
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে চিংড়ি চাষ একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়ের উৎস। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভ্যানামি / ভেনামি (Litopenaeus vannamei) চিংড়ি চাষের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে, কারণ এটি দ্রুত বৃদ্ধি পায়, উৎপাদন বেশি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা স্থিতিশীল। কিন্তু সফল চাষের প্রথম ধাপ শুরু হয় সঠিক মান ও আকারের পোস্টলার্ভা (PL) নির্বাচন দিয়ে।
পোস্টলার্ভা কী এবং PL15 মানে কী?
চিংড়ির জীবনচক্রে ডিম থেকে লার্ভা, তারপর পোস্টলার্ভা পর্যায়ে আসে। PL-এর পরবর্তী সংখ্যা (যেমন PL15) বোঝায় ডিম ফুটে বের হওয়ার পর কত দিন হয়েছে। PL15 মানে হলো পোস্টলার্ভা ১৫ দিন বয়সী। এই সময়ে চিংড়ির দেহের গঠন তুলনামূলকভাবে স্পষ্ট হয়, সাঁতার কাটার ক্ষমতা ভালো থাকে এবং পুকুরে ছাড়ার জন্য উপযুক্ত হয়।
সঠিক আকার কেন গুরুত্বপূর্ণ?
- বেঁচে থাকার হার বৃদ্ধি: খুব ছোট বা অপরিণত PL ঘেরে বা পুকুরের পরিবেশে টিকে থাকতে পারে না।
- সমান বৃদ্ধি: একই আকারের PL দিলে চাষের সময় চিংড়ির আকারে বৈষম্য কম হয়।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: সঠিকভাবে পরিপক্ক PL রোগের ঝুঁকি কমায়।
কীভাবে PL-এর আকার ও মান যাচাই করবেন
- দৈর্ঘ্য মাপা: PL15 সাধারণত 10–12 মিমি লম্বা হয়।
- শরীরের স্বচ্ছতা: সুস্থ PL-এর দেহ স্বচ্ছ ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ স্পষ্ট দেখা যায়।
- সাঁতারের ধরণ: সক্রিয়ভাবে সাঁতার কাটে এবং পানির স্রোতের বিপরীতে চলতে পারে।
- খাদ্য গ্রহণ: সুস্থ PL খাবারের প্রতি সাড়া দেয়।

চাষিদের জন্য পরামর্শ
- শুধুমাত্র বিশ্বস্ত হ্যাচারি থেকে PL সংগ্রহ করুন।
- PL কেনার আগে মাইক্রোস্কোপ বা লুপ দিয়ে পরীক্ষা করুন।
- PL-এর বয়স, আকার ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে লিখিত তথ্য সংগ্রহ করুন।
- পুকুরে ছাড়ার আগে অভ্যস্তকরণ (acclimatization) প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন।
চিংড়ি চাষে লাভবান হতে হলে শুরুতেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। PL15-এর মতো সঠিক আকার ও মানের পোস্টলার্ভা নির্বাচন করলে উৎপাদনশীলতা বাড়ে, রোগের ঝুঁকি কমে এবং বাজারে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকা যায়। মনে রাখবেন—আপনার পোস্টলার্ভার আকারই আপনার চাষের সাফল্যের প্রথম চাবিকাঠি।