Sunday, 11 May, 2025

সর্বাধিক পঠিত

বাণিজ্যিকভাবে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনে সফলতা


নার্সারি ব্যবসা দিয়ে শুরু করে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদনেও সফলতার পথে হাঁটছেন খাগড়াছড়ির সীমান্তঘেঁষা পানছড়ির স্বপ্নবাজ তরুণ আব্দুল হালিম। নিজের নার্সারিতে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার ব্যবহারের পাশাপাশি বাজারজাত শুরু করেছেন তিনি।

পানছড়ির উপজেলা শহর ঘেঁষা টিএন্ডটি ভবন। টিএন্ডটি ভবনের পাশেই সরকারি পরিত্যাক্ত টিলাভূমিতে গড়ে তোলা হয়েছে গাউছিয়া নার্সারি। গাউছিয়া নার্সারিতেই একটি ছোট্ট টিনের ঘরে বিশেষভাবে তৈরি ট্যাঙ্কে ও দশটি রিংয়ে চালার ঘরে চলছে স্বপ্নবাজ আব্দুল হালিমের কেঁচো সার বা ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন প্রক্রিয়া।

সেখানেই নিজের ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদনের গল্প শোনালেন তরুণ উদ্যোক্তা মো. আব্দুল হালিম। বললেন মাস ছয়েক আগে বান্দরবানে নার্সারির উপর প্রশিক্ষণে গিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার তৈরির ধারণা লাভ করেন তিনি।

আরো পড়ুন
গ্রামীণ অর্থনীতির সম্ভাবনাময় খাত: মাসকোভি হাঁস পালন

গ্রামীণ অর্থনীতিতে হাঁস পালন একটি লাভজনক ও টেকসই উদ্যোগ হিসেবে পরিচিত। এর মধ্যে মাসকোভি হাঁস (যাকে অনেকেই 'চীনা হাঁস' নামে চেনেন) বিশেষভাবে Read more

বাজারে নতুন চালের সরবরাহে দামে স্বস্তি, তবে সবজির দাম ঊর্ধ্বগতি
সবজির উপর মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা উঠে এসেছে গবেষণায়

দেশের বিভিন্ন জেলায় বোরো ধান কাটা শুরু হওয়ায় বাজারে নতুন চাল আসতে শুরু করেছে। এতে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে মিনিকেট চালের Read more

শুরুতেই কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় বান্দরবান থেকে সংগ্রহ করেন এপিজিক নামক তিন কেজি কেঁচো। এর পরপরই শুরু করেন কঁচো থেকে পরিবেশ বান্ধব জৈব সার তৈরির মতো কর্মযজ্ঞ। মা-বাবা আর ডিগ্রি পড়ুয়া ছোট ভাইকে সাথে নিয়ে গেল নভেম্বর মাসে পানছড়ির টিএন্ডটি ভবন লাগোয়া গাউছিয়া নার্সারিতে শুরু করেন ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদন প্রক্রিয়া।

বললেন পরিবারের অভাব-অনটনের কথা চিন্তা করে ২০০৪ সালে স্বল্প পরিসরে প্রতিষ্ঠা করেন গাউছিয়া নার্সারি। নিজের আন্তরিকতা আর ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় গত ১৬ বছরে ডালপালা মেলেছে গাউছিয়া নার্সারি। ২০০৬ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিলেও পাশ করতে পারেননি এ তরুণ।

পরিবারের অভাব-অনটনের কারণে আর পরীক্ষাও দেয়া হয়নি। ফলে সেখানেই থেমে গেছে তার শিক্ষাজীবন। আর্থিক অস্বচ্ছলতায় লেখাপড়া করতে না পারলেও আক্ষেপ নেই তার।

নার্সারি প্রতিষ্ঠার ১৬ বছরের মাথায় তার স্বপ্নে নতুন পালক হিসেবে যুক্ত হয়েছে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদান। বান্দরবান থেকে সংগ্রহ করা তিন কেজি এপিজিক কেঁচো আর চারটি ট্যাঙ্কে ও দশটি রিংয়ে দিয়েই তার পদযাত্রা।

মাত্র ছয় মাসে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদান করে সাফল্য পেয়েছেন পানছড়ির আব্দুল হালিম। বর্তমানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদানের স্বপ্ন দেখছেন এ যুবক। এজন্য তিনি সরকারি ঋণ সহায়তা প্রদানেরও দাবি জানান।

পানছড়ির মোহাম্মদপুর গ্রামের বাসিন্দা গাউছিয়া নার্সারির মালিক মো. আব্দুল হালিম ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদন ও বিপণনে নিজের সংসারে সমৃদ্ধি এনেছেন। নিজের নার্সারিতে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার ব্যবহার করার পাশাপাশি প্রতি মাসে এক টনেরও বেশি জৈব সার বিক্রি করে বাড়তি আয় করছেন। স্থানীয় কৃষকদের পাশাপাশি পানছড়ি বাজারে সার বিক্রেতারাও নেন কেঁচো সার। ভার্মি কম্পোস্ট সারের পাশাপাশি সার উৎপাদনকারি বিশেষ কেঁচোও বিক্রি করছেন তিনি। নিজের পাশাপাশি বাবা-মা আর ডিগ্রি পড়ুয়া ছোট ভাইয়ের ঘামঝরা পরিশ্রমে স্বপ্নের পথে হাঁটছেন আবদুল হালিম।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার একটি ফসল বা গাছের সুষম খাদ্যের যোগান দেয়। যেখানে রাসায়নিক সারে কেবল এক বা দুইটি খাদ্য উপাদান থাকে সেখানে ভার্মি কম্পোস্টে রয়েছে সুষম খাদ্য উপাদান।

কেঁচো সার উৎপাদনে এপিজিক ও এন্ডিজিক নামক কেঁচো ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর ফলে মাটিতে অণুজীবের পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি মাটিতে বাতাসের চলাচলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। সাধারণত রিং পদ্ধতিতে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদিত হয়।

কলার বাকলসহ বিভিন্ন ঘাস, লতার দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে প্রায় এক সপ্তাহ রেখে দিতে হয়। পরে রিংয়ের মধ্যে ২০০ গ্রাম এপিজিক ও এন্ডিজিক কেঁচো মিশিয়ে রাখতে হয়। এভাবেই তৈরি হয় ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার। এ সার মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে অত্যন্ত কার্যকর ও পরিবেশ বান্ধব।

কেঁচো সার উৎপাদনে তরুণ উদ্যোক্তা আব্দুল হালিমের সাফল্যে অনেকেই ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছেন জানিয়ে পানছড়ির উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা অরুণাঙ্কর চাকমা জানান, রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমাতে কৃষকরা ভার্মি কম্পোস্ট সার বেছে নিচ্ছেন। তিনি বলেন, সরকার রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে জৈব সার ব্যবহারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে।

0 comments on “বাণিজ্যিকভাবে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনে সফলতা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক লেখা

আর্কাইভ