দেশি মাগুর মাছের চাষ ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা করব কারন ৫০ শতক দেশি মাগুর মাছ চাষে ২৬৬,০০০ টাকা লাভ হয়। দেশি মাগুর মাছ সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং কাটা কম যুক্ত মাছ। শিং মাছের মত মাগুর মাছ পানির বাহিরে অনেক ক্ষন বেঁচে থাকতে পারে। পানির বাহিরে অনেকক্ষণ বেঁচে থাকতে পারায় এ মাছ বাজারে জীবিত বিক্রিয় করা যায় এবং অধিক দাম পাওয়া যায়।
মাগুর মাছ প্রাকৃতিক উৎস থেকে আর পাওয়া যায় না। পানি দুষন এবং অপরিকল্পিত মাছ আহরনে মাগুর মাছ আজ প্রাকৃতিক ভাবে বিলুপ্তির প্তহে। তবে কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি এবং আধুনিক চাষ পদ্ধতি প্রয়োগের ফলে মাগুর মাছ আজকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাচানো সম্ভব হয়েছে।
মাগুর মাছ কেন চাষ করবেন?
১। দেশি মাগুর মাছের পোনা এখন সহজল্ভ্য
২। দেশি মাগুর মাছ অধিক ঘনত্বে এবং মিশ্র চাষে করা যায়
৩। পানি ছাড়া অধিক সময় বাচে তাই জীবন্ত অবস্থায় বাজারজাত করা যায়
৪। তুলনা মুলক বাজার মূল্য অনন্য মাছের থেকে বেশি।
মাগুর মাছের জন্য পুকুর নির্বাচন ও প্রস্তুতিঃ
পুকুর নির্বাচন ও প্রস্তুতির জন্য নিমোক্ত কাজ পর্যায়ক্রমে করতে হবে।
- নার্সারি পুকুরে আয়তন ১০ থকে ৫০ শতক এবং পানির গভিরতা ৪ থেকে ৫ ফিট হলে ভাল।
- পুকুর হতে অবঞ্ছিত ও রাক্ষুসে মাছ এবং আগাছা দুর করতে হবে।
- পুকুরে শুকিয়ে অবঞ্ছিত ও রাক্ষুসে মাছ এবং আগাছা দুর করা উত্তম। তবে পুকুর শুকানো সম্ভব না হলে প্রতি শতাংশে ১ ফুট পানির জন্য ২৫-৩০ গ্রাম রোটেনন পাউডার অথবা ফোসটক্সিন ট্যাবলেট দিয়ে রাক্ষুসে মাছ দুর করা যায়।
- রোটেনন দেবার ৩-৪ দিন পর পুকুরে প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
- চুন প্রয়োগের ৩/৪ দিন পর প্রতি শতাংশে ৫-৭ কেজি গোবর, ১৫০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ৭৫ গ্রাম টিএস পি প্রয়োগ করতে হবে।
- নার্সারি পুকুরে ৩-৪ ফিট উচু মশারি জালের বেষ্টনি দিতে হবে যাতে সাপ ও ব্যাঙ পুকুরের ভিতরে ঢুকে রেনু ও পোনার ক্ষতি সাধন করতে না পারে।
- হাস পোকা দমনের জন্য রেনু পোনা মজুদের ২৪ ঘন্টা পূর্বে সুমিথিয়ন দিতে। সুমিথিয়নের ব্যবহারের পরিমান প্যাকের গায়ে লেখা অনুসরণ করা ভাল।
- পানির রং স্থির রাখতে প্রতি শতকে ২৫০ গ্রাম ব্রাইট গোল্ড (দানাদার) প্রয়োগ করা যেতে পারে।
- সার প্রয়োগের ৫-৭ দিন পর রেনু অথবা ২-৩ ইঞ্ছি সাইজের পোনা মজুদ করা যেতে পারে।
- পুকুরের তলায় যদি গ্যাস থাকে তাহলে গ্যাস উত্তোলন করার জন্য “গ্যাস টপ” ঔষধ দিতে হবে ।
মাগুর মাছের রেনু ও পোনা পরিচর্যাঃ
সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ বিষয় ভাল মানের হ্যাচারি থেকে রেনু সংগ্রহ এবং ভাল মানের রেনু সংগ্রহ।
মাগুর মাছের ডিম বা রেনুকে ডিমের সিদ্ধ কুসুম, টিউবিফেক্স ওয়ার্ম অথবা জু প্লাংক্টন খেতে দিতে হয়। সঠিক উপায়ে নার্সারি পুকুর প্রস্তুতির পর প্রতে শতাংশে ১০০ গ্রাম রেনু বা ডিম অথবা ৬০০০-৮০০০ পিস ৮ দিনের পোনা মজুদ করা যায়।মাগুর মাছের রেণু কে প্রথম তিন দিন সিদ্ধ ডিমের কুসুম খাওয়াতে হবে। ১ কেজি রেণুর জন্য প্রতিদিন সকলে ৮টি বিকাল বা রাতে ৮ টি ডিমের কুসুম খাওয়াতে হবে। সিদ্ধ ডিমের কুসুম গামছা দিয়ে ছেকে পরিষ্কার পানির সাথে ভাল করে মিশিয়ে সমস্ত পুকুরের সমান ভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে।
