ভেড়া বাদলা, তড়কা, ম্যাস্টাইটিস, খুরারোগ, চর্মরোগ, কৃমি, বহিঃপরজীবী ইত্যাদিতে বেশি আক্রান্ত হয়। ভেড়ার রোগ থেকে বাচতে কি করা উচিত?
বাংলাদেশে ভেড়ার চাষ ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে, তবে অনিয়মিত যত্ন ও প্রতিকূল পরিবেশের কারণে ভেড়ায় বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে। নিচে ভেড়ার সাধারণত বেশি দেখা দেওয়া কিছু রোগ, তাদের লক্ষণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
১. পিপিআর (Peste des Petits Ruminants)
লক্ষণ:
- জ্বর এবং ক্ষুধামন্দা।
 - নাক ও মুখ দিয়ে পানি বা পুঁজ বের হওয়া।
 - পাতলা ও দুর্গন্ধযুক্ত ডায়রিয়া।
 - গায়ের লোম রুক্ষ হয়ে যাওয়া।
 
প্রতিকার:
- নিয়মিত পিপিআর টিকা প্রদান।
 - আক্রান্ত ভেড়াকে আলাদা করে চিকিৎসা করা।
 - পর্যাপ্ত তরল খাবার সরবরাহ এবং অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ।
 
২. ক্ষুরারোগ (Foot-and-Mouth Disease)
লক্ষণ:
- মুখে, জিহ্বায় এবং ক্ষুরের কাছে ফোসকা দেখা যায়।
 - হাঁটতে কষ্ট এবং ক্ষুধা কমে যাওয়া।
 - দুধ উৎপাদন কমে যাওয়া।
 
প্রতিকার:
- ক্ষুরারোগের টিকা নিয়মিত দেওয়া।
 - ক্ষুর পরিষ্কার রাখতে কপার সালফেট বা পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেটের দ্রবণে ধোয়া।
 - আক্রান্ত ভেড়াকে আলাদা রাখা।
 
৩. প্যারাসাইটজনিত রোগ (Internal & External Parasites)
লক্ষণ:
- পেটে কৃমির জন্য ওজন কমে যাওয়া।
 - চামড়ায় উকুন বা মাইটের কারণে চুলকানি।
 - ক্ষুধামন্দা এবং গায়ের লোম রুক্ষ হয়ে যাওয়া।
 
প্রতিকার:
- প্রতি ৩-৪ মাস পরপর কৃমির ওষুধ (এলবেন্ডাজল বা ফেনবেন্ডাজল) খাওয়ানো।
 - চামড়ায় পোকা থাকলে আইভারমেকটিন প্রয়োগ।
 - ঘর পরিষ্কার রাখা।
 
৪. নিউমোনিয়া (Pneumonia)
লক্ষণ:
- শ্বাস নিতে কষ্ট।
 - নাক দিয়ে পানি বা পুঁজ বের হওয়া।
 - জ্বর এবং দুর্বলতা।
 
প্রতিকার:
- ভেড়ার ঘর শুকনো ও বায়ুচলাচল উপযোগী রাখা।
 - ঠান্ডার সময়ে অতিরিক্ত সুরক্ষা দেওয়া।
 - প্রয়োজন অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক (যেমন: অক্সিটেট্রাসাইক্লিন) প্রয়োগ।
 
৫. বৃষ্টিজনিত ডার্মাটাইটিস (Rain Scald or Dermatophilosis)
লক্ষণ:
- ত্বকে ক্ষত এবং চামড়ার ওপর পুঁজযুক্ত স্তর।
 - ক্ষতস্থানে ব্যথা এবং চুল পড়ে যাওয়া।
 
প্রতিকার:
- ঘর শুকনো রাখা।
 - সংক্রমিত স্থানে আয়োডিন বা অ্যান্টিসেপ্টিক লোশন ব্যবহার।
 - গুরুতর ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ।
 
৬. অ্যানথ্রাক্স (Anthrax)
লক্ষণ:
- হঠাৎ মৃত্যু।
 - নাক, মুখ, ও মলদ্বার দিয়ে কালো রঙের রক্ত বের হওয়া।
 
প্রতিকার:
- নিয়মিত অ্যানথ্রাক্স টিকা প্রদান।
 - মৃত ভেড়ার দেহ সঠিকভাবে পুঁতে ফেলা।
 
সাধারণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা:
- সুষম খাদ্য ও পরিষ্কার পানি: ভেড়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সুষম খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করা।
 - পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ঘর: ভেড়ার থাকার জায়গা নিয়মিত পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখা।
 - টিকা প্রদান: নিয়মিত টিকা দেওয়া এবং পশুচিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা।
 - ফসলের অবশিষ্টাংশ খাওয়ানোর আগে সাবধানতা: পচা বা দূষিত খাবার থেকে ভেড়া দূরে রাখা।
 
সঠিক যত্ন ও নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা নিশ্চিত করলে ভেড়ার রোগ কমানো সম্ভব এবং উৎপাদনশীলতা বাড়ানো যাবে।

