Friday, 20 June, 2025

সর্বাধিক পঠিত

চাল-তেল বাজারে অস্থিরতা: দায় চাপানো চলছে একে অপরের ঘাড়ে


জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর স্বীকার করেছে চাল ও তেলের বাজারে অস্থিরতা রয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা এ অভিযোগ মানতে নারাজ। চাল ব্যবসায়ীদের দাবি, খুচরা বাজারে কোথাও কোথাও সংকট থাকলেও সার্বিকভাবে সরবরাহ বা উৎপাদনে কোনো সমস্যা নেই। তাহলে দাম এত বাড়ছে কেন—সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

চালের দাম বাড়ার পেছনে সিন্ডিকেটের কথা শোনা যাচ্ছে। অথচ জানুয়ারিতেই ১৩ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, দেশের সরকারি গুদামে এখনও প্রায় ৯ লাখ ৮৭ হাজার মেট্রিক টন চাল মজুদ আছে। তারপরও কারওয়ান বাজারসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে গুটিস্বর্ণা, পাইজাম, বিআর-২৮ ও মিনিকেট জাতের চালের দাম এক সপ্তাহে ২ থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

মিনিকেট চালের কেজি এখন ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আরো পড়ুন
পুকুরে বা ঘেরে ভেনামি চিংড়ি চাষের পদ্ধতি, করণীয় ও বর্জনীয়

ভেনামি চিংড়ি (Litopenaeus vannamei) চাষ বর্তমানে বাংলাদেশে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি খাত। এটি বাগদা চিংড়ির চেয়ে অনেক দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং Read more

দেশীয় গবাদিপশুকে বিশ্বমানে উন্নীত করা সম্ভব: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার

দেশীয় জাতের গবাদিপশুকে বিশ্বমানের পর্যায়ে উন্নীত করা সম্ভব, যদি উৎপাদনে যথাযথ সহায়তা এবং আধুনিক পদ্ধতির নিশ্চয়তা দেওয়া যায়। গতকাল মঙ্গলবার Read more

বাংলাদেশ অটো রাইসমিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম খোরশেদ আলম অভিযোগ করেন, দেশের উত্তরাঞ্চলের কিছু চালকল মালিক ও কর্পোরেট গ্রুপ মিলে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে। তিনি বলেন, “যে কোনো তালামারা গুদামে অভিযান চালালেই মজুদ পাওয়া যাবে।” তবে নওগাঁর চালকল মালিকরা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, “সরকারের হাতে বাজার নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নেই। মনিটরিং জোরদার না হলে এই পরিস্থিতির সমাধান হবে না।”

তেলের বাজারেও একই চিত্র। পর্যাপ্ত আমদানি থাকা সত্ত্বেও বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট কাটেনি। ব্যবসায়ীরা রোজার শুরুতে সংকট কাটানোর আশ্বাস দিলেও বাস্তবে কার্যকর কিছু হয়নি। কলাবাগানের দোকানদাররা বলছেন, চাহিদা অনুযায়ী তেল পাওয়া যাচ্ছে না। বড় ব্যবসায়ীরা তেলের সঙ্গে অন্য পণ্য কিনতে বাধ্য করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যমতে, গত বছরের তুলনায় দেড় লাখ টন বেশি সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে। তবুও বাজারে সংকট রয়েছে। ভোক্তা অধিদপ্তরের তদন্ত চলছে, শিগগিরই দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের পরিচালক ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন।

এদিকে শাকসবজি, ডিম, মুরগি, গরুর মাংস ও মাছের দাম স্থিতিশীল থাকলেও পেঁয়াজ চাষিরা পড়েছেন বড় বিপাকে। ঢাকায় মুড়িকাটা পেঁয়াজের কেজি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আর হালি পেঁয়াজ ৫০ টাকায়। রাজবাড়ির কৃষক প্রাণেশ বিশ্বাস বলেন,

“২৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করে উৎপাদন খরচও উঠছে না।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময়মতো কৃষি পরিকল্পনা না থাকায় পেঁয়াজের এমন সংকট তৈরি হয়েছে। কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের নেতা এস এম নাজের হোসাইন মনে করেন, অধিকাংশ পণ্যের বাজার স্থিতিশীল হলেও চাল-তেলের সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারাই বড় সমস্যা। বড় ব্যবসায়ীদের প্রভাব সরকারের পদক্ষেপকে আটকে দিচ্ছে।

জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের বাংলা সংস্করণের হয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন হারুন উর রশীদ স্বপন। এই প্রতিবেদনের সব ধরনের দায়ভার ডয়চে ভেলের। 

0 comments on “চাল-তেল বাজারে অস্থিরতা: দায় চাপানো চলছে একে অপরের ঘাড়ে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আর্কাইভ