আমাদের দেশ কৃষি প্রধান দেশ। আর কৃষি প্রধান দেশে শীতকালে প্রায়ই দেখা দেয় তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। তীব্র শৈত্যপ্রবাহে ধানের বীজতলার যত্ন না নিলে তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আর তাই এসময় ধানের বীজতলার বাড়তি যত্ন নিতে হয় একটু আলাদাভাবে। তীব্র শৈত্যপ্রবাহে ধানের বীজতলার যত্ন নিতে কিছু জরুরি বিষয়ে কৃষকদের ভালভাবে জানতে হয়।
সাধারণ তীব্র শৈত্যপ্রবাহের কারণে বোরো ধানের চারা প্রথমে ক্রমশ হলুদাভ হয়ে যায়। এরপর ধীরে ধীরে মারা যায়। তাই শৈত্যপ্রবাহে ধানের বীজতলার যত্ন সম্পর্কে বিশেষ নজর দিতে হয়।
আবার শীতের প্রকোপে পাতা পোড়া ঝলসানো রোগ হয়।
এই রোগের কারণেও মারা যেতে পারে।
শৈত্যপ্রবাহে বীজতলায় পানি ধরে রাখতে হয়, ঢেকে দিতে হবে পলিথিন দিয়ে
আমাদের দেশে রংপুর ও দিনাজপুর অঞ্চলে শীতের স্থায়িত্ব ও তীব্রতা দেশের আর সব জায়গার তুলনায় অনেক বেশি হয়।
আর তাই এসকল অঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হলে বীজতলা রক্ষায় বাড়তি কিছু যত্ন নিতে হয়।
প্রথমত বীজতলা ঢেকে দেবার ব্যবস্থা করতে হয়।
যদি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয় তাহলে বীজতলা স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।
অন্তত সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢেকে রাখতে হবে।
শীতকাল শুষ্ক থাকে বিধায় বীজতলায় ৩ থেকে ৫ সেন্টিমিটার পানি ধরে রাখতে হবে।
গভীর নলকূপের পানি ব্যবহার করুন সেক্ষেত্রে।
প্রতিদিন সকালে বীজতলায় পানি বের করে দিয়ে নতুন পানি দিতে হবে।
প্রতিদিন সকালে ঝরিয়ে দিতে হবে জমাকৃত শিশির।
চারা পোড়া রোগে ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে
এ সময় আরেকটি সমস্যা হল চারা পোড়া রোগ।
এটি দমনের জন্য রোগের প্রাথমিক অবস্থায় ছত্রাকনাশক স্প্রে করুন।
এক্ষেত্রে প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলিমিটার অজোঅক্সিটোবিন বা পাইরোক্লাস্টবিন জাতীয় ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে পারেন।
বীজতলায় যদি কোন কারণে চারা হলুদ হয়ে যায় তাহলে নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ করুন।
প্রতি শতক জমিতে ২৮০ গ্রাম হারে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে।
ইউরিয়া সার প্রয়োগের পরেও যদি চারা সবুজ না হয় তাহলে প্রতি শতক জমিতে ৪০০ গ্রাম হারে জিপসাম সার প্রয়োগ করুন।
রোপণ করার জন্য কমপক্ষে ৩৫ থেকে ৪০ দিনের চারা ব্যবহার করা উচিত।
এরকম বয়সের চারা রোপণ করলে চারার মৃত্যুহার কমে যায়।
চারা থাকে সতেজ এবং ফলন অনেক বেশি হয়।
চারা রোপণের সময় যদি শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয় তাহলে কয়েকদিন দেরি করুন।
এরপর তাপমাত্রা স্বাভাবিক হলে তবেই চারা রোপণ করুন, এতে ফল ভালো হবে।
যদি চারা রোপণের পর শৈত্যপ্রবাহ হয় তাহলে জমিতে ৫ থেকে ৭ সেন্টিমিটার পানি ধরে রাখতে হবে।
শীতের তীব্রতা ও চারার বয়স বিবেচনায় সমন্বিত ব্যবস্থাপনা অনুশীলন করতে হবে।
এতে সুস্থ ও রোগমুক্ত চারা উৎপাদনের মাধ্যমে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব।