
ক্ষুরা রোগ বা ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ (FMD) একটি অত্যন্ত সংক্রামক ভাইরাসজনিত রোগ, যা গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও শুকরের মতো দ্বিখুরবিশিষ্ট প্রাণীতে দেখা যায়। বাংলাদেশে প্রধানত A, O ও Asia-1 সিরোটাইপের ভাইরাস বেশি পাওয়া যায়। বাংলাদেশে বর্তমানে ক্ষুরা রোগ প্রতিরোধে ট্রাইভ্যালেন্ট (O, A, Asia-1) টিকা ব্যবহৃত হয়, যা দেশে বিদ্যমান তিনটি প্রধান ভাইরাস টাইপের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়
রোগের লক্ষণ
এই রোগে আক্রান্ত হলে নিমোক্ত লক্ষন দেখা যায়।
- হঠাৎ জ্বর (৪০° সেলসিয়াস পর্যন্ত)
- মুখ, জিহ্বা, ঠোঁট ও ক্ষুরে ফোসকা
- অতিরিক্ত লালা ঝরা
- খুঁড়িয়ে হাঁটা বা পা দিয়ে মাটি ঠোকানো
- দুধ উৎপাদন হ্রাস
- বাছুরে হঠাৎ মৃত্যু (টাইগার হার্ট সিনড্রোম)
রোগ ছড়ানোর উপায়
- আক্রান্ত পশুর লালা, দুধ, মলমূত্র ও নিঃশ্বাস
- দূষিত খাদ্য, পানি বা যন্ত্রপাতি
- মানুষ, কুকুর, পাখি বা যানবাহনের মাধ্যমে পরোক্ষ সংক্রমণ
ক্ষুরা রোগ নিয়ন্ত্রণে করণীয়
১. টিকাদান কর্মসূচি জোরদার
- প্রতি ৬ মাস অন্তর গবাদিপশুকে ক্ষুর রোগের টিকা দিন।
- নতুন পশু খামারে আনার আগে কোয়ারেন্টাইনে রাখুন।
২. আক্রান্ত পশু আলাদা রাখা
- অসুস্থ পশুকে সুস্থ পশুর কাছ থেকে আলাদা করে শুকনো ও পরিষ্কার স্থানে রাখুন।
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ ও সাপোর্টিভ কেয়ার দিন।
৩. খামার জীবাণুমুক্ত রাখা
- নিয়মিত চুন, ব্লিচিং পাউডার বা অনুমোদিত জীবাণুনাশক ব্যবহার করুন।
- খামারে প্রবেশের আগে জুতা ও হাত জীবাণুমুক্ত করুন।
৪. খাদ্য ও পানির নিরাপত্তা
- পরিষ্কার পানি ও পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ করুন।
- দূষিত খাদ্য বা পানি ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।
৫. মৌসুমি সতর্কতা
- বর্ষা ও শীতের শুরুতে রোগের প্রকোপ বেশি হয়, তাই এ সময় বাড়তি সতর্কতা নিন।
সচেতনতা ও প্রশিক্ষণ
- খামারি, পশুপালক ও স্থানীয় জনগণকে রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিন।
- স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অফিসের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন।
ক্ষুরা রোগ নিয়ন্ত্রণে প্রতিরোধই সর্বোত্তম উপায়। নিয়মিত টিকাদান, খামার জীবাণুমুক্ত রাখা, আক্রান্ত পশু আলাদা করা এবং সচেতনতা বৃদ্ধি—এই চারটি পদক্ষেপ মেনে চললে গবাদিপশুর উৎপাদনশীলতা ও খামারের আর্থিক ক্ষতি অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব।