নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় একই জমিতে হলুদ, কালো ও সবুজ রঙের তরমুজ চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন কৃষক মো. মিস্টু। তিনি উপজেলার তমরদ্দি ইউনিয়নের জোড়খালী গ্রামের বাসিন্দা।
এর আগে কালো ও সবুজ রঙের তরমুজের চাষ হলেও হলুদ রঙের সুস্বাদু তরমুজের চাষ জেলায় এই প্রথম।
সরেজমিনে জোড়খালী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, মাচায় মাচায় দুলছে হলুদ, কালো ও সবুজ রঙের ছোট বড় অসংখ্য তরমুজ। তা দেখতে ভিড় করছেন দর্শনার্থী ও আশপাশের সাধারণ মানুষ। এদের কেউ কেউ পরিবারের জন্য কিনে নিচ্ছেন রসালো ফলটি। আবার কেউ শুধু ক্ষেতের পাশে দাঁড়িয়ে রঙিন ফলের সঙ্গে মুখ লাগিয়ে ছবি তুলে পোস্ট করছেন স্যোশাল মিডিয়ায়।
পেশায় পাওয়ার টিলার চালক কৃষক মো. মিস্টু জানান, নিজের পেশায় কাজ করতে যশোর গিয়ে তিন বছর সেখানে থেকে ব্ল্যাকবেরি তরমুজের চাষ দেখেছেন। এরপর যশোর থেকে চারা এনে এই তরমুজের চাষ শুরু করেন।
তিনি জানান, এ বছর নিজে বীজ এনে চারা তৈরি করে হলুদ তরমুজের চাষ করেন। তার ক্ষেতের তরমুজ দেখে পার্শ্ববর্তী অনেক কৃষক এই তরমুজ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
কৃষক মিস্টু বলেন, গত বছর ২০ শতাংশ জমিতে কালো তরমুজ করে ভালো ফলন পেয়েছেন। এ বছর ৫০ শতাংশ জমিতে কালো, হলুদ ও সবুজ রঙের তরমুজ চাষ করেছেন। ক্ষেতে থাকা ফলনের মধ্যে এখন পর্যন্ত অর্ধেকের চেয়ে কম তরমুজ লক্ষাধিক টাকায় বিক্রিও করেছেন। ক্ষেতে এখনও যে পরিমাণ তরমুজ আছে তাতে আরও দুই লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করা যাবে বলে ধারণা করছেন তিনি। আগামীতে এক একর জমিতে এই তরমুজ চাষ করার ইচ্ছা রয়েছে তার।
চাষাবাদ সম্পর্কে তিনি জানান, মালচিং পদ্ধতিতে এ তরমুজ চাষ হয়। তবে এই চাষে পর্যাপ্ত পানির প্রয়োজন হয়। পানির সমস্যায় তরমুজের ভালো ফলন ব্যাহত হয় বলেও জানান তিনি। এছাড়া মাচায়ও ঝুলাতে হয় এই হলুদ তরমুজকে।
তরমুজ চাষি মিস্টু জানান, এ বছর দুই কেজি ওজনের একটি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। ব্যাপারীরা এসে ক্ষেত থেকে পরিমাপ করে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ খুচরা কিনতে আসেন ক্ষেতে। কৃষি বিভাগের লোকজন এসে তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতাও করছেন বিভিন্নভাবে। ক্ষেতে থাকা বেশিরভাগ তরমুজের গায়ের রঙ হলুদ। ভেতরে টকটকে লাল। যেহেতু এটি বারোমাসি ফল, সেহেতু আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে বৃষ্টি হলে এই ৫০ শতাংশ জমিতে থাকা তরমুজ গাছে আবারও ফলন দেখা দেবে বলে জানান তিনি।
হাতিয়ার তমরদ্দি ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন বলেন, ‘কৃষক মিস্টুর ক্ষেতে থাকা তরমুজ তিন ধরনের। এরমধ্যে তৃপ্তি, ব্ল্যাকবেরি ও কনিয়া। এর মধ্যে তৃপ্তি বা হলুদ তরমুজের পুষ্টিগুণ বেশি, অধিক মিষ্টি এবং সুস্বাদুও।’
তিনি বলেন, ‘তমরদ্দি ইউনিয়নের এই এলাকার মাটি তরমুজ চাষের জন্য অধিক উপযোগী। মিস্টু একজন উদ্যোমী কৃষক। তার আগ্রহ থেকেই হাতিয়ায় প্রথমবারের মতো চাষ হচ্ছে এই হলুদ তরমুজ।’
এ ব্যাপারে উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা জসিম উদ্দন বলেন, কৃষক মিস্টুর হলুদ তরমুজের চাষের মধ্যদিয়ে এ অঞ্চলে নতুন গল্পের সূচনা হলো। আমরা তার সঙ্গে আছি। উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে তাকে সব ধরনের সহযোগিতাও করা হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।