Friday, 26 September, 2025

বিদেশি আনারসের পরীক্ষামূলক চাষে সাফল্য, নতুন দিগন্তের হাতছানি


দেশে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে ভালো ফলন পাওয়া গেছে ফিলিপাইনের বিখ্যাত ‘এমডি-২’ জাতের আনারসের। কৃষি বিভাগ মনে করছে, এই সাফল্য দেশের কৃষি অর্থনীতিতে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। বিশেষ করে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে এই জাতের আনারস তার গুণ, মান ও স্বাদে সবাইকে চমকে দিয়েছে।

পরীক্ষামূলক চাষ: আশার আলো

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলসহ টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলার ৩৮০ জন কৃষককে বিনামূল্যে ২ হাজার ২৫০টি করে এমডি-২ আনারসের চারা দেওয়া হয়েছিল। শ্রীমঙ্গলের রাধানগর ডলুছড়া ও মহাজিরাবাদ এলাকায় প্রায় পাঁচ হেক্টর জমিতে এই আনারসের চাষ হয়। স্থানীয় কৃষি অফিস জানিয়েছে, হেক্টর প্রতি ১৫ থেকে ১৬ টন ফলন পাওয়া যাচ্ছে, যা দেশি জাতের তুলনায় অনেক বেশি।

আরো পড়ুন
ধানের বাম্পার ফলন: ফুল ফোটার সময় কৃষকের করণীয়

বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য ধান। এ দেশের কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা এই ফসলের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। ধানের ফলন বাড়াতে হলে এর Read more

ঢাকায় শুরু হলো আগ্রোফরেস্ট্রি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা এবং গ্রামীণ জীবিকা উন্নয়নের লক্ষ্যে ঢাকায় শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী আঞ্চলিক বিশেষজ্ঞ বৈঠক। মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫) Read more

‘গোল্ডেন সুইট’ বা ‘এক্সট্রা সুইট পাইনআপেল’ নামে বিশ্বজুড়ে পরিচিত এই আনারস শুধু স্বাদে নয়, পুষ্টিতেও অনন্য। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং হজম সহায়ক ব্রোমেলিন এনজাইম রয়েছে। সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, দেশি আনারসের মতো এটি সহজে পচে যায় না। পাকা ফল ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত ভালো থাকে, যা রপ্তানির জন্য অত্যন্ত জরুরি।

কৃষকের মুখে হাসি

শ্রীমঙ্গলের ডলুছড়া গ্রামের কৃষক আতর আলী তার ২২ শতাংশ জমিতে ২,২৫০টি চারা লাগিয়েছিলেন। তিনি জানান, এরই মধ্যে ৪০ হাজার টাকার আনারস বিক্রি করেছেন এবং সামনের রমজান মাসে আরও ভালো বিক্রির আশা করছেন। তিনি বলেন, “আমাদের দেশি আনারস দ্রুত পচে যায়, কিন্তু এই জাতের আনারস পাকার পরও অনেক দিন ভালো থাকে। আমাদের জন্য এই জাতটি খুবই উপকারী হবে।”

মহাজিরাবাদ গ্রামের কৃষক শফিক মিয়াও তার ৩০ শতাংশ জমিতে এমডি-২ আনারসের চাষ করেছেন এবং ভালো ফলনের প্রত্যাশা করছেন।

কৃষি বিভাগের বক্তব্য

শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, “আমাদের এলাকার মাটি এই আনারস চাষের জন্য বেশ উপযোগী। পরীক্ষামূলক ফলাফল দেখে আমরা এই জাতের আনারস ব্যাপক হারে চাষ করার কথা ভাবছি। এটি স্থানীয় জাতের চেয়ে অনেক বেশি ফলনশীল ও রসালো।”

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি বলেন, “এমডি-২ আনারসের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি সহজে নষ্ট হয় না, দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় এবং রপ্তানিযোগ্য মান বজায় থাকে। তাই এটি বাংলাদেশের ফল উৎপাদনে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।”

এই পরীক্ষামূলক সাফল্য যদি বাণিজ্যিক উৎপাদনে রূপ নেয়, তবে বাংলাদেশের কৃষি খাত নতুন এক উচ্চতায় পৌঁছাবে বলে আশা করা যায়।

0 comments on “বিদেশি আনারসের পরীক্ষামূলক চাষে সাফল্য, নতুন দিগন্তের হাতছানি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক লেখা

আর্কাইভ