দুর্গম চরাঞ্চলে কৃষিতে বিপ্লব ঘটেছে মানিকগঞ্জে। আগে শুধুমাত্র হাতেগোনা কয়েকটি ফসল চাষাবাদ হতো এ অঞ্চলে। কিন্তু এখন সবজিসহ প্রায় সব ধরণের ফসলের চাষ হচ্ছে এখানে। চাষের আওতায় অনেক অনাবাদি জমি এসেছে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করা চরের মানুষ কৃষিতে নির্ভর করেই সুদিনের স্বপ্ন দেখছেন। দুর্গম চরাঞ্চলে কৃষিতে বিপ্লব ঘটাচ্ছে এই লড়াকু মানুষগুলো।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, মানিকগঞ্জের হরিরামপুর, শিবালয় ও দৌলতপুর উপজেলায় পদ্মা-যমুনার মোট দুর্গম চর রয়েছে ৩১টি। এর মধ্যে মূল ভূখণ্ড থেকে ২৮টি চর বিচ্ছিন্ন। ভূখণ্ডের সাথে বাকি ৩টি চর সম্পৃক্ত। আর এই দুর্গম চরাঞ্চলে কৃষিতে বিপ্লব ঘটেছে।
মোট জমির ৬০ ভাগ কৃষি চাষের আওতায় এসেছে
চরাঞ্চলে থাকা এই জমির মোট আয়তন ২৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর।
মোট আয়তনে কৃষি চাষের আওতায় প্রায় ৬০ ভাগ জমি এসেছে।
যমুনা নদীর সবচেয়ে বড় চর শিবালয় উপজেলার আলোকদিয়া চর।
যাতায়াতে নৌকায় ভরসা দুর্গম এই চরে এখন কৃষক-কৃষাণীর ফসলের মাঠে নানা কাজে ব্যস্ততার দৃশ্য।
কেউ পাকা ফসল ঘরে তুলছেন তো কেউ নতুন জমি প্রস্তুত করছেন।
সবজি ক্ষেতের পরিচর্যা করতে দেখা যায় অনেককেই।
চাষিদের সাথে এ বিষয়ে কথা হয়।
তারা জানান যে, চরের জমি আগের চেয়ে অনেক বেশি উর্বর হয়েছে। তাই বিভিন্ন জায়গার তুলনায় ফলন বেশি হচ্ছে বলে জানান চাষিরা।
চাষিরা বলেন প্রতিবছর নদী ভাঙনের ফলে তাদের কৃষি জমি কমে যাচ্ছে।
তবে আগের চেয়ে চাষাবাদ বেড়ে গেছে বিধায় চরের চাষযোগ্য কোনো জমিই এখন আর খালি নেই।
বালুর পরিমাণ কমে গিয়ে পলির পরিমাণ বেড়েছে
স্থানীয় ইউপি সদস্য বলেন, আগে হাতেগোনা কয়েকটি ফসল যেমন চীনাবাদাম, তিল ও কাউনসহ কয়েকটি ফসলের চাষ হতো।
কিন্তু বর্তমানে চিত্র পাল্টে গেছে, হচ্ছে ধান, সরিষা, ভুট্টা, ধনেপাতা, পেঁয়াজ, রসুন, লাউ, সিম, বেগুন ও টমেটোসহ বিভিন্ন ফসল।
মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু মো. এনায়েত উল্লাহ।
তিনি জানান, চরে আগে বালু মাটির পরিমাণ ছিল বেশি।
কিন্তু বালুর পরিমাণ ধীরে ধীরে কমে এখন পলির পরিমাণ বাড়ছে।
যার কারণে চাষাবাদের আওতায় আসছে চরের জমি।
চরে বর্তমানে দুই ফসলি জমির পরিমাণ প্রায় ৮ হাজার হেক্টর।
অন্যদিকে তিন ফসলি জমি প্রায় ৪ হাজার হেক্টর এবং এক ফসলি জমি রয়েছে ৭০০ হেক্টর।
বর্তমানে চরে বিভিন্ন খাদ্য শষ্য, তেল ও ডাল জাতীয় ফসল এবং সবজিসহ প্রায় ১৫ থেকে ২০ প্রকারের ফসল আবাদ হচ্ছে।
কৃষি বিভাগ থেকে চরের কৃষকদের আধুনিক চাষাবাদে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
সেই সাথে বিভিন্ন সরকারি প্রণোদনা প্রদান করা হচ্ছে।