
দেশে গত ২০২৪-২৫ মৌসুমে আলু উৎপাদন হয়েছে এক কোটি ৩০ লাখ টন, যা চাহিদার তুলনায় ৪০ লাখ টন বেশি। কিন্তু চাহিদার অতিরিক্ত আলুর যথাযথ ব্যবহারের ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষক। হিমাগার খরচসহ ২৫ টাকায় প্রতি কেজি উৎপাদনের বিপরীতে তারা বিক্রি করছেন ১২ থেকে ১৩ টাকা। এই পরিস্থিতিতে উদ্বৃত্ত আলুর বহুবিধ ব্যবহার, সঠিক সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং রপ্তানি বাড়াতে দেশে প্রথমবারের মতো দুই দিনব্যাপী আলুর আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী করতে যাচ্ছেন হিমাগার মালিকরা। রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) আগামী ১২ থেকে ১৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ‘আলু উৎসব ২০২৫’ নামে এই প্রদর্শনী। বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
‘আলু উৎসব ২০২৫’ নামে এই প্রদর্শনীটি আগামী ১২ থেকে ১৩ ডিসেম্বর রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
প্রদর্শনীর মূল লক্ষ্য ও সুবিধা
বিসিএসএ জানিয়েছে, এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে আলু খাতে নতুন ব্যবসায়িক সুযোগ সৃষ্টি হবে, শিল্প খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়বে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলু রপ্তানির সম্ভাবনা আরও জোরদার হবে। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা ও মান নিয়ন্ত্রণের নিয়ম সম্পর্কে জানা যাবে।
প্রদর্শনীতে যেসব আধুনিক প্রযুক্তি ও কলাকৌশল তুলে ধরা হবে তার মধ্যে রয়েছে:
- আলুর উচ্চফলনশীল জাত এবং জলবায়ু সহনশীল চাষাবাদ পদ্ধতি।
- আলু চাষের জৈব কলাকৌশল।
- আধুনিক কোল্ডস্টোরেজ প্রযুক্তি, সৌরশক্তিচালিত সংরক্ষণ মডেল।
- দীর্ঘ সময় আলু ভালো রাখার প্যাকেজিং প্রযুক্তি।
- অটোমেশন, রোবটিকস এবং সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনায় ব্লকচেইনের ব্যবহার।
সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম
খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে সপ্তম স্থানে রয়েছে। কিন্তু সঠিক সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং রপ্তানির জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও নীতিমালার অভাবে এই খাতের পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এই বিশাল সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে এবং কৃষক, উদ্যোক্তা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে একটি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম দিতেই এই ‘আলু উৎসব’ আয়োজন করা হচ্ছে।
এতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, বিসিএসএ, বাংলাদেশ এগ্রো-প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) এবং অন্যান্য অংশীদার সংস্থা সহযোগিতা করছে।
বিসিএসএর সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী এগ্রোবিডি২৪ কে বলেন, “আলু শুধু একটি সবজি নয়; বরং এটি শিল্প ও রপ্তানির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করাই প্রদর্শনীর অন্যতম উদ্দেশ্য।” তিনি আরও জানান, এতে আলু উৎপাদন থেকে প্যাকেজিং পর্যন্ত সব পর্যায়ের আধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির সমাহার থাকবে। প্রদর্শনীর মাধ্যমে কৃষক, রপ্তানিকারক, প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের উদ্যোক্তা, প্রযুক্তি সরবরাহকারী এবং বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে সরাসরি বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করা হবে।
উদ্বৃত্ত আলুর পরিসংখ্যান
বিসিএসএ সূত্রে জানা গেছে, রেকর্ড পরিমাণ আলু উৎপাদন হওয়ার কারণে এবার প্রচুর আলু অবিক্রীত থাকার শঙ্কা রয়েছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের ৩৪০টি কোল্ডস্টোরেজে সংরক্ষিত আলুর পরিমাণ ছিল ৩২ লাখ ৭৪ হাজার টন। এর মধ্যে খাওয়ার আলুর পরিমাণ ২৩ লাখ ৩০ হাজার টন, বীজ আলু ৯ লাখ ২০ হাজার টন এবং শিল্পে ব্যবহারের আলু ২৩ হাজার টন।