বাংলাদেশে খাবারের অভাব হবেনা আর কখনই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে কৃষি গবেষণা অব্যাহত রাখতে সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, এদেশের মাটি আছে, মানুষ আছে। দেশের মানুষ যেন খাদ্যের অভাবে আর কখনও না ভোগে। দেশে যেন আর কখনও দুর্ভিক্ষ না হতে পারে। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন কেউ যেন চক্রান্ত করেও দুর্ভিক্ষ না করতে পারে সেদিকে সকলের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।
গত শনিবার বিশ্ব খাদ্য দিবস পালিত হয়।
ঐদিন সকালে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এ উপলক্ষে এক আলোচনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
মানণীয় প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা জানান, বাংলাদেশে আর কোনোদিন খাবারে অভাব থাকবে না।
তবে অব্যাহত রাখতে হবে গবেষণা।
এ বিষয়ে সকলেকে নজর দেবার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী খাদ্য অপচয় রোধের বিষয়টি নিশ্চিত করার তাগিদও দেন।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, খাদ্যের অপচয় কমাতে হবে।
তিনি আরও বলেন সারা বিশ্বেই একদিকে খাদ্যের অভাব হয় অন্যদিকে প্রচুর খাদ্য অপচয় হয়।
এই অপচয় যেন আমাদের দেশে না হয়।
তিনি বলেন যে খাদ্যগুলো অতিরিক্ত থাকে সেগুলো পুনর্ব্যবহার করার বিষয়টি সকলকে চিন্তা করার কথা বলেন।
তিনি বলেন খেতে বসেও যে খাদ্যটা উদ্বৃত্ত থাকবে সেটা অন্যকোনো চাহিদা পূরণে সম্ভব কি না সেটিও গবেষণায় রাখা দরকার।
খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় জোর দেয়া হবে
খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পর প্রধানমন্ত্রী এবার খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় জোর দেয়া কথা জানিয়েছেন।
তিনি জানান, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রধান কার্যালয়ে ও কেন্দ্রীয় ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হবে।
এজন্য পূর্বাচলে ৫ একর জমি দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
এছাড়া আটটি রেফারেন্স ল্যাবরেটরি আটটি বিভাগে স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
সরকারপ্রধান আরও বলেন, খাবারের সাথে সাথে পুষ্টি দরকার।
সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমিষজাতীয় খাবার যাতে উৎপাদন হয় সেগুলো বাংলাদেশে হচ্ছে।
সরকার আমিষের উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে বলে তিনি জানান।
দেশের চাহিদা পূরণ করার পর থাকা উদ্বৃত্ত যাতে প্রক্রিয়াজাত করা যায় সেবিষয়ে কাজ করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি। সেখানে যাতে এই আমিষ প্রক্রিয়াজাত করা যায় সেদিকে আমরা বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী জানান, দেশি-বিদেশি অনেক ফল, তরি-তরকারি সবকিছু এখন উৎপাদন হচ্ছে কৃষিতে গবেষণার ফলে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশেই অনেক বিদেশি ফল উৎপাদন হচ্ছে।
এটাকে দেশের কৃষিবিদদের অবদান উল্লেখ করে এ ক্ষেত্রে যতদূর সম্ভব সহযোগিতা দেয়ার কথা জানান।
কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে সার ও বিদ্যুতে ভর্তুকির বিষয়টি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা সারের দাম কমিয়ে একেবারে নূন্যতম পর্যায়ে নিয়ে এসেছি।
আগে চাহিদা পূরণ, পরে রপ্তানি- প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী জানান দেশের আভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের পর উদ্বৃত্ত খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে।
তিনি বলেন, “প্রথমে আমাদের দেশে আগে নিজের খাদ্য চাহিদা পূরণ করব।
তারপর যেটা অতিরিক্ত হবে সেটা প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করব, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।”
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিনা পয়সায় খাদ্য বিতরণ করি।
দুস্থ-দরিদ্র সেসব মানুষ, বিশেষ করে বয়স্ক-বিধবা নারীদের।
তাদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করা হয়।
পরবর্তীতে ১০ টাকায় চাল যেন কিনতে পারে সে ব্যবস্থা করে দেয়া হয় সাথে ওএমএস চালু রাখা হয়।
মানে খাদ্যটা যেন মানুষের কাছে পৌঁছায়। খাদ্যের অভাব যেন মানুষের না হয়।’
কৃষিখাতে সরকারের দেয়া ভর্তুকির নানা দিক তুলে ধরেন সরকার প্রধান। তিনি বলেন, কৃষিতে ভর্তুকি দেয়ার বিষয়ে অনেক বাঁধা ছিল।
অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা ভর্তুকি দেয়া যাবে না বলে বাধা দিত।
সরকারপ্রধান আরও বলেন, বেসরকারি খাতে ব্যাপকভাবে ব্যাংক করতে দেয়া হয়েছে।
সেখানে কৃষকেরা যেন মাত্র ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে সে ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
প্রায় ১ কোটি ২ লাখ ৭০ হাজার ১৪৩ জন কৃষক ১০ টাকার অ্যাকাউন্ট খুলে সুবিধা পাচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।