পঞ্চগড় জেলার সদর উপজেলার আমলাহার এলাকার চেপটি গ্রামে চোখ ধাঁধানো দৃষ্টিনন্দন এই কৃষি খামারটি গড়ে ওঠেছে। যেখানে পকুরগুলোর পাড় ঘিরে সবুজের সমারোহ। চারপাশে নানা গাছপালা। পাখিদের আনাগোনা। বিশাল সুপারি বাগানের নিচে আদা, পেঁপে, আমড়া, কলাসহ নানা ফলের গাছ।
পুকুর পাড়ে চাষাবাদ করে বছরে কোটি টাকা আয়ের পাশাপাশি সৃষ্টি হয়েছে নতুন কর্মসংস্থান। উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন আশেপাশের গ্রামের মানুষ। পুকুর পাড়ে চাষাবাদ দেখতে বেড়াতে আসছেন পর্যটকরাও।
অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আবুল হোসেন শুরুতে একটি পুকুরে মাছ চাষ করে লাভের মুখ দেখেছিলেন। এরপর কয়েক বছরে তিনি ১২টি পুকুর খনন করে মাছ চাষের পরিধি বাড়ান। চাষাবাদ দেখাশোনার দায়িত্ব নেয় একমাত্র ছেলে হাবিবুর রহমান হাবিব।
এরপর বাবা ছেলে মিলে ১২টি পুকুরের চারপাশে শুরু করেন নানা ফল-ফসলের চাষাবাদ। বর্তমানে প্রায় ৩৫ একর জমিতে পুকুরের মাছ আর কৃষি একাকার হয়ে উঠেছে। পুকুর পাড়ে লাভজনক চাষাবাদ করে নতুন উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন তারা।
পুকুরের পাড়গুলোকে আধুনিকভাবে চাষ উপযোগী করে প্রায় ২০ প্রজাতির আবাদ করছেন। পাড়গুলোতে সুপারি, কলা, আদা, আমড়া, লটকন, রসুন, মাল্টা, লেবু ও সজনেসহ নানা ধরনের শাকসবজি উৎপাদন করা হয়।
একদিকে মাছ অন্যদিকে কৃষি থেকে ব্যাপক লাভ ঘরে তুলছেন তারা। পুকুর পাড়েই গড়ে তুলেছেন গরু ও মুরগির খামার। সেই খামার থেকেই উৎপাদিত সার ব্যবহার করছেন চাষাবাদে।
আবুল হোসেন জানান, ছোটবেলা থেকেই কৃষি কাজের প্রতি এক ধরনের মায়া ছিল। গাছের প্রতি ভালবাসা থেকেই এসব করেছি।
তার ছেলে হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, প্রতিবছর মাছ থেকে আয় হয় প্রায় ৩০ লাখ টাকা। এবছর আদা থেকে আয় হবে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা। ২৪ হাজার সুপারি গাছ লাগানো হয়েছে। প্রত্যেক গাছ থেকে ৩০০ টাকা করে হলেও বছরে ৭২ লাখ টাকা আয় হবে। কলা গাছ লাগানো হয়েছে ৮ হাজার। আমড়ায় এবার প্রথম ফলন এসেছে। পেঁপে আছে প্রায় ৯ হাজারের মতো। এছাড়া ডালিম, বেদানা, লেবু ও মাল্টা লাগিয়েছি। এসব থেকেও লাভ হবে। আর দুবছর পর সবকিছু থেকে আশা করছি প্রতিবছর ১ কোটি টাকা লাভ আসবে।
পুকুর পাড়গুলোতে চাষাবাদের এই উদ্যোগে নিজেরা লাভবান হওয়ার পাশাপাশি এলাকায় কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। খামারে প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক সারা বছর কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন।
পাশের গ্রাম বারো পাটিয়া এলাকার তমিজ উদ্দিন জানান, তিনি এই খামারে গত কয়েক বছর থেকে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। তিনি জানান, ১০ থেকে ১২ শ্রমিক এই খামারে কাজ করেন। বাগান হওয়ার ফলে বেকারত্ব দূর হয়েছে।
পুকুর পাড়ের এই চাষাবাদ দেখতে আসছেন পর্যটকরাও। বেড়াতে আসা পর্যটক সাইফুল ইসলাম জানান, আমি সত্যি অবাক হয়েছি। এত সুন্দর করে পুকুর পাড়ে চাষাবাদ হচ্ছে, না দেখলে বিশ্বাস হতো না। অনেক দৃষ্টিনন্দন!
পঞ্চগড় কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. মিজানুর রহমান জানান, পুকুর পাড়ে চাষাবাদ করে নতুন উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন তারা। তাদের জেলা কৃষি অফিস থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে।