প্রতিবছর হিমাগারে আলু সংরক্ষণের জন্য চাষিরা ধরনা দিতেন। কিন্তু এবার চিত্রপট একদম উল্টো। হিমাগার কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে সুবিধা দেওয়ার কথা বলছে। কিন্তু চাষিদের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাচ্ছে না তারা। আলুর অভাবে হিমাগার খালিই পড়ে আছে। এ অবস্থা আরও বাড়ার আশঙ্কায় হিমাগার মালিকেরা। আলুর অভাবে হিমাগার খালি থাকার এমন ঘটনা ঘটেছে রংপুর জেলায়।
জেলার বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ উপজেলার ছয়টি হিমাগারে একই চিত্র দেখা গেছে।
কৃষকেরা জানান, গত মৌসুমে হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করেছেন।
এতে অনেক কৃষককে লোকসান গুনতে হয়েছে।
তাছাড়া এবার হিমাগারের ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে।
বর্তমানে খেত থেকে আলু বিক্রি করে চাষিরা লাভ পাচ্ছেন।
তাই হিমাগারে আলু সংরক্ষণে অনীহা দেখাচ্ছেন তারা।
তবে চলতি মৌসুমে দুটি উপজেলাতে আলুর আবাদও কমেছে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত মৌসুমে বদরগঞ্জে আলুর চাষ হয়েছিল ৩ হাজার ২৩৫ হেক্টর জমিতে।
কিন্তু এবছর ২ হাজার ৬৭৫ হেক্টরে চাষ হয়েছে।
অন্যদিকে তারাগঞ্জ উপজেলায় গত মৌসুমে ৩ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল।
তার বিপরীতে এবার ৩ হাজার ১০৫ হেক্টরে আলুর চাষ হয়েছে।
দুই উপজেলায় আলুর আবাদ কমেছে ৭৮৫ হেক্টর জমিতে।
উপজেলা দুটিতে হিমাগার রয়েছে ছয়টি যাতে মোট ধারণক্ষমতা ৮ লাখ ৪৫ হাজার বস্তা।
দুই উপজেলার বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও আলুচাষির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে খেত থেকেই আলু বিক্রয় হচ্ছে।
এতে উফশী জাতের আলু প্রতি কেজি গড়ে ১২ টাকায় ও স্থানীয় জাতের আলু বিক্রি হচ্ছে ২০-২২ টাকায়।
এ কারনে উৎপাদন খরচ বাদ দিলেও চাষিরা ভালো মুনাফা পাচ্ছেন।
আর তাই ঝুটঝামেলা এড়াতে সংরক্ষণের দিকে যাচ্ছেন না।
খেত থেকেই সরাসরি আলু বিক্রি করে দিচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বদরগঞ্জ উপজেলার তিনটি হিমাগার।
তাদের মোট সংরক্ষণ ক্ষমতা ৫ লাখ ২০ হাজার বস্তা।
কিন্তু সেখানে আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে ২ লাখ ৩০ বস্তা।
হিমাগার–সংশ্লিষ্টরা জানান, হিমাগারে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা আলু সংরক্ষণের জন্য ২৬০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।
সরকারি নির্দেশনা অনুসারে ৫০ কেজির বেশি ওজনের বস্তা হিমাগারে রাখা নিষিদ্ধ।
গত মৌসুমে হিমাগারে আলু রাখার কারণে লোকসান গুনেছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
এ কারণে এবছর আলুর আবাদ অনেক কমে গেছে।
বদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা কনক চন্দ্র রায়।
তিনি বলেন, গত বছর আলুতে লোকসান হয়।
তাই চাষিরা অনেকে জমিতে শর্ষে ও ভুট্টা লাগিয়েছেন।
এ কারণে আলুর আবাদ কমে গেছে।
এতে দাম ভালো পেয়ে জমি থেকে আলু বিক্রি করছে।
যার কারণে হিমাগারে আলুর সরবরাহ কমেছে।