৭.০-৮.০-এর মধ্যে রাখা উচিত।
পানির তাপমাত্রা ২৬-২৮°C রাখা উপযুক্ত।
হ্যাচারির পানিতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
পানির স্বচ্ছতা ও দূষণমুক্ত থাকা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

ব্রুডস্টক নির্বাচন ও সংরক্ষণ

সফল প্রজননের জন্য স্বাস্থ্যবান ও পরিপক্ব ব্রুডস্টক নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ।

৮-১২ মাস বয়সী এবং ৮০-১০০ গ্রাম ওজনের সুস্থ মাছ নির্বাচন করা উচিত।
ব্রুডস্টক রাখার জন্য বিশেষ পুকুর বা ট্যাংকে পর্যাপ্ত খাবার ও বিশ্রামের ব্যবস্থা করা দরকার।
ব্রুডস্টককে উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার যেমন ছোট মাছ, কেঁচো, কৃমি ও প্রাকৃতিক খাদ্য সরবরাহ করা যেতে পারে।

কৃত্রিম প্রজনন ও হরমোন প্রয়োগ

মেনি মাছের কৃত্রিম প্রজননের জন্য সাধারণত হরমোন ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়। হরমোন প্রয়োগ: ওভাপ্রিম বা HCG হরমোন ব্যবহার করা যেতে পারে। হরমোন ডোজ: ওজনের প্রতি কেজিতে ০.৫-১.০ মিলিগ্রাম ওভাপ্রিম বা ১০০০-২০০০ IU HCG প্রয়োগ করা যেতে পারে।

হরমোন প্রয়োগের ৮-১০ ঘণ্টার মধ্যে ডিম ছাড়ার প্রবণতা দেখা যায়।

ডিম সংগ্রহ ও নিষেক (Fertilization)

স্ত্রী মাছ ডিম ছাড়লে তা দ্রুত সংগ্রহ করতে হবে।
পুরুষ মাছ থেকে শুক্রাণু সংগ্রহ করে পানির মাধ্যমে নিষেক নিশ্চিত করা হয়।
নিষিক্ত ডিম ইনকিউবেটরে রেখে পানির প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।

পোনা উৎপাদন ও পরিচর্যা

ডিম ফুটে গেলে পোনা মাছের উপযুক্ত পরিচর্যা নিশ্চিত করা জরুরি।

প্রথম ২-৩ দিন: ডিম ফুটে বের হওয়া লার্ভা প্রথম কয়েক দিন ডিমের কুসুম থেকে খাবার গ্রহণ করে।
পরে: ৩-৫ দিন পর আর্টেমিয়া, ইনফুসোরিয়া বা মাইক্রো ওয়ার্ম খাওয়ানো যেতে পারে।
পানি পরিবর্তন: ২০-৩০% পানি প্রতিদিন পরিবর্তন করা ভালো।
পরিচ্ছন্নতা: হ্যাচারির পানি স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত।

পোনার স্থানান্তর ও খামারে চাষ

পোনাগুলো ২-৩ সেমি হলেই খামারে ছাড়ার জন্য উপযুক্ত হয়।
খামারে ছাড়ার আগে ২-৩ দিন পানির তাপমাত্রা ও গুণগত মানের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য “অ্যাকলিমেটাইজেশন” প্রক্রিয়া অনুসরণ করা উচিত।

মেনি মাছের সফল প্রজননের জন্য উপযুক্ত হ্যাচারি ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্যকর ব্রুডস্টক, সঠিক হরমোন প্রয়োগ এবং যথাযথ লার্ভা পরিচর্যা প্রয়োজন। এসব ধাপ যথাযথভাবে মেনে চললে মেনি মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে, যা বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হতে পারে।

0 comments on “হ্যাচারিতে মেনি মাছের (Nandus nandus) সফল প্রজননের জন্য করণীয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক লেখা

আর্কাইভ