আমন ধান কাটা প্রায় শেষের দিকে সারা দেশেই। এমন সময়ে সাধারণত দেশের সর্বত্রই চালের দাম কম থাকে। তবে সরবরাহ থাকলেও চালের দাম আরেক দফা বেড়েছে। পাইকারি ও খুচরা দুই বাজারেই সরু ও মাঝারি চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও চালের দাম কেজিতে এক থেকে দুই টাকা বেড়েছে।
মোটা চালের দাম ৩৩ টাকা থেকে ৪৮ টাকা
এদিকে খুচরায় মোটা চালের কেজি আবারও পৌঁছে গেছে ৪৮ টাকায়।
খোদ সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাব এটি।
কিন্তু ৫০ টাকার নিচে রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুরসহ বড় আবাসিক এলাকাগুলোতে মোটা চাল পাওয়া যাচ্ছে না।
এমনকি এসব চালের মধ্যে রয়েছে ভারত থেকে আমদানি করা চালও।
খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশ করা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত থেকে প্রতি কেজি মোটা চাল আমদানি করা হয় ৩২ টাকা ৭৫ পয়সায়।
যার অর্থ দাড়ায় প্রায় ৩৩ টাকা কেজি দরে আমদানি করে ওই চালে ব্যবসায়ীরা কেজি প্রতি অন্তত ১৫ টাকা করে মুনাফা করছেন।
গত বছর চালের দাম বাড়ার সাথে সাথে সরকার শুল্ক কমিয়ে চাল আমদানির সুযোগ দেয়।
চলতি বছরেও চাল আমদানির সেই সুযোগ অব্যাহত রয়েছে।
এরই মধ্যে বেসরকারি খাতের মাধ্যমে ২০ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
আগামীকাল বুধবার হতে ঢাকায় শুরু হবে উন্নয়নশীল দেশের জোট ডি-৮ মন্ত্রী পর্যায়ের সভা।
আজ মঙ্গলবার তা নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাককে চালের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকেরা।
তিনি উত্তরে জানান, চালের উৎপাদন প্রতিবছর বাড়ছে।
বাজারে পর্যাপ্ত চাল থাকার উল্লেখ করে তিনি জানান যে, বর্তমানে বিশ্ববাজারে গমের দাম বেড়েছে।
সেই সাথে দেশে ১০ লাখ রোহিঙ্গার কথাও তিনি উল্লেখ করে বলেন প্রতিবছর ২২-২৪ লাখ নতুন মুখ যোগ হচ্ছে।
এমনকি গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবেও চালের কিছু ব্যবহার হচ্ছে।
এসব বিষয়ের পাশাপাশি মুদ্রাস্ফীতির কারণেও চালের দাম কিছুটা বেশি।
মন্ত্রী দাবি করেন কিন্তু বাজারে গেলে চাল পাওয়া যায় না বা মানুষ কিনতে পারে না, এমন পরিস্থিতি নেই।
এ মুহূর্তে দেশে খাদ্যের কোনো সংকট নেই বলেও তিনি জোর দিয়ে বলেন।
অর্থনীতিবিদ ও চালের বাজার পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, আমদানি করা চাল মূলত বিভিন্ন হাত ঘুরে আসে।
আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা পর্যায়ে হাতবদল হয়ে ক্রেতার কাছে পৌঁছায়।
প্রতি কেজিতে একেক পর্যায়ে ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা পর্যন্ত মুনাফা করা হয় বলে ধরে নেওয়া হয়।
কিন্তু সেই হিসাবে চালের বাজারে ব্যবসায়ীরা অনেক বেশি মুনাফা করছেন।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের সাবেক গবেষণা পরিচালক এম আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, চালের বাজার নিয়ে গত তিন বছর ধরেই অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটছে।
চালের দাম একেক সময় একেক অছিলায় বাড়ছে।
কিন্তু দেশে এ নিয়ে কোনো বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়ন হয়নি।
এটির খুব দরকার, নাহলে দেশে বড় দুর্যোগ এলে চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।