Tuesday, 29 July, 2025

সর্বাধিক পঠিত

হঠাৎ বন্যায় তাড়াশে ডুবে যাচ্ছে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন


সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মাগুড়াবিনোদ এলাকার কৃষক মো. আজগার আলী সাত বিঘা জমিতে ব্রি-২৯ জাতের বোরো ধান চাষ করেছিলেন। ঈদের পরপরই ধান কাটার পরিকল্পনা থাকলেও হঠাৎ কয়েক দিনের ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে তার জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কৃষক আজগার আলীর দাবি, এবার হয়তো তার পরিবারের খাদ্য চাহিদা পূরণেই সমস্যা হবে।

ডুবে যাওয়া জমির ধান কিছুটা কাটলেও অধিকাংশই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কোমরসমান পানিতে দাঁড়িয়ে চড়া মজুরিতে শ্রমিক এনে ধান কাটা হচ্ছে। কেউ কেউ পলিথিন দিয়ে তৈরি নৌকায় করে ধান তুলছেন, তবে তা সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। অপরদিকে, অনেক কৃষক শ্রমিক সংকটে এক মুঠো ধানও কাটতে পারছেন না।

আগাম জাতের ধান যারা চাষ করেছিলেন, তারা কিছুটা রক্ষা পেয়েছেন। বন্যার ১২-১৫ দিন আগেই তারা ধান ঘরে তুলতে পেরেছেন। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন যারা দেরিতে ধান চাষ করেছিলেন—নাবি জাতের বোরো আবাদি কৃষকরা।

আরো পড়ুন
রাক্ষুসী মাছ নিধনে ফসটক্সিন এর ব্যবহার এবং সতর্কতা

ফসটক্সিন (মূলত অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড) একটি অত্যন্ত বিষাক্ত রাসায়নিক, যা ফসফিন গ্যাস উৎপন্ন করে। এটি সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান Read more

ভিয়েতনামের সিদা ৫৫৫ ধানে বাজিমাত নরসিংদীতে ‘স্মার্ট কৃষক’!

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার পূর্বহরিপুর গ্রামের কৃষক আবদুর রহমান আউশ মৌসুমে ভিয়েতনামি উন্নত জাতের 'সিদা ৫৫৫' ধান চাষ করে অভাবনীয় সাফল্য Read more

সরেজমিনে দেখা গেছে, চলনবিলের খাদ্যশস্যের ভাণ্ডার খ্যাত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর; পাবনার ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর; নাটোরের গুরুদাসপুর ও সিংড়া উপজেলায় নিচু জমির পাকা ও আধা পাকা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। বহু কৃষক এখন শ্রমিক পাচ্ছেন না, হারভেস্টার যন্ত্রও জলাবদ্ধ জমিতে কার্যকর নয়।

তাড়াশ উপজেলার ঘরগ্রাম এলাকার কৃষক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, “সদর, সগুনা, মাগুড়াবিনোদ ও নওগাঁ ইউনিয়নের অন্তত ২৫-৩০টি গ্রামে পাকা ধান হাঁটু বা কোমর সমান পানির নিচে। আমাদের এখন ঈদের আনন্দ নয়, বরং কৃষি শ্রমিক ও যন্ত্রের সন্ধানে দিশেহারা অবস্থা।”

বন্যায় ডুবছে সগুনা ইউনিয়ন

সগুনা ইউনিয়নের কৃষক আবু হাশিম জানান, “চলনবিল এলাকার আটটি উপজেলার কৃষকের একই অবস্থা। সময়মতো ধান পাকেনি, তার উপর এই আকস্মিক বন্যা আমাদের সর্বনাশ করে দিয়েছে।”

তাড়াশ উপজেলার কুন্দইল এলাকার কৃষক মো. আয়নাল মন্ডল বলেন, “পানির মধ্যে যেসব জমিতে ধান জেগে আছে, সেখানে কাটতে বিঘা প্রতি ৯৫০০ থেকে ১০,০০০ টাকা খরচ হচ্ছে। হারভেস্টার ব্যবহারে বিঘা প্রতি খরচ ৪৫০০ থেকে ৫৫০০ টাকা। দিনমজুরও ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা মজুরি নিচ্ছেন। তবু প্রয়োজনমতো শ্রমিক বা যন্ত্র মিলছে না।”

তিনি আরও জানান, “সোমবার বিকাল পর্যন্ত পানির উচ্চতা বাড়ছিল। তাই ধান চোখের সামনে ডুবে যেতে দেখে আমরা অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েছি।”

এ বিষয়ে তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, “প্রকৃতির উপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। তবে আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি—যতটা সম্ভব দ্রুত ধান কেটে ঘরে তুলুন। প্রয়োজন হলে সহায়তা দেওয়া হবে।”

0 comments on “হঠাৎ বন্যায় তাড়াশে ডুবে যাচ্ছে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক লেখা

আর্কাইভ