তিন দিন পরে প্যাকেট জাতীয় পাউডার ফিস ফিড দিতে হবে যেমন রেণু গোন্ড, টাইগার ব্রান্ড বা যেকোন নার্সারী ফিড। পাউডার ফিস ফিড পানির সাথে মিশিয়ে ভাল করে পুকুরের সমান ভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে। তবে নার্সারী ফিড এর সাথে সরিষার খৈল ভিজিয়ে মাছকে খাওয়ানো যাবে। প্রথম সপ্তাহে মাছের ওজনের সমপরিমান খাবার দিতে হবে। অর্থাৎ ১ কেজি রেণু জন্য প্রতিদিন ১ কেজি খাবার দিতে হবে। মাগুর মাছের রেণু প্রতিদিন এবং রাতে ৩ বেলা খাবার দিতে হবে। মাছ বড় হওয়ার সাথে সাথে মাছের খাবার আস্তে আস্তে বাড়িয়ে বডি ওজনের অনুসারে দিতে হবে।
নার্সারি পুকুরে ৫-১০ দিনের ধানী পোনা মজুদ করে দেড় মাসের মধ্যে অংগুলি পোনা পাওয়া যায়।
মাগুর মাছের রেনুর নার্সিং পুকুরে রোগ ব্যাবস্থাপনা:
ভাইরাস হল মাগুর মাছের রেণুর সবচেয়ে বড় সমস্যা। ভাইরাস একবার আক্রমন করলে মাগুর মাছকে আর বাঁচানো যায় না। সেজন্য প্রতিরোধ হিসাবে আগে থেকেই প্রতি শতাংশে ২ গ্রাম হারে টিমসেন বা ভাইরেক্স প্রয়োগ করতে হবে। তাছাড়া রোগ প্রতিরোগ ব্যবস্থা হিসাবে প্রতি সপ্তাহে লবণ ২০০ গ্রাম , পটাশ ২.৫ গ্রাম, পরিমাণ মত ভিটামিন সি প্রয়োগ করতে হবে।
পুকুরে যদি অক্সিজেনের অভাব হয় তাহলে অক্সিজেনের ট্যাবলেট অক্সি টেপ বা অক্সি গোল্ড অথবা অক্সিমোর প্রয়োগ করতে হবে। পুকুরের তলায় অতিরিক্ত এ্যামোনিয়া গ্যাস হলে আস্তে আস্তে হয়রা টানতে হবে অথবা গ্যাস উত্তোলনের জন্য গ্যাসোনেক্স প্রয়োগ করতে হবে।
মাগুর মাছের পুকুরে খাদ্য প্রয়োগঃ
মাগুর মাছের দেহে ওজনের ৪-৫ শতাংশ হারে ৩০-৩৫ শতাংশ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার দৈহিক সরবরাহ করা জরুরি। খাবার হিসাবে বাজারে রেডিমেট ফিস ফিড পাওয়া যায় সে গুলো ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া নিচের নিয়ম অনুসারে খাবার তৈরি করে দিতে পারেন।
খাদ্য উপাদান | ফর্মুলা ১ | ফর্মুলা ২ |
ফিস মিল | ৪০% | ২৫% |
বোন এবং মিট মিল | ০ | ১৫% |
সরিষার খৈল | ২০% | ২০% |
চালের কুড়া | ২০% | ২০% |
গমের ভুষি | ১৫% | ১৫% |
চিটা গুড় | ৪% | ৪% |
ভিটামিন ও খনিজ | ১% | ১% |
লবন | পরিমান মত | পরিমান মত |
মাছ আহরন ও উৎপাদন
পুকুরে জাল টেনে বেশির ভাগ মাছ ধরতে হবে এবং সম্পূর্ণ মাছ আহরন করতে হলে পুকুর শুকিয়ে ফেলতে হবে। প্রতি শতাংশে মাগুর মাছে ২৫ কেজি উৎপাদন করা যায়।
মাগুর চাষে আয় ও ব্যায়ঃ
৫০ শতক পুকুরে আয় ও ব্যয় নিয়ে আলোচনা করা যাক। যদিও এক এলাকাতে খরচের হার আলাদা আলাদা;
খরচের (ব্যায়ের) খাত | (ব্যায়) খরচ (টাকা) |
পুকুরের ভাড়া | ২০,০০০ |
শ্রমিক | ৮,০০০ |
পোনা | ২০,০০০ |
খাবার খরচ | ৫১,০০০ |
অন্যন্য খরচ | ১০,০০০ |
সর্বমোট খরচ | ১০৯০০০ |
মাগুর মাছ চাষে আয়ের খাতঃ
মাছের পাইকারি বিক্রয় মূল্য ৩০০ টাকা ধরে
মোট মাছে বিক্রি ১২৫০ কেজি ৩০০ টাকা হারে ৩৭৫,০০০ টাকা
মাগুর মাছ চাষে লাভঃ
৮ মাসে সর্বমোট লাভ ৩৭৫,০০০ টাকা – ১০৯,০০০ = ২৬৬,০০০ টাকা
এ ছাড়া আপনি মাছ চাষের কমন কিছু করনীয় বিষয় জানতে আমাদের স্বাদু পানিতে মাছ চাষ ব্যবস্থাপনা লেখাটি পড়লে উপকৃত হবেন।
ফারুক
June 20, 2022 at 1:38 amআরো বিস্তারিত তথ্য আশা করেছিলাম।
এগ্রোবিডি২৪
June 20, 2022 at 10:46 amধন্যবাদ। আপনার কোন ধরনের তথ্য দরকার আমাদের জানান। আপনার পাশে আমাদের টিম রয়েছে।
আব্দুল কুদ্দুস
February 20, 2022 at 7:08 pmমাগুর চাষ নিয়ে লেখাটা অনেক প্রয়োজনীয় এবং সুন্দর।
Dollar Bee
July 7, 2020 at 11:31 pmNice