Wednesday, 26 November, 2025

বাংলাদেশ ভেড়ার কোন রোগ বেশি হয়?

চাষির প্রশ্নCategory: কৃষি তথ্যবাংলাদেশ ভেড়ার কোন রোগ বেশি হয়?
Mamun asked 12 months ago

ভেড়া বাদলা, তড়কা, ম্যাস্টাইটিস, খুরারোগ, চর্মরোগ, কৃমি, বহিঃপরজীবী ইত্যাদিতে বেশি আক্রান্ত হয়। ভেড়ার রোগ থেকে বাচতে কি করা উচিত?

1 Answers
এগ্রোবিডি২৪ Staff answered 12 months ago

বাংলাদেশে ভেড়ার চাষ ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে, তবে অনিয়মিত যত্ন ও প্রতিকূল পরিবেশের কারণে ভেড়ায় বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে। নিচে ভেড়ার সাধারণত বেশি দেখা দেওয়া কিছু রোগ, তাদের লক্ষণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

১. পিপিআর (Peste des Petits Ruminants)

লক্ষণ:

  • জ্বর এবং ক্ষুধামন্দা।
  • নাক ও মুখ দিয়ে পানি বা পুঁজ বের হওয়া।
  • পাতলা ও দুর্গন্ধযুক্ত ডায়রিয়া।
  • গায়ের লোম রুক্ষ হয়ে যাওয়া।

প্রতিকার:

  • নিয়মিত পিপিআর টিকা প্রদান।
  • আক্রান্ত ভেড়াকে আলাদা করে চিকিৎসা করা।
  • পর্যাপ্ত তরল খাবার সরবরাহ এবং অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ।

২. ক্ষুরারোগ (Foot-and-Mouth Disease)

লক্ষণ:

  • মুখে, জিহ্বায় এবং ক্ষুরের কাছে ফোসকা দেখা যায়।
  • হাঁটতে কষ্ট এবং ক্ষুধা কমে যাওয়া।
  • দুধ উৎপাদন কমে যাওয়া।

প্রতিকার:

  • ক্ষুরারোগের টিকা নিয়মিত দেওয়া।
  • ক্ষুর পরিষ্কার রাখতে কপার সালফেট বা পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেটের দ্রবণে ধোয়া।
  • আক্রান্ত ভেড়াকে আলাদা রাখা।

৩. প্যারাসাইটজনিত রোগ (Internal & External Parasites)

লক্ষণ:

  • পেটে কৃমির জন্য ওজন কমে যাওয়া।
  • চামড়ায় উকুন বা মাইটের কারণে চুলকানি।
  • ক্ষুধামন্দা এবং গায়ের লোম রুক্ষ হয়ে যাওয়া।

প্রতিকার:

  • প্রতি ৩-৪ মাস পরপর কৃমির ওষুধ (এলবেন্ডাজল বা ফেনবেন্ডাজল) খাওয়ানো।
  • চামড়ায় পোকা থাকলে আইভারমেকটিন প্রয়োগ।
  • ঘর পরিষ্কার রাখা।

৪. নিউমোনিয়া (Pneumonia)

লক্ষণ:

  • শ্বাস নিতে কষ্ট।
  • নাক দিয়ে পানি বা পুঁজ বের হওয়া।
  • জ্বর এবং দুর্বলতা।

প্রতিকার:

  • ভেড়ার ঘর শুকনো ও বায়ুচলাচল উপযোগী রাখা।
  • ঠান্ডার সময়ে অতিরিক্ত সুরক্ষা দেওয়া।
  • প্রয়োজন অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক (যেমন: অক্সিটেট্রাসাইক্লিন) প্রয়োগ।

৫. বৃষ্টিজনিত ডার্মাটাইটিস (Rain Scald or Dermatophilosis)

লক্ষণ:

  • ত্বকে ক্ষত এবং চামড়ার ওপর পুঁজযুক্ত স্তর।
  • ক্ষতস্থানে ব্যথা এবং চুল পড়ে যাওয়া।

প্রতিকার:

  • ঘর শুকনো রাখা।
  • সংক্রমিত স্থানে আয়োডিন বা অ্যান্টিসেপ্টিক লোশন ব্যবহার।
  • গুরুতর ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ।

৬. অ্যানথ্রাক্স (Anthrax)

লক্ষণ:

  • হঠাৎ মৃত্যু।
  • নাক, মুখ, ও মলদ্বার দিয়ে কালো রঙের রক্ত বের হওয়া।

প্রতিকার:

  • নিয়মিত অ্যানথ্রাক্স টিকা প্রদান।
  • মৃত ভেড়ার দেহ সঠিকভাবে পুঁতে ফেলা।

সাধারণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা:

  • সুষম খাদ্য ও পরিষ্কার পানি: ভেড়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সুষম খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করা।
  • পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ঘর: ভেড়ার থাকার জায়গা নিয়মিত পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখা।
  • টিকা প্রদান: নিয়মিত টিকা দেওয়া এবং পশুচিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা।
  • ফসলের অবশিষ্টাংশ খাওয়ানোর আগে সাবধানতা: পচা বা দূষিত খাবার থেকে ভেড়া দূরে রাখা।

সঠিক যত্ন ও নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা নিশ্চিত করলে ভেড়ার রোগ কমানো সম্ভব এবং উৎপাদনশীলতা বাড়ানো যাবে।

জনপ্রিয় লেখা