Saturday, 27 September, 2025

ঢাকায় শুরু হলো আগ্রোফরেস্ট্রি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন


জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা এবং গ্রামীণ জীবিকা উন্নয়নের লক্ষ্যে ঢাকায় শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী আঞ্চলিক বিশেষজ্ঞ বৈঠক। মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫) শুরু হওয়া এই বৈঠকে দক্ষিণ এশিয়ার ছয়টি সার্ক সদস্য দেশের প্রায় ত্রিশ জন গবেষক, নীতিনির্ধারক এবং বাস্তবায়নকারী অংশ নিয়েছেন। বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় হলো কৃষিবনায়ন (আগ্রোফরেস্ট্রি) এবং জলবায়ু সহনশীল সম্প্রদায় গঠন।

সার্ক কৃষি কেন্দ্রের সিনিয়র প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট ড. রাজা উল্লাহ খান বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্যের সংকট এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আগ্রোফরেস্ট্রি একটি কার্যকর প্রাকৃতিক সমাধান। কৃষি ও বনায়নের মধ্যে সঠিক সমন্বয় এখন সময়ের দাবি।”

টেকসই উন্নয়নের কৌশল হিসেবে আগ্রোফরেস্ট্রি

আরো পড়ুন
ধানের বাম্পার ফলন: ফুল ফোটার সময় কৃষকের করণীয়

বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য ধান। এ দেশের কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা এই ফসলের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। ধানের ফলন বাড়াতে হলে এর Read more

লবণাক্ত জমিতেও বাম্পার ফলন! বিনাধান-২৩ চাষে সাতক্ষীরার কৃষকদের মুখে হাসি

সাতক্ষীরায় এবার আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে সম্পূর্ণ নতুন এক আশার বার্তা নিয়ে। প্রথমবারের মতো উচ্চ ফলনশীল ও লবণাক্ততা সহনশীল Read more

বৈঠকের প্রধান বক্তা, সিআইএফওআর-আইসিআরএএফ এর সিনিয়র ফেলো ড. এস কে ধ্যানি, আগ্রোফরেস্ট্রিকে দক্ষিণ এশিয়ার টেকসই উন্নয়নের একটি পরীক্ষিত কৌশল হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “২০৫০ সালের মধ্যে খাদ্যের চাহিদা ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এমতাবস্থায় উর্বর কৃষিজমি বনায়নের জন্য ব্যবহার করা সম্ভব নয়। কৃষি জমিতে গাছ যুক্ত করলে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি, জল সংরক্ষণ এবং কার্বন সঞ্চয় সম্ভব। এর ফলে গ্রামীণ জীবিকাও উন্নত হয়।” তিনি নীতি নির্ধারণে সমন্বয়, ভালো মানের চারা সরবরাহ এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ওপর জোর দেন।

বিশেষ অতিথি সার্ক সচিবালয়ের পরিচালক তানভীর আহমেদ তরফদার সার্ক কৃষি কেন্দ্রের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং বলেন, “আগ্রোফরেস্ট্রি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমাদের এই অঞ্চলে এর বিস্তার ঘটাতে আরও বেশি সহযোগিতা ও সুনির্দিষ্ট নীতি প্রয়োজন।”

বাংলাদেশে আগ্রোফরেস্ট্রির সফল বাস্তবায়ন

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে আগ্রোফরেস্ট্রির বেশ কিছু সফল উদাহরণ রয়েছে। এখন সময় এসেছে উদ্ভাবন, বিনিয়োগ এবং সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে একে আমাদের কৃষি নীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে গড়ে তোলার। এটি শুধু গ্রামীণ জীবিকা উন্নয়ন নয়, বরং একটি জলবায়ু সহনশীল ও টেকসই খাদ্য ব্যবস্থার জন্যও অপরিহার্য।”

এছাড়াও, অ্যাগ্রোফরেস্ট্রি প্রোমোশন নেটওয়ার্কের ড. রোল্যান্ড ফ্রুটিগ “ঘাটতির কৃষি থেকে টেকসই খাদ্য ব্যবস্থার পথে আগ্রোফরেস্ট্রি” শীর্ষক একটি উপস্থাপনা দেন। তিনি বলেন, “আগ্রোফরেস্ট্রি কেবল খাদ্য উৎপাদন বাড়ায় না, এটি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনধারণের সহায়ক এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।”

বৈঠকের প্রথম দিনে একটি প্রযুক্তিগত অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বিশেষজ্ঞরা সার্ক অঞ্চলে আগ্রোফরেস্ট্রি প্রসারের কৌশল, বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং বিভিন্ন সফল কেস স্টাডি নিয়ে আলোচনা করেন।

0 comments on “ঢাকায় শুরু হলো আগ্রোফরেস্ট্রি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক লেখা

আর্কাইভ