
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) সরকারের কৃষি নীতি বাস্তবায়ন এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে বড় সাফল্য দেখিয়েছে। একদিকে, স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণ করে ১ লাখ ৭৮ হাজারেরও বেশি নতুন কৃষককে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে, অন্যদিকে, প্রবাসী আয় (রেমিটেন্স) আহরণে সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেছে।
নতুন কৃষকের মুখে হাসি: ৩১১৬ কোটি টাকার ঋণ
কৃষি ব্যাংক গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৩৮৬ জন নতুন কৃষককে ৩ হাজার ১১৬ কোটি টাকার ঋণ সুবিধা দিয়েছে। বিকেবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিন্তে আলী এ প্রসঙ্গে বলেন, সরকারের কৃষি নীতি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, যা ভর্তুকি সুদে কৃষকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।
তিনি জানান, প্রণোদনা স্কিমের আওতায় ৪ থেকে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ স্বল্প সুদে অধিক সংখ্যক প্রকৃত চাষি ও খামারি উপকৃত হয়েছেন। দেশের খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে বিকেবি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
রেমিটেন্স আহরণে রেকর্ড: সরকারি ব্যাংকের মধ্যে শীর্ষে
রেমিটেন্স আহরণেও বিকেবি দুর্দান্ত অগ্রগতি দেখিয়েছে। চলতি বছরের আট মাসে কৃষি ব্যাংক ১৯৭৬.২১ মিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ ২৪,৩২৪ কোটি টাকা রেমিটেন্স আহরণ করেছে। এই সাফল্যে ব্যাংকটি প্রবাসী আয় সংগ্রহে দেশের সব ব্যাংকের মধ্যে তৃতীয় স্থানে উঠে আসে।
এই ধারা অব্যাহত রেখে, সেপ্টেম্বর মাসের ১৩ তারিখ পর্যন্ত রেমিটেন্স আহরণে রেকর্ড ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। ফলে কৃষি ব্যাংকের বর্তমান অবস্থান আটটি সরকারি ব্যাংকের মধ্যে প্রথম এবং দেশের ৬২টি ব্যাংকের মধ্যে দ্বিতীয়।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিন্তে আলী বলেন, সারাদেশে গ্রামীণ অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা ১ হাজার ৩৮টি শাখা এবং ৪টি উপশাখার সবকটি অনলাইনে দ্রুত ও ডিজিটাল সেবা প্রদান করায় প্রবাসী আয় বৃদ্ধির এটি একটি বড় কারণ। এছাড়া বিকেবি দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত, শতভাগ নিরাপদ ও আস্থশীল হওয়ায় প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠানোর ক্ষেত্রে বিকেবির দিকেই ঝুঁকছেন।
ঋণ বিতরণ বৃদ্ধি ও নতুন লক্ষ্যমাত্রা
বিকেবি সূত্র অনুযায়ী, দেশের খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সাম্প্রতিক অর্থ বছরে কৃষি ঋণ বিতরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে কৃষি ব্যাংক:
- ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা।
- ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকায়।
- চলতি অর্থবছরের ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ১ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা।
পাশাপাশি, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতেও কৃষি ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই খাতে ঋণের পরিমাণ ৫ হাজার ৫৩৫ দশমিক ১৯ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।
এদিকে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কৃষি ও পল্লি খাতে ৩৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, যা আগের বছরের চেয়ে ২.৬৩ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে শুধু কৃষি ব্যাংকের জন্যই ৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।