এবার তিস্তায় জেগে উঠেছিল বড় বড় চর বর্ষা চলে যাওয়ার পরে। তিস্তা পারের মানুষেরা বানে ভেসে যাওয়া খড়কুটো কুড়িয়ে নতুন করে ঘর বাঁধেন। চরের মাটিতে বাঁচার তাগিদে বিভিন্ন ফসলের চাষ করেন মাঠে পোড়া মানুষগুলো। চরজুড়ে চাষ হয় মিষ্টিকুমড়া, বাদাম, আলু আর আমন ধানের। তিস্তার চর সবুজে ভরে ওঠে। কিন্তু বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় সে চাষকৃত ফসল। একদিনের বন্যার পর বালিচাপা পড়া ধান সংগ্রহ করছে কৃষক এখন।
সোনালি রং ধারণ করেছিল সবুজ গাছে থাকা আধা পাকা ধান।
কিন্তু সেই ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আকস্মিক বন্যায়।
সোনালি ধান বালুচাপা পড়ে আছে এক দিনের বন্যায় ।
গত মঙ্গলবার রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুর গ্রামে শেখ হাসিনা সেতুর নিচে কৃষক মোফাজ্জল হোসেন (৩৩) চারজন শ্রমিক নিয়ে বালুতে চাপা পড়া সেই ধান টেনে বের করছিলেন।
চোখেমুখে হতাশার ছাপ ছিল।
কৃষক মোফাজ্জল হোসেন জানান যে, দিন দিন তিস্তা শুকিয়ে মরে যাবার উপক্রম।
কিন্তু গত ২০ অক্টোবর কি থেকে কি হল তা কেউ বুঝতে পারেনি।
আধা ঘণ্টার মধ্যেই তিস্তা সম্পূর্ণ উপচে উঠেছিল।
তিনি আরও বলেন, তার তিন একর জমির ধান অ্যালা বালির তলায় পড়ে গেছে।
হতাশভরা কন্ঠে তিনি জানান যে তার দেড় একর জমির কুমড়া খেত শেষ হয়ে গেছে।
এক দিনের হঠাৎ সৃষ্ট বন্যায় শুধু মোফাজ্জল নয়, তিস্তার বিভিন্ন চরের শত শত কৃষকের হাজার একরের সোনালি ফসল নষ্ট হয়েছে।
গত ২০ অক্টোবর গজল ডোবার সব দরজা খুলে দেওয়া হয়। এতে ওই দিন তিস্তা ফুলে ফেঁপে উঠেছিল।
গত ২২ অক্টোবর বন্যার পানি কমে গিয়ে ভেসে উঠেছে চর।
চরজুড়ে এখন কেবল ভেসে বেড়াচ্ছে কৃষকের হাহাকার।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, হঠাৎ সৃষ্ট বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে গঙ্গাচড়ার ১ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমির আমন ধান, ৩০ হেক্টর জমির বাদাম, ১০ হেক্টর জমির আলু এবং ২৫ হেক্টর জমির কুমড়া খেত।
কৃষক শহিদুল ইসলাম কাঠফাটা রোদে পাঁচজন কৃষক নিয়ে বানে পচে যাওয়া আমন খেতের খড় সরাচ্ছিলেন।
তিনি জানান যে বন্যায় তার সকল কিছু শেষ হয়ে গেছে।
আবাদ না করলে তো না খেয়ে মরতে হবে তাই জমি পরিষ্কার করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান যে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করেপাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ েআসলে কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া হবে।